গাড়িতে গরুর মাংস আছে এমন সন্দেহে দুই মুসলিমকে বেধড়ক পিটিয়েছে গো রক্ষকরা। এতে একজন গুরুতর আহত হয়েছেন এবং অপরজন মারা গেছেন। ঘটনা ঘটেছে ভারতের আহমেদাবাদে।
গুজরাটের ওই শহরটি থেকে মুম্বইতে যাচ্ছিল ওই গাড়িটি। কিন্তু রাস্তায় গাড়ি থামিয়ে ভেতরে থাকা দুই জনকে পেটায় স্থানীয় গো রক্ষকরা। পুলিশ এরইমধ্যে ওই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে যুক্ত থাকার অভিযোগে ১১ জনকে গ্রেপ্তার করেছে।
উল্লেখ্য, ক্ষমতায় যাওয়ার পর থেকে ভারতে বিজেপি নেতৃত্বাধীন রাজ্য সরকারগুলোর গরু জবাইয়ের বিরুদ্ধে কড়া অভিযান চালিয়েছে। ভারতের ২৮টি রাজ্যের দুই-তৃতীয়াংশের বেশিতেই গরু জবাই এখন নিষিদ্ধ। এগুলোর অধিকাংশ রাজ্যের সরকারই বিজেপি নিয়ন্ত্রিত।
প্রসঙ্গত, ভারতে ক্রমবর্ধমান সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন দার্শনিক নোয়াম চমস্কি। প্রখ্যাত মার্কিন লেখক নোয়াম চমস্কি বলেছেন, ইসলামোফোবিয়া সবচেয়ে ভয়াবহ রূপ নিয়েছে ভারতে। এর ফলে দেশটির ২৫ কোটি মুসলিম নিপীড়িত সংখ্যালঘুতে পরিণত হয়েছে। এ ছাড়া পুলিশি নিপীড়নে ভারত-নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের অবস্থাও এখন ফিলিস্তিনের মতো।
চমস্কি বলেছেন, পশ্চিমজুড়েই ‘ইসলামভীতিজনিত বিকার’ দিনে দিনে বাড়ছে। ভারতে এ বিকার চরম ও ভয়াবহ আকার নিয়েছে। সেখানে নরেন্দ্র মোদি সরকার ভারতের ধর্মনিরপেক্ষ গণতন্ত্রকে পদ্ধতিগতভাবে ধ্বংস করছে। ভারতকে একটি ‘হিন্দু জাতীয়তাবাদী’ রাষ্ট্রে পরিণত করার পথে হাঁটছে তারা।
এদিকে, হিন্দুস্তান টাইমসের খবরে জানানো হয়, রাস্তায় যে টোল প্লাজা রয়েছে সেখানকার কর্মীরাই গো রক্ষকদের খবর দেয় যে ওই গাড়িতে গরুর মাংস রয়েছে। এরপরই রাস্তায় ওই গাড়িটিকে আটকায় গো রক্ষকদের একটি দল। গাড়িতে থাকা দু’জনকে বেধড়ক মারধর করা হয়। এতে একজনের মৃত্যু হয়। মৃতের নাম আফান আব্দুল মাজিদ আনসারি।
বয়স ৩১ বছর। তিনি গুজরাটের প্রতিবেশী রাজ্য মহারাষ্ট্রের কুরলার বাসিন্দা। এদিকে অপর গাড়ি আরোহী নাসির হুসেন শেখ। তিনিও আহত হয়েছিলেন। তবে তার অবস্থা এখন স্থিতিশীল।
ভারতে এই কথিত গো রক্ষকদের নাম করে প্রায়ই এ ধরণের মারধর থেকে শুরু করে হত্যাকাণ্ড পর্যন্ত ঘটছে। বহু চেষ্টার পরেও প্রশাসন গো রক্ষকদের বাড়াবাড়ি থামাতে পারছে না। এর আগে ৮ই জুন গরু পাচারের অভিযোগে এক জনকে হত্যা করা হয়েছিল। পুলিশ তখন রাষ্ট্রীয় বজরং দলের ৬ সদস্যের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছিল।
সাম্প্রতিক এই হত্যাকাণ্ড নিয়ে স্থানীয় পুলিশের এসপি শাহজি উমাপ জানিয়েছেন, ১১জন অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে খুন ও দাঙ্গার অভিযোগ আনা হয়েছে। তিনি জানিয়েছেন, গো রক্ষকদের নামে ওই গ্রুপটি চলছিল। তারা গোরক্ষার কাজ করে বলে দাবি করছে। এই প্রথমবার তারা হত্যার মতো অপরাধ করেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
তবে পুলিশ জানিয়েছে যে, গত ৮ই জুন যাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছিল তাদের সঙ্গে এই গ্রুপটির যোগ নেই। পুলিশ জানিয়েছে, এদের একটা হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ আছে। কোথাও গরুর মাংস নিয়ে যাওয়ার খবর পেলেই তারা সেখানে চলে যায়। সেখানে গিয়ে তারা এই কাজ আটকানোর চেষ্টা করে।
বিশিষ্টরা বলছেন, বিজেপি শাসিত দেশটিতে ধর্মীয় নির্যাতনের ভয়াবহতা বেড়েছে। সবসময় আতঙ্কে থাকে সংখ্যালঘুরা। প্রায় প্রতিদিনই দেশটির কোথাও না কোথাও সংখ্যালঘু নির্যাতনের এই দৃশ্য দেখা যায়। দেশটিতে সংখ্যালঘুরা কোণঠাসা হয়ে পড়েছে। বিশেষ করে আফগানিস্তানের উত্তাল পরিস্থিতিতে ভারতে সংখ্যালঘু নির্যাতনের বিষয়টি আরও উত্তেজিত করে তুলেছে। আর এসবের দায় বিজেপি সরকারের ঘাড়েই দিতে চান বিশিষ্টরা।
এসডব্লিউএসএস/১৯০০
আপনার মতামত জানানঃ