করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে গোটা বিশ্ব এখনো নাকানি-চুবানি খাচ্ছে। এরইমধ্যে নতুন আরেক মহামারি ভাইরাসের আগমন জানালেন বিজ্ঞানীরা। নতুন এই ভাইরাস করোনার চেয়ে তীব্র শক্তি নিয়ে ছড়িয়ে পড়তে পারে গোটা বিশ্ব। এই ভাইরাস যদি কোনোভাবে মানুষের শরীরে সংক্রমিত হয়, তাহলে বিশ্ব তোলপাড় করে দিতে পারে। এমনই আশঙ্কার কথা জানিয়েছেন চার দশক আগে ইবোলা ভাইরাসের আবিষ্কারকর্তা বিজ্ঞানী প্রফেসর জ্য জ্যাক মুয়েবে তামফুন।
প্রফেসর জ্য জ্যাক মুয়েবে তামফুন বর্তমানে আমেরিকার ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সহায়তায় কিনশাসা শহরে ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব বায়োমেডিক্যাল রিসার্চ সংস্থার পরিচালক।
এক আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে তামফুন জানিয়েছেন, ‘আফ্রিকার রেইন ফরেস্টে একটি ভাইরাস তৈরি হচ্ছে। ওই ভাইরাস ছড়াতে পারে পশু-পাখি থেকে মানুষের মধ্যে এবং তা মহামারির আকার নিতে পারে।’ এই ভাইরাসকে বলা হচ্ছে ‘ডিজিজ এক্স’।
তিনি আরো জানিয়েছেন, ইয়ালো ফিভার, ইনফ্লুয়েঞ্জার মতো রোগও পতঙ্গ থেকে মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে পড়েছিল। ফলে সাবধানে থাকতে হবে।
মারাত্মক এই ডিজিজ এক্স কি করোনাভাইরাসকে থেকেও বেশি প্রাণঘাতী হতে পারে?—এমন প্রশ্নের জবাবে তামফুন বলেন, ‘একদমই তাই। আমি সে রকমটাই মনে করি।’
তিনি জানান, “আমরা এমন এক পৃথিবীতে এখন বাস করছি, যেখানে নিত্যনতুন জীবাণু দেখা দিতে পারে। আর সেটাই মানব সভ্যতার পক্ষে আতঙ্কের। ”
আরো জানান, “যদি আফ্রিকা থেকে কোনও জীবাণু আত্মপ্রকাশ করে, তা হলে তা গোটা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়তে সময় নেবে। নতুন ভাইরাস যদি তাড়াতাড়ি ধরা পড়ে, তা হলে ইউরোপ ও সমগ্র বিশ্বে তার মোকাবেলায় নতুন কৌশল উদ্ভাবন করার সম্ভাবনা থাকবে। ”
জানা যায়, সম্প্রতি কঙ্গো প্রজাতন্ত্রের প্রান্তিক শহর ইনগেন্ডেতে এক নারীর শরীরে দেখা দিয়েছে অজানা জ্বর ও রক্তক্ষরণের উপসর্গ। অসুস্থ হওয়ার পর একাধিক রোগের আশঙ্কায় ওই নারীকে ইবোলাসহ নানা ভাইরাসের খোঁজে অনেক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার পরও কোনও নির্দিষ্ট জীবাণুকে চিহ্নিত করা যায়নি। এই কারণে, অজানা এই উপসর্গকে ‘ডিজিজ এক্স’ বা এক্স অসুখ নামে চিহ্নিত করেছেন চিকিৎসকরা।
বিশেষজ্ঞদের দাবি, অজ্ঞাতপরিচয় এই রোগ কোভিড-১৯ এর মতোই দ্রুত ছড়িয়ে যেতে পারে। কিন্তু তার মারণ ক্ষমতা প্রায় ইবোলার মতো অর্থাৎ ৫০ থেকে ৯০ শতাংশ। যদিও ইবোলা সদৃশ উপসর্গে ভোগা ওই নারী আপাতত সুস্থ হয়ে উঠেছেন।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জানিয়েছে, অপ্রত্যাশিত ডিজিজ এক্স এই মুহূর্তে ধারণাভিত্তিক হলেও ব্যাপক সংক্রমণ ঘটলে বিশ্বজুড়ে ভয়াবহ অতিমারী দেখা দিতে পারে।
জানা যায়, ডিজিজ এক্স বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) প্রদত্ত স্থানদখলকারী নাম। ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ডব্লিউএইচও বৈশ্বিক মহামারী ঘটাতে সক্ষম এমন অজানা প্যাথোজেন কর্তৃক সৃষ্ট রোগকে প্রতিনিধিত্ব করতে গুরুত্বপূর্ণ ব্যাধির নীল নকশা নামক সংক্ষিপ্ত তালিকায় এই নামটি ব্যবহার করে। ডব্লিউএইচও অজানা প্যাথোজেন মোকাবেলার কথা পরিকল্পনা করে রাখার উদ্দেশ্যে এটি করে। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন যে, ডিজিজ এক্সের ধারণা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাকে সহায়তা করবে যেন তাদের গবেষণার প্রকল্পগুলো নির্দিষ্ট ভাইরাসের প্রকরণে (যেমন জিকা ভাইরাস) সীমাবদ্ধ না থেকে সবরকম ভাইরাসের (যেমন ফ্ল্যাভিভাইরাস) উপর পরিচালিত হয়। এর পরে অজানা প্রকরণের ভাইরাসের মাধ্যমে সৃষ্ট রোগ মোকাবেলায় ডব্লিউএইচও কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারবে। ২০২০ সালে ডব্লিউএইচও’র অনেক বিশেষজ্ঞ মনে করেছেন, করোনাভাইরাস রোগ (সার্স-কোভি-২ প্রকরণ থেকে সৃষ্ট) প্রথম কোনো রোগ যা ডিজিজ এক্স-এর মত বৈশিষ্ট্যবাহী হতে পেরেছে।
করোনাভাইরাসের বৈশ্বিক মহামারীর শুরু থেকে অনেক বিশেষজ্ঞরাই মনে করেন কোভিড-১৯ ডিজিজ এক্সের মানদণ্ড পূরণ করতে পেরেছে। ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের শুরুর দিকে চীনা ভাইরাস বিশেষজ্ঞ উহান ইনস্টিটিউট অব ভাইরোলজির শি জেংলি বলেন, প্রথম ডিজিজ এক্স করোনাভাইরাস থেকে সৃষ্টি হয়েছে। পরবর্তীতে ঐ মাসে রটারডামে অবস্থিত ইরাসমাস ইউনিভার্সিটি মেডিকেল সেন্টারের ভাইরোসায়েন্স বিভাগের প্রধান এবং আরঅ্যান্ডডি ব্লুপ্রিন্ট গ্রুপের সদস্য মারিয়ন কোপম্যানস সেল সাময়িকীতে লেখেন, “এই প্রাদুর্ভাব দ্রুতগতিতে প্রথম বৈশ্বিক মহামারী হয়ে উঠছে যা ডিজিজ এক্স শ্রেণীতে পড়ে।” একই সময়ে আরঅ্যান্ডডি ব্লুপ্রিন্ট গ্রুপের অপর এক সদস্য পিটার ডাসজাক নিউ ইয়র্ক টাইমসে বলেন “এক কথায়, কোভিড-১৯ হল ডিজিজ এক্স।”
এসডাব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১২৫৫
আপনার মতামত জানানঃ