![](https://statewatch.net/wp-content/uploads/2021/01/পাকিস্তান-300x169.jpg)
পাকিস্তানের বেলুচিস্তানে একটি কয়লাখনির ১১ শ্রমিককে হত্যা করা হয়েছে। তারা দেশটির সংখ্যালঘু শিয়া হাজারা সম্প্রদায়ের। ইসলামিক স্টেট(আইএস) পশ্চিম পাকিস্তানের বেলুচিস্তান প্রদেশের কয়লা খনিতে হামলা চালিয়ে ১১ জনকে হত্যার দায় স্বীকার করেছে। উগ্রবাদীরা শনিবার ওই শ্রমিকদের অপহরণ করে এবং কয়লা খনির কাছেই হত্যা করে।
জানা যায়, শ্রমিকরা কাজে যাওয়ার সময় অজ্ঞাত অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীরা তাদেরকে অপহরণ করে কাছের একটি পাহাড়ে নিয়ে যায়। সেখানে নিয়ে শ্রমিকদের ওপর গুলি চালানো হয়। এ সময় ঘটনাস্থলেই ছয় শ্রমিক মারা যান। এছাড়া গুরুতর আহত পাঁচজন হাসপাতালে নেওয়ার পথে মারা যান।
ঘটনাস্থলে ধারণকৃত এক ভিডিওতে দেখা গেছে, একটি ছোট্ট ঘরের মেঝেতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে মৃতদেহ। প্রত্যেকের দুটো হাত একসাথে বাঁধা ছিল।
হত্যাকাণ্ডের নিন্দা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান টুইটে লিখেছেন, নিরীহ ১১ খনিশ্রমিককে এভাবে মেরে ফেলা সন্ত্রাসীদের আরেকটি কাপুরুষোচিত ও অমানবিক কাজ। খুনিদের গ্রেপ্তার করে বিচারের মুখোমুখি করতে সব ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
এদিকে খনিতে শ্রমিক হত্যার ঘটনার বিচারের দাবিতে বিক্ষোভকারীরা মৃতদেহগুলো প্রধান সড়কে ফেলে অবরোধ করে রাখে। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা হামলার ঘটনায় দায়ীদের দ্রুত গ্রেপ্তার করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
সুন্নি মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ পাকিস্তানে হাজারা সম্প্রদায়ের সদস্যরা প্রায়ই উগ্রপন্থিদের হামলার মুখে পড়ে। পাকিস্তানের জনসংখ্যার ১৫-২০ শতাংশ শিয়া সম্প্রদায়ের মুসলিমরা বছরের পর বছর ধরে সন্ত্রাসীদের হামলার লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়েছে। ইরানে তীর্থযাত্রায় যাওয়া, এমনকি দাফনকাজের সময় মসজিদে এবং শপিং মলের ভেতরেও শিয়াদের ওপর হামলা চালানো হয়। পাকিস্তানে শিয়াদের মধ্যে সবচেয়ে ঝুঁকিতে রয়েছে কোয়েটা অঞ্চলের হাজারা সম্প্রদায়।
বেলুচিস্তানে পাকিস্তান-ইরান সীমান্ত দিয়ে ধর্মীয় কাজে ইরানে যাওয়ার পথে হাজারা সম্প্রদায়ের যাত্রীবাহী কয়েকটি বাসে নির্বিচারে গুলি চালাইয়েছিল উগ্রপন্থীরা। ২০১১ সালে কোয়েটায় উগ্রপন্থী সংগঠনগুলি হাজারা সম্প্রদায়কে একটি খোলা চিঠি পাঠিয়ে বলেছিল, ‘সমস্ত শিয়ারা হত্যার যোগ্য এবং পাকিস্তান তাদের জন্য কবরস্থান’।
হিউম্যান রাইটস ওয়াচের একটি প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০০৮ সাল থেকে ৫০০ জনেরও বেশি হাজারা সম্প্রদায়ের শিয়া মুসলিম খুন হয়েছেন। অন্য এক প্রতিবেদনে আন্তর্জাতিক ধর্মীয় স্বাধীনতা সম্পর্কিত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কমিশন জানিয়েছে, পাকিস্তানে ১৯৯৯ থেকে ২০০৩ সালের মধ্যে প্রায় ৬০০ শিয়া মুসলিম নিহত হয়েছেন উগ্রবাদী সহিংসতার কারণে।
২০১৩ সাল থেকে পাকিস্তানে শিয়াদের বিরুদ্ধে সহিংসতার ঘটনায় কিছুটা কমলেও দেশের বেশ কয়েকটি জায়গায় শিয়াদের বিরুদ্ধে সাম্প্রদায়িক হামলা অব্যাহত রয়েছে। সাম্প্রতিক এক ঘটনায় হাজারো সুন্নি উগ্রপন্থী শিয়া বিরোধী বিক্ষোভ করে করাচির রাস্তায় প্রকাশ্যে হামলা চালায়। উগ্রপন্থী সুন্নিরা শিয়া সম্প্রদায়ের একটি ইমামবাড়ায় পাথর ছুড়ে মেরেছিল।
লোককাহিনি মতে, ত্রয়োদশ শতকে আফগানিস্তান দখল করতে যাওয়া চেঙ্গিস খান ও তার সৈন্যদের বংশধর হচ্ছেন হাজারারা৷ তাই তাদের চেহারা পাকিস্তানিদের চেয়ে আলাদা৷ মূলত আফগানিস্তানে হাজারাদের বাস৷ তবে সেখান থেকে অনেকে পাকিস্তানে চলে আসেন৷ বর্তমানে কোয়েটায় অন্তত ছয় লাখ হাজারা বাস করেন৷ হাজারারা মূলত শিয়া সম্প্রদায়ের৷ অথচ তারা থাকেন সুন্নিপ্রধান আফগানিস্তান ও পাকিস্তানে৷ তাই কোয়েটার হাজারারা প্রায়ই সুন্নি জঙ্গি গোষ্ঠী ইসলামিক স্টেট ও নিষিদ্ধ ঘোষিত লস্কর-ই-জঙভি গোষ্ঠীর হামলার শিকার হন৷
আন্তর্জাতিক মানবধিকারকর্মীরা বলেন, পাকিস্তানে কেবল শিয়া নয়, ভিন্নমতের কেউই তাদের অস্ত্র থেকে মুক্ত নয়। হিন্দু ধর্মের অনুসারী থেকে শুরু করে সাংবাদিক মানবধিকারকর্মী সকলেই তাদের লুক্ষ্যবস্তু।
এসডাব্লিউ/এমএন/কেএইচ/২০১২
আপনার মতামত জানানঃ
![Donate](https://statewatch.net/wp-content/uploads/2021/06/xcard.jpg.pagespeed.ic.qcUrAxHADa.jpg)
আপনার মতামত জানানঃ