ইদানীং ‘লাভ জিহাদ’ নামে বিচিত্র এবং বিতর্কিত এক শব্দ ভারতের রাজনৈতিক হাওয়ায় ভাসছে৷ মুসলিম যুবক হিন্দু মেয়েকে প্রেমের টোপ দেখিয়ে বিয়ে করার পর তাকে ধর্মান্তরিত করছে, এমনটাই অভিযোগ কট্টর হিন্দুত্ববাদী সংগঠনগুলির৷
কট্টর হিন্দু দলগুলো বেশ অনেকদিন ধরে এই লাভ-জিহাদ তত্ত্ব ছড়িয়ে বলছে মুসলিম পুরুষরা হিন্দু নারীদের ইসলামে ধর্মান্তরিত করার উদ্দেশ্যে প্রেমের ছল দেখিয়ে তাদের বিয়ে করে। এই তত্ত্ব এখন সত্যিকার অর্থেই ভারতের ভিন্ন ধর্মের নারী পুরুষের মধ্যে প্রেম চরম হুমকিতে ফেলেছে।
এরই ধারাবাহিকতায় ভারতে মুসলিম ছেলের সাথে হিন্দু মেয়ে পালিয়ে যাওয়ায় ছেলের মা-বাবাকে পিটিয়ে হত্যা করেছে প্রতিবেশী হিন্দুরা। দেশটির ইউপি প্রদেশের সীতাপুর জেলায় এ ঘটনা ঘটে।
সিয়াসত ডেইলির এক প্রতিবেদনে বলা হয়, সীতাপুর জেলার মুসলিম দম্পতি আব্বাস ও কামরুন নিসার ছেলের সাথে কয়েক বছর আগে পাশের এক হিন্দু মেয়ে পালিয়ে যায়।
এ ঘটনায় মেয়ের স্বজনরা মামলা দিয়ে ওই ছেলেকে জেলে পাঠায়। কয়েক দিন আগে তার মুক্তি হয়। এরপর স্থানীয় হিন্দুরা পরিকল্পনা করে আব্বাস ও কামরুন নিসার ওপর রড ও লাঠিসোঠা দিয়ে হামলা চালায়। এতে তারা উভয়েই নিহত হন।
স্থানীয় হিন্দুদের দাবি, নিহত দম্পতির ছেলে ও শওকত রামপালের মেয়ে রুবির মধ্যে প্রেম ছিল। ২০২০ সালে রুবিকে অপহরণ করে শওকত। ওই সময় রুবি নাবালক হওয়ায় মামলার পর পুলিশ শওকতকে কারাগারে পাঠায়। তিনি আবার জুন মাসে রুবিকে অপহরণ করে বিয়ে করেন।
পুলিশের সুপারিনটেনডেন্ট চক্রেস মিশ্রা আরও জানিয়েছেন, ‘গ্রামবাসীর তথ্য অনুযায়ী, মৃত দম্পতির ছেলে শওকত এবং প্রতিবেশি হিন্দু ব্যক্তি রামপালের মেয়ে রুবির মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক ছিল। শওকত ২০২০ সালে রুবিকে অপহরণ করে। ওই সময় রুবি প্রাপ্তবয়স্ক ছিল না। এ ঘটনায় মামলা দায়েরের পর শওকতকে জেলে পাঠানো হয়েছিল। শওকত (ছাড়া পেয়ে) গত জুনে আবারও রুবিকে অপহরণ ও বিয়ে করে।’
চক্রেশ মিশ্র আরও জানিয়েছেন, এ ঘটনায় প্রধান তিন আসামিকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বাকি দু’জনের খোঁজ চলছে।
যদিও প্রতি বছর কম-বেশি এক হাজার দম্পতি – যারা ভিন্ন ধর্মের কাউকে জীবনসঙ্গী হিসাবে বেছে নিয়েছেন- সাহায্যের জন্য দিল্লিতে একটি বেসরকারি সংস্থার দ্বারস্থ হন।
প্রধানত হিন্দু-মুসলিম এসব দম্পতি যখন বিয়ে করতে গিয়ে পরিবার ও সমাজের কাছ থেকে বাধার সম্মুখীন হন তখন এরা ধানাক নামে এই এনজিও‘র কাছে সাহায্য চাইতে আসেন।
এসব দম্পতির বয়স সাধারণত ২০ থেকে ৩০ বছর। তারা চান ধানাক যেন তাদের বাবা-মার সাথে কথা বলে তাদের রাজি করায়। এতে ব্যর্থ হলে, আইনি সহযোগিতা চায় তারা।
ধানাকের কাছে যারা আসেন, তাদের ৫২ শতাংশ হিন্দু নারী যারা মুসলিম পুরুষকে বিয়ে করতে চান। আর ৪২ শতাংশ মুসলিম নারী যারা হিন্দু প্রেমিককে বিয়ে করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
এসডব্লিউএসএস/১৮৫০
আপনার মতামত জানানঃ