জাহাঙ্গীর আলম ভূঁইয়া, সুনামগঞ্জ : সুনামগঞ্জের ধর্মপাশা উপজেলা পাইকুরহাটি ইউনিয়নের সুনই জলমহালের ইজারা নিয়ে স্থানীয় দু’টি মৎস্যজীবী সমিতির মধ্যে দীর্ঘদিনের দ্বন্দ্বকে কেন্দ্র করে দু’পক্ষের সংঘর্ষে শ্যামাচরন বর্মন (৫৫) নামে এক জেলে নিহত এবং কমপক্ষে ৩০জন আহত হয়েছেন। নিহত শ্যামাচরণ বর্মণ ধর্মপাশার পাইকুরাটি ইউনিয়নের সুনই গ্রামের প্রয়াত গঙ্গাধর বর্মণের ছেলে ও সুনই মৎস্যজীবী সমবায় সমিতির সদস্য।
সংঘর্ষের সময় জলমহালে থাকা স্থাপনা (খলা) জেলেদের ঘরে অগ্নিসংযোগ, মাছ ধরার কয়েক লাখ টাকার জাল, নগদ টাকা, আসবাবপত্র লোপাট করেছে দুই পক্ষের লোকজন। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে ১৯জনকে আটক করেছে। বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ৭টায় উপজেলা পাইকুরহাটি ইউনিয়নের সুনই জলমহালে এ ঘটনা ঘটে।
এই ঘটনায় এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করায় জলমহাল পাড়ের আশপাশের গ্রামে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। বর্তমানে পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে, এখন পর্যন্ত কোন পক্ষই কোন অভিযোগ দায়ের করেনি বলে জানান ধর্মপাশা থানার ওসি।
স্থানীয় সুত্রে জানা যায়, ধর্মপাশা উপজেলার পাইকুরাটি ইউনিয়নের সুনই জলমহালকে কেন্দ্র করে দুই মৎস্যজীবি গ্রুপের লোকজনের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে জলমহল দখল করাকে কেন্দ্র করে বিরোধ চলে আসছিল। সম্প্রতি তারা এই জলমহলে মৎস্য আহরনের জন্য হাওরের খলায় ঘর নির্মাণ করে অবস্থান নেয়। এরপর থেকেই উত্তেজনা আরও বেড়ে যায়। এরই জের ধরে বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ৭টায় দিকে দু’পক্ষের লোকজন দেশীয় অস্ত্র নিয়ে জলমহাল এলাকায় সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। এসময় ধারালো অস্ত্রের আঘাতে শ্যামাচরণ বর্মণ নামের এক জেলে মারা যায় ও উভয় পক্ষের ৩০জন আহত হন। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে নিহতের লাশ উদ্ধার করে মর্গে পাঠিয়েছে।
আরও জানা যায়, দুই মৎস্যজীবী সমিতির নেতা চন্দন বর্মণ এবং সুবীর বর্মণ মহালের খাজনা জমা দিয়ে রশিদ দেখিয়ে জলমহালের দখল নিতে চাইলে জেলা প্রশাসন কাউকেই দখল বুঝিয়ে দেয়নি। কিন্তু দুই পক্ষই মাছ ধরার জন্য স্থাপনা (খলা) নির্মাণ করে। চন্দন বর্মণের পক্ষ উচ্চ আদালত থেকে স্থগিতাদেশ পায়। জলমহালে অন্য পক্ষের লোকজনও দখলে ছিল। এই অবস্থায় স্থাপনায় দু’পক্ষের হামলায় চন্দন বর্মণের বাবা শ্যামাচরণ বর্মণ খুন হয়েছেন। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে ১৯জনকে আটক করেছে।
এদিকে আহতদেরকে ধর্মপাশা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সেসহ বিভিন্ন স্থানে চিকিৎসা নিয়েছে বলে জানা যায়। এ ব্যাপারে ধর্মপাশা উপজেলা স্বাস্থ্যকমপ্লেক্সের মেডিকেল অফিসার সোহেল রানা বলেন, সাগর নামের একজন ব্যাক্তি হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এছাড়াও জরুরী বিভাগে অনেকেইে চিকিৎসা নিয়েছেন।
পাইকরহাটি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ফেরদৌসুর রহমান বলেন, এখানে সুবল বর্মন ও চন্দন বর্মন পৃথক দুটি সমিতির বিরোধ দীর্ঘদিন ধরে চলে আসছে। এ বিরোধের জের ধরেই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটতে পারে। ঘটনার সময় ধর্মপাশা উপজেলা চেয়ারম্যান মোজাম্মেল হোসেন রুকন ডিসি অফিসে মতবিনিময় সভায় ছিলেন।
উপজেলা চেয়ারম্যান মোজাম্মেল হোসেন রুকন বলেন, আমি জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে মিটিং এ ছিলাম। পরে সুনামগঞ্জ পৌর মেয়র নির্বাচনে নৌকা সমর্থিত প্রার্থীর পক্ষে গণসংযোগ করি এবং রাতে বাড়ি ফিরি। ঘটনার সময় আমি এলাকায়ই ছিলাম না। আমার জনপ্রিয়তায় ঈর্ষান্বিত হয়ে একটি মহল অপপ্রচার করছে। আমি নিজেও শ্যামা চরন বর্মন হত্যাকান্ডের জড়িতদের দৃষ্ঠান্তমুলক শাস্তির দাবী জানাই।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার হায়াত-উন-নবী জানান, বিরোধের জের ধরে বৃহস্পতিবার রাতে দুই পক্ষের লোকজন দেশি অস্ত্র নিয়ে সংঘর্ষে ঘটনাস্থলেই শ্যামচরণ বর্মণের মৃত্যু হয়। খবর পেয়ে ধর্মপাশা থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
এ ব্যাপারে পুলিশ সুপার মোঃ মিজানুর রহমান নিহতের বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, খবর পেয়ে ধর্মপাশা থানা পুলিশ লাশ উদ্ধার করেছে। জলমহাল এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। বর্তমানে পরিস্থিতি শান্ত আছে।
এসডব্লিউ/জেএভি/নসদ/২০৩০
আপনার মতামত জানানঃ