টাঙ্গাইলের দেলদুয়ারে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সিরাজুল ইসলাম মল্লিকের একটি পোস্ট সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে। সম্প্রতি তার নিজ আইডিতে ‘বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের বিদায় ত্বরান্বিত করে নির্বাচনকালীন সরকার গঠন করে অতি দ্রুত অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন সময়ের দাবি’ এমন পোস্ট দেন।
পোস্টটি দ্রুত সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে এবং রাজনৈতিক অঙ্গনে আলোচনা-সমালোচনার ঝড় ওঠে। বর্তমানে এই আওয়ামী লীগ নেতাকে স্থানীয় এমপি আহসানুল ইসলাম টিটুর সঙ্গে বিভিন্ন দলীয় সভা-সমাবেশে সরব অংশগ্রহণ দেখা যাচ্ছে।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে সিরাজুল ইসলাম মল্লিক বলেন, পোস্টটি আমি করেছি, পরবর্তীতে এর ব্যাখ্যাও আমি দিয়েছি। কিন্তু অনেকেই বুঝে না বুঝে পোস্টটির ভুল ব্যাখ্যা করে বিভিন্ন ধরনের মন্তব্য করছেন।
প্রতিক্রিয়ায় উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খন্দকার তারিকুল ইসলাম ছেন্টু বলেন, যেহেতু সিরাজুল ইসলাম মল্লিক উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক, সেহেতু তার নিকট থেকে এমন মন্তব্য দল প্রত্যাশা করে না। এ সময়ে এ ধরনের মন্তব্য আওয়ামী লীগের জন্য হিতকর নয়। আমি এ বক্তব্যের প্রতিবাদ জানাচ্ছি।
উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এম শিবলী সাদিক বলেন, সিরাজুল ইসলাম মল্লিক সব সময় আওয়ামী লীগ থেকে সুযোগ-সুবিধা নিয়েছেন। তিনি সকল নির্বাচনেই নৌকার বিরোধিতা করেছেন।
এমনকি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নেতা হওয়া সত্ত্বেও বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশ নিয়েছিলেন। ওই সময় উপজেলা আওয়ামী লীগ থেকে তাকে বহিষ্কার করা হয়েছিল। এবার তার স্থায়ী বহিষ্কার দাবি করছি। আওয়ামী লীগের কোনো পদে যেন না থাকতে পারে সে ব্যবস্থা গ্রহণপূর্বক দৃষ্টান্তমূলক শাস্তিও দাবি করছি।
মূলত অসন্তোষ দানা বাঁধছে দলটির মধ্যেই। আওয়ামী লীগ ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জয়ী হয়ে টানা তৃতীয় মেয়াদে সরকার গঠন করে। টানা তিন মেয়াদের এই সরকারের পৌনে পাঁচ বছর ইতোমধ্যে অতিবাহিত হয়েছে। এখন চলছে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি। কিন্তু আওয়ামী লীগ সর্বশেষ অনুষ্ঠিত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে তাদের নির্বাচনি ইশতেহারে দেশবাসীর কাছে যে ওয়াদা করেছিল, তার কতটা পূরণ হয়েছে-দ্বাদশ নির্বাচনের আগে সেই প্রশ্ন উঠেছে।
এদিকে আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ নতুন নির্বাচনি ইশতেহার প্রণয়নের কাজ শুরু করেছে। বৃহস্পতিবার আওয়ামী লীগের নির্বাচনি ইশতেহার প্রণয়ন উপকমিটির প্রথম সভায় দলটির সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহণ ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের জানান, সময়ের সঙ্গে বাস্তবতার আলোকে আগামী নির্বাচনি ইশতেহার প্রস্তুত করা হবে।
তিনি কমিটির সদস্যদের বলেন, আমাদের অ্যাকশনে যেতে হবে। এমন ইশতেহার করতে হবে, যাতে নিষেধাজ্ঞা, পালটা নিষেধাজ্ঞার বিষয় ভাবতে হবে। জলবায়ুর বিরূপ প্রভাব ভাবতে হবে। উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণ, সর্বোপরি ২০৪০ সাল আমাদের মাথায় রাখতে হবে। ডিজিটাল বাংলাদেশ হয়ে গেছে, এখন স্মার্ট বাংলাদেশ করতে হবে।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আবদুর রহমান যুগান্তরকে বলেন, আওয়ামী লীগ নির্বাচনি অঙ্গীকার বাস্তবায়নের পথেই আছে। ইতোমধ্যে অধিকাংশ অঙ্গীকার বাস্তবায়ন করেছে। আর যেগুলো এখনো বাস্তবায়ন সম্ভব হয়নি, তা করা হবে।
সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, এসব অঙ্গীকারের দিকে তারা ফিরেও তাকায় না। ভোট নেওয়ার জন্য নির্বাচনি ইশতেহার ঘোষণা এবং অঙ্গীকারের কথা বলতে হয় বলেই তারা বলেন।
উপরন্তু র্যাব ও প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তাদের ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞা এবং আন্তর্জাতিক সংগঠনগুলোর উদ্বেগ প্রকাশের কারণে দেশের ভাবমূর্তি চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে মনে করেন বিএনপিসহ সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনরত বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর নেতারা। জানা যায়, মানবাধিকার ইস্যুতে সরকারের উচ্চপদস্থ একাধিক কর্মকর্তার ভিসা প্রত্যাখ্যান করেছে আমেরিকা।
এদিকে, বার্লিনভিত্তিক আন্তর্জাতিক সংস্থা ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের (টিআই) দুর্নীতির ধারণাসূচক ২০২২ শীর্ষক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আগের বছর বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ১৩তম। আগেরবারের চেয়ে বাংলাদেশের এক ধাপ অবনমন হয়েছে। ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বলেছে, ১০০ স্কোরের মধ্যে বাংলাদেশ পেয়েছে ২৫, যা গতবারের চেয়ে ১ পয়েন্ট কম।
দুর্নীতির বিরুদ্ধে কাজ করে আসা বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, ব্যাংক সেক্টরের বর্তমান চিত্র টিআই-এর রিপোর্টের সত্যতা প্রমাণ করে। আধুনিক তথ্যপ্রযুক্তি চালুর মাধ্যমে দুর্নীতির পরিধি ক্রমান্বয়ে শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনার ঘোষণাও দেওয়া হয়েছিল আওয়ামী লীগের নির্বাচনি ইশতেহারে। কিন্তু সরকারের ঘোষিত এই নীতির প্রতিফলন এ সরকারের তিন মেয়াদেই দেখা যায়নি।
আপনার মতামত জানানঃ