আফগানিস্তানে স্কুল ছাত্রীদের ওপর বিষ প্রয়োগের ঘটনা ঘটেছে। এতে প্রায় ৮০ স্কুল ছাত্রী অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। ঘটনাটি ঘটেছে দক্ষিণ আফগানিস্তানে সার এ পুল প্রদেশের দু’টি স্কুলে। এরমধ্যে অসুস্থ ৬০ জনই নাশয়ানে কাবুদ স্কুলের এবং বাকি ১৭ জন নওশান-ই ফৈজাবাদ স্কুলের শিক্ষার্থী।
সোমবার (৫ জুন) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা রয়টার্স।
খবরে জানানো হয়, ২০২১ সালে তালেবান ক্ষমতায় আসার পর থেকে আফগানিস্তানে নারীদের শিক্ষা ও চাকরির ওপরে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। শুধুমাত্র পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশুনার অনুমোদন রয়েছে। এরমধ্যেও তাদেরকে টার্গেট করে এ ধরণের হিংসাত্মক আক্রমণ চালানো হচ্ছে। এ ঘটনা নিয়ে তদন্ত শুরু করেছে তালেবান।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, স্কুলে বিষক্রিয়ার শিকার হওয়ার পর প্রায় ৮০ আফগান মেয়ে শিক্ষার্থীকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে বলে দেশটির পুলিশ সোমবার জানিয়েছে। আফগানিস্তানের উত্তরাঞ্চলে সার-ই পোল প্রদেশের একটি বালিকা বিদ্যালয়ে এই ঘটনা ঘটেছে।
সার-ই-পোল প্রদেশের পুলিশের মুখপাত্র দ্বীন মোহাম্মদ নাজারি বলেছেন, ‘কিছু অজ্ঞাত লোক সানচারাক জেলার একটি বালিকা বিদ্যালয়ে প্রবেশ করে … এবং ক্লাসে বিষ প্রয়োগ করে। পরে যখন মেয়েরা ক্লাসে আসে তখন তারা বিষক্রিয়ার শিকার হয়।’
তিনি এই ঘটনার বিস্তারিত কোনও বিবরণ দেননি। এছাড়া সেখানে কোন ধরনের পদার্থ ব্যবহার করা হয়েছে বা এই ঘটনার পেছনে কারা রয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে সে বিষয়েও কোনও তথ্য সামনে আনা হয়নি।
নাজারি বলেন, মেয়েদের হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে এবং তারা ‘ভালো অবস্থায় আছে’। এই ঘটনায় এখনও পর্যন্ত কাউকে গ্রেপ্তার করা হয়নি।
এর আগে প্রতিবেশী ইরানে মেয়েদের স্কুলে বিষক্রিয়ার নানা ঘটনায় গত বছরের নভেম্বর থেকে আনুমানিক ১৩ হাজার শিক্ষার্থী অসুস্থ হয়েছে। অসুস্থ হয়ে পড়া এসব শিক্ষার্থীর বেশিরভাগই ছাত্রী।
এর আগে আফগানিস্তানের আগের বিদেশি-সমর্থিত সরকারের সময়ও মেয়েদের স্কুলে সন্দেহভাজন গ্যাস হামলাসহ বেশ কয়েকটি বিষক্রিয়ার ঘটনা ঘটেছিল। তবে তালেবান প্রশাসন ২০২১ সালে ক্ষমতা দখলে নেওয়ার পর থেকে এই ধরনের ঘটনা এবারই প্রথম ঘটল বলে মনে করা হচ্ছে।
যদিও ক্ষমতা দখলের পর বেশিরভাগ নারী ও মেয়ে শিক্ষার্থীদের হাইস্কুল এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার ক্ষেত্রে বাধা সৃষ্টি করেছে তালেবান।
এদিকে পৃথক এক প্রতিবেদনে সংবাদমাধ্যম ভয়েস অব আমেরিকা জানিয়েছে, উত্তর আফগানিস্তানে দু’টি আলাদা হামলায় প্রায় ৮০ জন স্কুলছাত্রী তাদের প্রাইমারি স্কুলে বিষক্রিয়ার শিকার হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। স্থানীয় এক শিক্ষা কর্মকর্তা রোববার এই তথ্য জানিয়েছেন বলেও উল্লেখ করেছে সংবাদমাধ্যমটি।
