ফিলিস্তিনের গাজায় চলমান সংঘাতের মধ্যেই পাকিস্তান ও ভারত সীমান্তে উত্তেজনা দেখা দিয়েছে। বৃহস্পতিবার রাতভর সীমান্ত এলাকায় ব্যাপক গোলাগুলির খবর পাওয়া গেছে। এতে ভারতীয় অংশে বিএসএফ সদস্যসহ কয়েকজনের আহত হয়েছেন।
ভারতীয় গণমাধ্যম জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার রাতে ফের একবার পাকিস্তানের বিরুদ্ধে যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করার অভিযোগ করেছে বিএসএফ। জম্মু ও কাশ্মীরের আর্নিয়া এবং সুচেতগড় সেক্টরে আন্তর্জাতিক সীমান্ত বরাবর পাঁচটি ভারতীয় সেনা ঘাঁটি লক্ষ্য করে, বিনা উস্কানিতে গুলি চালিয়েছে পাকিস্তানি রেঞ্জাররা। এমনটাই জানিয়েছে বিএসএফ। রাতভর গোলাগুলিতে বিএসএফ-এর দুই সদস্য এবং একজন বেসামরিক ব্যক্তি আহত হয়েছেন।
জম্মু-কাশ্মীর সীমান্তে পাকিস্তানের আধাসামরিক বাহিনী ও ভারতের সীমান্তরক্ষীবাহিনী বিএসএফের মধ্যে গোলাগুলির ঘটনা ঘটেছে। কুপওয়ারা জেলার মাছিল সীমান্তের কাছে পাকিস্তান রেঞ্জার্সের সদস্যরা বিনা উসকানিতে প্রথমে গুলি চালায় বিএসএফের দাবি। পাল্টা গুলি চালিয়ে পাঁচ বন্দুকধারীকে বিএসএফ হত্যা করেছে।
জম্মু-কাশ্মীরের কুপওয়ারা জেলার মাছিল সীমান্তের কাছে আধাসামরিক বাহিনী পাকিস্তান রেঞ্জারসের সৈন্যরা বিনা উসকানিতে ভারতীয় সীমান্তরক্ষীবাহিনী বিএসএফের ওপর গুলি চালিয়েছে। এমনটাই দাবি করেছে ভারত। বিএসএফের কর্মকর্তারা বলেছেন, বিএসএফ জওয়ানরাও পাকিস্তানি বাহিনীকে উপযুক্ত জবাব দিয়েছে। এ ছাড়া একই এলাকায় বিএসএফ পাঁচ বন্দুকধারীকেও হত্যা করেছে।
বিএসএফের এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা জানিয়েছেন, পাকিস্তান রেঞ্জারসের সদস্যরা কুপওয়ারা জেলার মাছিল সেক্টরের সীমান্তে বিএসএফ সদস্যদের ওপর গুলি চালায়। স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার রাত ৮টার দিকে পাকিস্তান রেঞ্জারসের সদস্যরা প্রথম গুলি শুরু করে। পরে বিএসএফ জওয়ানেরাও উপযুক্ত জবাব দিয়েছে।
ওই কর্মকর্তা জানিয়েছেন, বিএসএফের শীর্ষ কর্মকর্তারা এরই মধ্যে মাছিল সেক্টরে পৌঁছেছেন। তাঁরা বিষয়টি ভারতের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করবেন এবং এরপর পরবর্তী করণীয় নির্ধারণ করবেন। বিএসএফের ওই কর্মকর্তা আরও জানিয়েছেন, মাছিল সেক্টরে সন্ত্রাসবাদবিরোধী অভিযানে সশস্ত্র সংগঠন লস্কর-ই-তৈয়্যেবার ৫ সদস্য নিহত হয়েছে। নিহতরা ভারতে অবৈধভাবে অনুপ্রবেশের চেষ্টা করছিল বলে দাবি করেছেন ওই ভারতীয় কর্মকর্তা।
কাশ্মীর পুলিশের অতিরিক্ত মহাপরিচালক বিজয় কুমার বলেন, ‘অভিযানে পাঁচ সন্ত্রাসী নিহত হয়েছে।’ তিনি জানান, অভিযানের সময় একে সিরিজের পাঁচটি রাইফেল এবং বিপুল পরিমাণ বিস্ফোরক দ্রব্য উদ্ধার করা হয়েছে।
কাশ্মীর পুলিশের এক মুখপাত্র বলেন, ‘কুপওয়ারা পুলিশরে কাছে থাকা গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে, কুপওয়ারা জেলার মাছিল সেক্টরে নিয়ন্ত্রণ রেখা বরাবর পুলিশ ও সেনাবাহিনী একটি যৌথ অভিযান পরিচালনা করে। অভিযানের মাধ্যমে পাকিস্তানি সন্ত্রাসীদের ভারতে অনুপ্রবেশের একটি প্রচেষ্টা সফলভাবে ব্যর্থ হয়েছে। দ্রুত ও সমন্বিত এই অভিযানে, পাঁচ সন্ত্রাসীকে নিরস্ত্রীকরণ করা হয়েছে।’
আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর কাছ থেকে এ বিষয়ে এখনও কোনও আনুষ্ঠানিক বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে স্থানীয় বাসিন্দাদের সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করা বিভিন্ন প্রতিবেদনে জাফরওয়াল সেক্টরে ভারতের সাথে সীমান্তের বেশ কয়েকটি পয়েন্টে ভারী গোলাগুলি এবং কামানের গোলাবর্ষণের শব্দ শোনা গেছে।
পাকিস্তানের সামরিক বাহিনীর ইন্টার সার্ভিস পাবলিক রিলেশনস (আইএসপিআর) সূত্রের মতে, বৃহস্পতিবার রাতে ভারতীয় একটি ড্রোন পাকিস্তানি ভূখণ্ডে অনুপ্রবেশের চেষ্টা করার পর গোলাগুলি শুরু হয়। যদিও পাকিস্তানি বাহিনী গুলি করে ওই ড্রোনটি ভূপাতিত করে। কিন্তু ভারতীয় বাহিনী-দৃশ্যত অনুপ্রবেশের ওই ব্যর্থ প্রচেষ্টা ধামাচাপা দেওয়ার জন্য-ওয়ার্কিং বাউন্ডারি বরাবর পাকিস্তানি পোস্টে নির্বিচারে গুলি চালায়। পাকিস্তানি বাহিনী ভারতীয় আগ্রাসনের উপযুক্ত জবাব দিয়েছে।
ডন জানিয়েছে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এক্সে বেশ কিছু পাকিস্তানি ব্যবহারকারী রাতের শেষের দিকে সীমান্তে ভারী বন্দুক এবং কামানের গোলাগুলির শব্দ সম্বলিত ভিডিও পোস্ট করেছেন। কিন্তু এসব ভিডিও স্বাধীনভাবে যাচাই করা যায়নি।
স্থানীয়রা বলছেন, বৃহস্পতিবার রাত ৮টার দিকে গোলাগুলি শুরু হয়। গোলাগুলির সময় উভয় পক্ষ মর্টার বন্দুক ব্যবহার করায় বিকট বিস্ফোরণের ঘটনাও ঘটে। রাতভর গোলাগুলির সময় কয়েকটি আবাসিক বাড়িতেও গোলা আঘাত হানে। গোলাগুলিতে অন্তত একটি আবাসিক বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। গোলাগুলির পর অনেক গ্রামবাসী গ্রাম ছেড়ে নিরাপদ স্থানে আশ্রয় নিয়েছেন।
আপনার মতামত জানানঃ