মাঝে মাঝেই সন্ধান পাওয়া যায় নতুন জীবের। এই যেমন ২০১৩ সালে সন্ধ্যান পাওয়া গিয়েছিল আমাজনে। আমাজন পৃথিবীর সবথেকে গভীর অরণ্য। প্রকৃতি যেন তার সমস্ত রুপ-রহস্য নিয়ে হাজির হয়েছে আমাজনের বিশাল অরণ্যে। জীব বৈচিত্র্যের এক অনিঃশেষ খনি যেন এই আমাজন। বিশাল এই অরণ্যে রয়েছে নানা প্রজাতির পশু, পাখি, মাছ, সরীসৃপ, পোকা মাকড় ইত্যাদি।
এখনো অনেক জায়গা রয়েছে, যেখানে আজ পর্যন্ত কোন মানুষের পায়ের চিহ্ন পরে নি। তবে অজানাকে জানার স্পৃহা মানুষের অসীম। যুগ যুগ ধরেই মানুষ চেষ্টা করে গেছে এই আমাজনের অজানা রহস্য ভেদ করতে। তারই ধারাবাহিকতায় ওয়ার্ল্ড ওয়াইল্ড লাইফের (ডব্লিউডব্লিউএফ) বিজ্ঞানীরা ৪৪১ প্রজাতির নতুন প্রাণের সন্ধান পান এই আমাজনে।
যার মধ্যে রয়েছে ২৫৮ প্রজাতির নতুন উদ্ভিদ, ৮৪ প্রজাতির নতুন মাছ, ৫৮ প্রজাতির উভচর প্রাণী, ২২ প্রজাতির সরীসৃপ, ১৮ প্রজাতির পাখি ও একটি নতুন প্রজাতির স্তন্যপায়ী। এছাড়াও অনেক কীটপতঙ্গেরও সন্ধান পাওয়া গিয়েছিল।
তবে কখনও কখনও এমন জীবজগতের সন্ধান পাওয়া যায়, যা অনেক আগেই বিলুপ্ত হয়ে গেছে। হারিয়ে গেছে পৃথিবী থেকে। তাদের নাম চিহ্নও নেই ইতিহাসে।
এই যেমন অস্ট্রেলিয়ার উত্তরাঞ্চলে শত কোটি বছরের পুরোনো পাথরে পাওয়া জীবাশ্ম বিশ্লেষণ করে প্রাচীন প্রাণীদের হারিয়ে যাওয়া একটি জগৎ আবিষ্কার করেছেন বিজ্ঞানীরা। তারা বলছেন, প্রায় ১৬০ কোটি বছর আগে পৃথিবীর জলরাশিতে এই জীব জগতের অস্তিত্ব ছিল।
গবেষকেরা বলছেন, এর মধ্য দিয়ে পৃথিবীর বিবর্তনের কালপরিক্রমা সম্পর্কে আগের ধারণায় পরিবর্তন আসতে পারে।
অস্ট্রেলিয়ান ন্যাশনাল বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকেরা ১০ বছর ধরে গবেষণা চালানোর পর প্রোটোসটেরল বায়োটা নামের জীবের অস্তিত্ব খুঁজে পেয়েছেন। বৃহস্পতিবার নেচার সাময়িকীতে গবেষণা প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয়।
গবেষকেরা আরও বলছেন, প্রোটোসটেরল বায়োটা নামের অত্যন্ত ক্ষুদ্র এ জীবটি ইউক্যারিওটস প্রাণীর পরিবারভুক্ত। ইউক্যারিওটসের কোষ কাঠামো জটিল। এর মধ্যে আছে মিটোচন্ড্রিয়া। এটি কোষের পাওয়ার হাউস হিসেবে পরিচিত। এ ছাড়াও আছে একটি নিউক্লিয়াস। এর নিয়ন্ত্রণ ও তথ্য কেন্দ্রের মতো কাজ করে।
ইউক্যারিওটস জীবের আধুনিক ধরনের মধ্যে আছে—ছত্রাক, উদ্ভিদ, পশু এবং অ্যামিবার মতো এক কোষবিশিষ্ট জীব।
এত দিন ধারণা করা হতো মানবজাতি আদিম বংশানুক্রম ইউক্যারিওটিক কমন অ্যানচেস্টরের (এলইসিএ) সঙ্গে সম্পর্কিত। প্রায় ১২০ কোটি বছর আগে এর অস্তিত্ব ছিল। তবে নতুন গবেষণা অনুযায়ী, এ বংশানুক্রম আরও বেশি পুরোনো।
অস্ট্রেলিয়া, ফ্রান্স, জার্মানি এবং যুক্তরাষ্ট্রের বিজ্ঞানীরা এ গবেষণাটিতে অংশ নেন। গবেষণার জন্য তাঁরা অস্ট্রেলিয়ার নর্দার্ন টেরিটরির কাছে সমুদ্রের তলদেশে একটি পাথরে ভেতর পাওয়া আণবিক জীবাশ্ম নিয়ে পরীক্ষা করেছেন।
অস্ট্রেলিয়ান ন্যাশনাল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এবং গবেষক জোচেন ব্রোকস এক বিবৃতিতে বলেন, ‘আমাদের বিশ্বাস এটি পৃথিবীর প্রথম শিকারি প্রাণী। এরা ব্যাকটেরিয়া শিকার করে খেত।’
বোকস আরও বলেন, প্রোটোসটেরল বায়োটা ব্যাকটেরিয়ার চেয়ে বড় ছিল বলে তাঁরা ধারণা করছেন। তবে এটি দেখতে কেমন চির তা জানা যায়নি।
বেঞ্জামিন বেটেরশিম নামের আরেক গবেষক বলেন, পুরোনো পাথরে আটকে থাকা এসব আণবিক জীবাশ্ম বিশ্লেষণের মধ্য দিয়ে প্রাচীন জীবন এবং বাস্তুসংস্থানের সম্পর্কে গভীরভাবে জানার সুযোগ তৈরি করে দিয়েছে।
নেটেরশিম মনে করেন, এসব আণবিক জীবাশ্ম না থাকলে কখনোই জানা যেত না যে এক সময় প্রোটোসটেরল বায়োটার অস্তিত্ব আছে। আগে মনে হয়েছিল সমুদ্রগুলোর বেশিরভাগজুড়ে ব্যাকটেরিয়ার জগৎ ছিল। কিন্তু আমাদের নতুন আবিষ্কার বলছে, এটি সম্ভবত তেমন বিষয় নয়।
গবেষক জোচেন ব্রোকস বলেন, নতুন আবিষ্কৃত প্রাচীন প্রাণিজগতটির অস্তিত্ব প্রায় ১৬০ কোটি বছর আগে শুরু হয়েছিল। প্রায় ৮০ কোটি বছর আগেও এর অস্তিত্ব ছিল।
এর পরবর্তী সময়ে পৃথিবীর বিবর্তনের সমযরেখাটি টোনিয়ান ট্রান্সফরমেশন নামে পরিচিত। তখন ছত্রাক ও শেওলার মতো নতুন জীবের উত্থান ঘটে। তবে ঠিক কবে প্রোটোসটেরল বায়োটার বিলুপ্তি হয়েছে তা এখনো জানা যায়নি।
এসডব্লিউএসএস/১১৩৫
আপনার মতামত জানানঃ