ওই শিক্ষা কর্মকর্তা বলেন, বিষ প্রয়োগের জন্য দায়ী ব্যক্তির কোনও ব্যক্তিগত ক্ষোভ থাকতে পারে। তবে এ সম্পর্কে বিস্তারিত কিছু বলা হয়নি। গত শনিবার ও রোববার সার-ই-পোল প্রদেশে এসব ঘটনা ঘটে।
প্রাদেশিক শিক্ষা বিভাগের প্রধান মোহাম্মাদ রাহমানি বলেন, সানচারাক জেলায় প্রায় ৮০জন ছাত্রীকে বিষপ্রয়োগ করা হয়। তিনি জানান, ভুক্তভোগী ছাত্রীদের হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে এবং তারা সবাই এখন ভালো আছে।
২০২১ সালের আগস্টে তালেবান গোষ্ঠী ক্ষমতায় আসার পর নারী ও কিশোরীদের অধিকার এবং স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপের মধ্যে এই ধরনের ঘটনা প্রথমবার ঘটল বলে মনে করা হচ্ছে।
অবশ্য তালেবান প্রশাসনের অধীনে ষষ্ঠ শ্রেণি থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত মেয়েদের শিক্ষা নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
রয়টার্স বলছে, তালেবান কর্তৃপক্ষ প্রায় ১২ বছর বয়স পর্যন্ত মেয়েদের জন্য প্রাথমিক বিদ্যালয় খোলা রেখেছে। কট্টরপন্থি এই গোষ্ঠীটির দাবি, তারা কিছু শর্তে নারী শিক্ষার পক্ষে।
তবে ২০২১ সালের অগস্টে কাবুলে বন্দুকের জোরে গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত রাষ্ট্রপতি আশরাফ ঘানির সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করেছিল তালিবানরা। কাবুলের ক্ষমতা পুনর্দখল করেছিল তারা। বিশ্বের অধিকাংশ দেশ এখনও আফগানিস্তানের তালিবান সরকারকে স্বীকৃতি দেয়নি।
ক্ষমতা পুনর্দখলের সময় তালিবান কর্তৃপক্ষ জানিয়েছিল, তাদের প্রথম শাসন আমলের থেকে এইবারের শাসন হবে অনেকটাই আলাদা। মহিলা ও মেয়েদের সামাজিক জবনে আরও বেশি করে যুক্ত করা হবে। কিন্তু, কার্যক্ষেত্রে সেই প্রতিশ্রুতি রক্ষা করেনি তারা। মহিলা ও মেয়েদের অধিকার এবং স্বাধীনতাকে ক্ষুণ্ণ করা হচ্ছে প্রতিনিয়ত।
ক্ষমতায় ফেরার পরই ষষ্ঠ শ্রেণির উপরে মেয়েদের স্কুলে যাওয়া নিষিদ্ধ করেছিল তালিবানরা। ২০২২-এর ডিসেম্বরে, মহিলাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে যাওয়াও নিষিদ্ধ করা হয়। তবে, স্কুলে আসা ছাত্রীদের উপর বিষ প্রয়োগের মতো ঘটনা, এই প্রথম ঘটল।
বস্তুত, সাম্প্রতিক কয়েক মাসে একের পর এক এই ধরনের ঘটনার খবর এসেছে ইরান থেকে। প্রথম ঘটনাটি ঘটেছিল ২০২২ সালের ৩০ নভেম্বর ইরানের কোম শহরে। তারপর থেকে এখনও পর্যন্ত ইরানের ২০টি প্রদেশ জুড়ে ৯১টি গার্লস স্কুলে বিষ প্রয়োগ করে হামলা করা হয়েছে।
এখনও পর্যন্ত ১২০০-এর বেশি ইরানি ছাত্রীর উপর বিষ প্রয়োগ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন রাষ্ট্রপুঞ্জ। এই ধরনের হামলা ঠেকাতে সরকারের পক্ষ থেকেও কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না বলে দাবি রাষ্ট্রপুঞ্জের। এবার গণহারে ছাত্রীদের উপর বিষ প্রয়োগের প্রবণতা দেখা গেল আফগানিস্তানেও।
এসডব্লিউএসএস/২০৩৫
আপনার মতামত জানানঃ