গতবছরের ১জুলাই দেশের অর্থনীতির মূলস্রোতে অর্থ প্রবাহ বাড়ানোর লক্ষ্যে সরকার কালো টাকা সাদা করার সুযোগ প্রদান করে। এতে ঝাঁপিয়ে পড়ে কালো টাকাধারীরা। বিগত ছয় মাসে ৭ হাজার ৬৫০ জন এই সুযোগ গ্রহণ করে। এর ফলে দেশের ফরমাল ইকনোমিতে ১০ হাজার ২২০ কোটি টাকা প্রবেশ করে। এতে দেশের অর্থনীতিতে প্রাণ ফিরে এসেছে বলে মনে করেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। একইসাথে যে উদ্দেশ্যে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ দেওয়া হয়েছিলো তা সফল হয়েছে বলেও জানান তিনি। সিঙ্গাপুরে অবস্থানরত অর্থমন্ত্রীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠক শেষে গতকাল বুধবার(০৬জানু) অনলাইনে ব্রিফিংকালে সাংবাদিকদের এ কথা বলেন তিনি।
তিনি বলেন, নীতিগত কারণে টাকা কালো হয়, আবার সেই নীতির পরিবর্তন করে টাকা সাদা করার সুযোগ দেয়া হয়েছে। এতে করে পুঁজিবাজার-আবাসন খাত আবার চাঙ্গা হচ্ছে।
তিনি আরো বলেন, ‘আমি মনে করি আমাদের উদ্দেশ্য সফল হয়েছে। পুরোপুরি না হলেও বেশিরভাগই আমরা সফল হয়েছি। আমরা চাই কালো টাকা সাদা হোক। যখন কালো হয়ে গেছে তখন সাদা হবে। আর কালো হওয়ার কারণ নিয়ে অনেকবার ব্যাখ্যা দিয়েছি।’
করোনাকালীন কালো টাকা সাদার বিষয়ে জানতে চাইলে অর্থমন্ত্রী বলেন, আমরা সাদা করতে চাই বলে সাদা হলো।
তিনি আরো বলেন, আবাসন খাতে স্ট্যাম্প ফি ও ডিউটি বাড়তি থাকার কারণে কোনো রেজিস্ট্রেশন হয় না। ফলে সরকার কোনো রাজস্ব পাচ্ছে না। বাড়ি বিক্রি হচ্ছে অথচ দেখানো হচ্ছে না। বিক্রি যেখানে ১০টা সেটা দেখাচ্ছে এক টাকা। ১০ টাকার ওপরে গেলে স্ট্যাম্প ডিউটি দিতে হয় সেজন্য স্ট্যাম্প ডিউটি কমিয়ে দিয়েছি। এরকম যেসব জায়গায় হাত দেয়া দরকার সেখানে দিয়েছি। সেগুলো করার কারণেই এখন কালো টাকা সাদা হচ্ছে। যেমন আমাদের পুঁজিবাজার, এটা সব দেশেই করে।
মন্ত্রী বলেন, গত এক বছরে বা ছয় মাসে আমাদের রেমিট্যান্স অর্জন হয়েছে ৪০ হাজার কোটি টাকা। পুরো বছরে আমাদের ৭০ থেকে ৮০ হাজার কোটি টাকা বেশি আসবে। এই টাকাগুলো কোথায় যাবে, পুঁজিবাজারে যাবে। অফিশিয়ালি এ টাকাগুলো আসায় আমাদের অর্থনীতিতে চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে। এই টাকাগুলোর মাল্টিটেরিফাই অনেক বেশি। এতে একজনের একটা ট্রানজেকশন ১০ হাত ঘুরে। এতে অর্থনীতি অনেক বেগবান হচ্ছে।
অর্থমন্ত্রী বলেন, টাকা আমাদের নীতিগত কারণে কালো হয়। অনেকে ট্যাক্স দেয় আবার অনেকে দেয় না। আবার ট্যাক্স রেট অনেক বেশি ছিল। আস্তে আস্তে এগুলো কমিয়ে আনা না গেলে হবে না। আমাদের সুদের হার অনেক বেশি ছিল। এত বেশি সুদহারে কোনো দেশে শিল্পায়ন হয় না। পাশাপাশি কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয় না। আমরা সেখানেও সফল, মোটামুটি আমরা যেটি করে দিয়েছি সেটা সবাই গ্রহণ করেছে। এখন যে ৬ শতাংশে ঋণ পাচ্ছে, যা অন্যান্য দেশের তুলনায় অনেক বেশি। বিদেশে টাকা রাখলে উল্টো টাকা দিতে হবে। সেখানে লাভ পায় না, যদিও পায় সেটা এক থেকে দেড় শতাংশ। সেখানে আমাদের দেশে ৬ শতাংশ পাচ্ছে। এটা হলো আমাদের ইতিবাচক দিক। এটা আমাদের দেখতে হবে।
তিনি বলেন, আমাদের অনেকের টিআইএন আছে কিন্তু আমরা ট্যাক্স পাচ্ছি না। টিআইএন দিয়ে কী হবে যদি ট্যাক্স না পাই। সেই কাজটি করার জন্য আমরা ফুল অটোমেশনে যাচ্ছি। যতদিন অটোমেশন শেষ না হয় ততদিন এ সমস্যা থাকবে। সেজন্য সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে রাজস্ব খাতে অটোমেশনের।
পুঁজিবাজার প্রসঙ্গে অর্থমন্ত্রী বলেন, পুঁজিবাজারে বিদেশি বিনিয়োগ থাকলে তারা যেকোনো মুহূর্তে পুঁজি তুলে নিতে পারত। যেটা আমরা ১৯৯৭ সালে দেখেছি। সাউথ এশিয়ার সঙ্গে যেটা হলো। সে সময় বিদেশিদের টাকা তারা তুলে নিয়ে যাওয়ায় অর্থনীতি বসে গেছে। আমাদের এ ধরনের চিন্তার কোনো কারণ নেই। কারণ, আমাদের ফিসক্যাল পলিসি ও মনিটরি পলিসি, বাজেট, পঞ্চবার্ষিক প্ল্যান সঠিক আছে। সেজন্য আমরা ভালো আছি।
এদিকে কালো টাকা সাদা করার প্রক্রিয়াকে অবৈধ আর অনৈতিক দাবি করেছেন অর্থনীতির সাথে সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা। তারা মনে করেন, সরকারের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ প্রশ্রয়ে এক শ্রেণি এসব কালো টাকা হস্তগত করে এখন সেসব কালো টাকা সাদা করার সুযোগও সরকারই করে দিলো। এর আগেও কয়েকবার তৎকালীন সরকারেরা এসব সুযোগ দিয়েছিল। এই সরকারও সেই সুযোগ দিলো। এভাবে সুযোগ দেওয়া হয় বলেই এক শ্রেণি কালো টাকার প্রতি আগ্রহ বেড়েছে। যারা এখন এসবকে আর অবৈধ মনে করে না। অনৈতিকতাকে প্রশ্রয় দেওয়া হচ্ছে দাবি করে তারা মনে করেন, এতে সৎ করদাতাদের কর দেওয়ায় নিরুৎসাহিত করা হলো। একইসাথে অবৈধ শ্রেণিটাকে কালো টাকা হস্তগত করার উৎসাহও দেওয়া হলো। এই ধরনের সুযোগ বন্ধ করার দাবি জানান তারা।
এসডাব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৫৩০
আপনার মতামত জানানঃ