বাংলাদেশ ছাত্রলীগের ৭৩তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছাত্রলীগের প্রশংসা করেন। আজ সোমবার (০৪ জানুয়ারি) ভিডিও কনফারেন্সিং এর মাধ্যমে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় সংযুক্ত হয়ে ছাত্রলীগকে অভিনন্দন জানান এবং করোনাকালীন সময়ে মানুষের পাশে দাঁড়ানোর জন্য কৃতজ্ঞতা জানান তিনি।
সভায় সভাপতিত্ব করেন ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সংসদের সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয়। সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য সঞ্চালনা করেন। এ সময় আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের সাবেক-বতর্মান নেতৃবৃন্দসহ কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ছাত্রলীগের ইতিহাস বাংলাদেশের ইতিহাস। ছাত্রলীগ আমাদের দেশের প্রতিটি রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। আমাদের দেশের গণতান্ত্রিক অধিকার আদায়ের আন্দোলন, স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন—যেকোনো আন্দোলনই যদি আমরা দেখি সব থেকে বেশি রক্ত দিয়েছে, শহীদ হয়েছে আমাদের ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা।
মহামারী মোকাবেলায় কোনো কাজকে অবহেলা না করে বা ছোট মনে না করে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা কৃষকদের ধান কাটতে এগিয়ে আসায় তাদের প্রশংসা করেন শেখ হাসিনা।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, করোনা মহামারিতে ছাত্রলীগ অনবদ্য ভূমিকা রেখেছে। ছাত্রলীগ সব সময় অগ্রগামী দল। করোনাকালে ছাত্রলীগ দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। তারা কৃষকের ধান কেটে দিয়েছে, বৃক্ষরোপণ করেছে, করোনা আক্রান্তদের সহায়তা করেছে। মানুষের সেবার জন্য কাজ করেছে, সেগুলো করে যাবে। ছাত্রলীগের ছেলেরা এটাই প্রমাণ করেছে কোনও কাজকে তোমরা ছোট করে দেখো নাই।
বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, আবারও বলবো, যখনই গ্রামে যাবে কাউকে ছোট করে দেখবে না। কোনও কাজকে ছোট করে দেখবে না। সব কাজেরই গুরুত্ব আছে, সব কাজেরই মূল্য আছে। এটাই সব সময় নিজের আদর্শ হিসেবে নিতে হবে। বড় সে হতে পারে যে নিজেকে ছোট করে দেখতে পারে। আর ওপর দিকে তাকিয়ে চলতে গেলে হোঁচট খেতে হয়। সেজন্য মাটির দিকে তাকিয়ে চলতে হয়। আদর্শবান নেতা হিসেবে নিজেকে গড়ে তুলতে হবে। আগামী দিনে তোমরা দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারবে।
তিনি বলেন, আমি জানি হয়ত ক্ষেত্রবিশেষে কোথাও কোথাও দুই-একটা ঘটনা ঘটে। আর আমাদের কিছু পত্র-পত্রিকা আছে, যতই ভালো কাজ কর, সেটা লেখার তাদের যোগ্যতা নেই। যদি কোথাও এতটুকু খুঁত পায়, সেটিকে বড় করে লিখতে পারে। এটা তাদের মন-মানসিকতার দৈন্য বলেই আমি মনে করি। কাজেই ওগুলো আমি বেশি একটা হিসেবে ধরি না।
ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে, জাতির পিতার আদর্শ নিয়ে নিজেদের গড়ে তোলার আহ্বান জানান আওয়ামী লীগ সভানেত্রী।
তিনি বলেন, মনে রাখবে, যে আদর্শ নিয়ে গড়ে তুলতে পারবে নিজেকে, সেই কিন্তু সফল হবে। আর যদি অর্থ সম্পদের দিকে নজর চলে যায়, কখনও সফল হতে পারবে না।
ছাত্রলীগের মূলমন্ত্র শিক্ষা, শান্তি, প্রগতির কথা মাথায় রেখে প্রতিটি নেতাকর্মীকে আদর্শ নিয়ে চলার আহ্বান জানান সরকার প্রধান।
ছাত্রলীগ নেতাদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ছাত্রলীগের মূলমন্ত্র শিক্ষা, শান্তি, প্রগতি। শিক্ষা গ্রহণের মাধ্যমে শান্তি আমরা চাই। এটা মাথায় রেখে ছাত্রলীগের প্রতিটি নেতাকর্মীকে আদর্শ নিয়ে চলতে হবে, এটাই আমি চাই। প্রত্যেকে আদর্শ নিয়ে না চলতে পারলে কখনো বড় হতে পারবে না। ধন-সম্পদ অনেক বানাতে পারবে, কিন্তু দেশকে কিছু দিতে পারবে না। মানুষকে কিছু দিতে পারবে না। নিজে ভোগ করতে পারবে। আবার করোনাকালে সেই ভোগও সীমিত হয়ে যায়। এই বাস্তবতাও আমরা দেখছি।
বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান ছাত্রদের হাতে অস্ত্র এবং অর্থ তুলে দিয়ে বিপথগামী করতে চেয়েছিল বলে উল্লেখ করেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। বিপরীতে তিনি ছাত্রদের হাতে কলম তুলে দিয়েছেন। তার সরকার বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করে কারিগরি, ভ্যাটেরিনারি, অ্যারোনটিক্যাল, এভিয়েশনসহ নানা খাতে উচ্চশিক্ষার ব্যবস্থা করেছে। ছাত্রলীগের নেতাকর্মীসহ সব শিক্ষার্থীকে এসব প্রতিষ্ঠান থেকে সুশিক্ষা গ্রহণের আহ্বান জানান তিনি।
এসডাব্লিউ/এমএন/কেএইচ/২৩২২
আপনার মতামত জানানঃ