স্টেটওয়াচ ডেস্ক: দিনাজপুরে মাদক সেবনের অভিযোগে ৫০ পুলিশ সদস্যের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হয়। যার মধ্যে মাদক সেবনের প্রমাণ পাওয়ায় ছয় পুলিশ সদস্যকে স্থায়ীভাবে চাকরি থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। গত ৩১ ডিসেম্বর ২০২০, বৃহস্পতিবার চাকরি থেকে তাদেরকে স্থায়ী বহিষ্কার করা হয়।
শুদ্ধি অভিযানের অংশ হিসেবে গত ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবসের পর প্রথম ধাপে দিনাজপুর জেলার ৫০ জন পুলিশ সদস্যের ডোপ টেস্ট করা হয়। এর মধ্যে ছয় জনের শরীরে মাদকের নমুনা শনাক্ত হয়। পরবর্তীতে আরও তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করে গত ৩১ ডিসেম্বর ওই ছয় পুলিশ কনস্টেবলকে স্থায়ীভাবে চাকরীচ্যুত করা হয়। দিনাজপুরের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন এ তথ্য নিশ্চিত করে জানান, সমাজকে মাদকমুক্ত করতে পুলিশ বদ্ধ পরিকর। আর সমাজকে মাদকমুক্ত করতে হলে আগে নিজেদের মাদকমুক্ত রাখতে হবে। এ জন্যই নিজেদের মধ্যে শুরু হয়েছে শুদ্ধি অভিযান। পুলিশ সুপার আরও জানান, জেলার সকল দপ্তরকে অধীনস্থ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে মাদক গ্রহণের ব্যাপারে ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানান তিনি। ডোপ টেস্টে শরীরে মাদকের নমুনা পাওয়ায় দিনাজপুরে কর্তব্যরত ছয় পুলিশ কনস্টেবলকে স্থায়ীভাবে চাকরীচ্যুত করেছে জেলা পুলিশ।
পুলিশ সুপার বলেন, ‘দ্বিতীয় ধাপে আরও ডোপ টেস্টের প্রক্রিয়া চলছে। এই টেস্টে কোনো পুলিশ সদস্যর শরীরে মাদক শনাক্ত হলে ছাড় দেওয়া হবে না। ক্রমান্বয়ে জেলার সব পুলিশ সদস্যের ডোপ টেস্ট করা হবে।’
চাকরীচ্যুতরা যাতে পারিবারিক ও সামাজিকভাবে হেয় না হন, সেজন্য তাদের নাম প্রকাশ করতে চাননি আনোয়ার হোসেন।
সাম্প্রতিক সময়ে পুলিশের মধ্যে মাদক গ্রহণ সমস্যা এমন আকার ধারণ করেছে যে দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও পুলিশের মহাপরিদর্শক মাদকের সঙ্গে জড়িত পুলিশ সদস্যদের বিষয়ে কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন কয়েকবার। পুলিশের মুখপাত্র সোহেল রানা গণমাধ্যমকে বলেছেন, মাদকের সঙ্গে কোন পুলিশ সদস্যের সম্পৃক্ততা প্রমাণ হলে তাকে ছাড় দেয়া হবে না, “এ ব্যাপারে ‘জিরো-টলারেন্স’ নীতি নেয়া হয়েছে।”
তিনি বলেন, “পুলিশের সব পর্যায়ে এমন বার্তা পাঠানো হয়েছে যে বাহিনীর কোন সদস্য মাদক গ্রহণ করবে না, মাদকের ব্যবসার সাথে কোনভাবে সম্পৃক্ত হবে না এবং যারা মাদকের ব্যবসা করেন তাদের সাথে কোনভাবে সংশ্লেষ রাখবেন না বা সহযোগিতা করবেন না।” এ ব্যাপারে পুলিশের সব ইউনিটে নানা ধরণের ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে বলে তিনি জানিয়েছেন।
সাধারণত পুলিশের বিরুদ্ধে তিনভাবে মাদকের সঙ্গে জড়িত হবার অভিযোগ শোনা যায় এর মধ্যে মাদক গ্রহণ, মাদকদ্রব্য কেনাবেচা করা এবং মাদক বিক্রিতে সহযোগিতা করা।
বাংলাদেশে গত দেড় বছরে ঢাকা, সিলেট, হবিগঞ্জ, চট্টগ্রাম, সিরাজগঞ্জ, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, যশোর, টাঙ্গাইল, নোয়াখালী, বগুড়া, ঝালকাঠি, বরিশাল, দিনাজপুর এবং মানিকগঞ্জসহ বিভিন্ন জেলার পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে মাদকের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। মাদকের এই সমস্যা সমাধানে ইতিমধ্যেই পুলিশ সদস্যদের ডোপ টেস্ট করানো হচ্ছে।
তিনি আরো বলেন, “যাদের সন্দেহ হচ্ছে এবং যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আসছে তাদের ডোপ টেস্ট করা হচ্ছে এবং অভিযোগ প্রমাণিত হবার পর ইতিমধ্যেই অনেক সদস্যের বিরুদ্ধে চাকরিচ্যুতিসহ নানা ধরণের ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।”
আপনার মতামত জানানঃ