কল্পবিজ্ঞান বইয়ের পাতা থেকে উঠে এসেছে বলে ঠাহর হয়। মাথার অংশ দেখতেও ছবিতে বর্ণিত ভিনগ্রহী যানের মতো। একঝলক দেখলে গায়ে কাঁটা দিতে বাধ্য।
সমুদ্রের গভীরে এমনই ভয়াল, দৈত্যাকার জেলিফিশের দেখা মিলল। প্রথম দর্শনে ভিনগ্রহী প্রাণী বলেই ভ্রম হয়েছিল। গবেষণায় জানা গেল আসল পরিচয়।
পোলার রিসার্চ জার্নালে ওই দৈত্যাকার জেলিফিশের (Stygiomedusa Gigantean) বিবরণ প্রকাশিত হয়েছে। সামনে আনা হয়েছে ছবিও। আন্টার্কটিকায় উপকূলের কাছে প্রথম সেটির দেখা পান ক্রুজের যাত্রীরা।
ভয়াল এবং দৈত্যাকার ওই জেলিফিশ আসলে গভীর সমুদ্রের অন্যতম মেরুদণ্ডহীন শিকারি প্রাণী। ২০২২ সালে যখন প্রথম বার দেখা মেলে, জলের উপরিভাগে উঠে এসেছিল।
গবেষকরা জানিয়েছেন, ওই জেলিফিশটি ১৬ ফুটেরও বেশি দীর্ঘ। মাথার অংশ ভিনগ্রহী যানের মতো, বাকি অংশ ফিতার মতো। হালকা চালে ভেসে বেড়ায় জলে, যার দৈর্ঘ্য ৩৩ ফুটের কাছাকাছি।
সম্প্রতি সেটির ছবিও প্রকাশ করা হয়েছে গবেষকদের তরফে। গবেষক ড্যানিয়েল মুর জানিয়েছেন, প্রথম এক পর্যটকের ক্যামেরায় জেলিফিশটিকে দেখেন তিনি। তার পরই সচক্ষে সেটিকে দেখতে পাওয়ার চেষ্টায় নেমে পড়েন।
গবেষকরা জানিয়েছেন, একমাত্র উত্তর মেরু ছাড়া পৃথিবীর সব সমুদ্র, সাগর-মহাসাগরেই এই ভয়াল এবং দৈত্যাকার জেলিফিশের বাস রয়েছে। কিন্তু গভীর জলে, মাটির প্রায় কাছাকাছি সাঁতরে চলার জন্যই সাধারণ মানুষের নজরে পড়ে না সচরাচর। আন্টার্কটিকায় এমন তিন ভিন্ন প্রজাতির জেলিফিশ পাওয়া গিয়েছে এখনও পর্যন্ত।
২৮৫ এবং ৯২০ ফুট গভীরে Stygiomedusa Gigantea জেলিফিশের দেখা মিলেছে। সাধারণত ৩ হাজার ২৮০ ফুট গভীরে থাকে তারা। কিন্তু যত দক্ষিণে এগনো যায়, ততই জলের উপরিভাগে দেখা মেলে তাদের, ঠিক যেমনটি আন্টার্কটিকার ক্ষেত্রে হয়েছে।
তাই আন্টার্কটিকায় ক্রুজের প্রবেশ এবং পর্যটকদের অবাধ বিচরণ নিয়েও তৈরি হয়েছে বিতর্ক। তাতে আন্টার্কটিকার পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা যেমন রয়েছে, তেমনই প্রতিকূল পরিস্থিতিতে যাত্রীদের জীবনের ঝুঁকিও রয়েছে।
কারণ ২০২২-এর শেষ দিকে আন্টার্কটিকা অভিযানে গিয়ে আমেরিকার চার নাগরিকের মৃত্যু হয়। এর মধ্যে, সুবিশাল ঢেউ আছড়ে পড়ে একটি জাহাজে। আন্টার্কটিকার সমুদ্র অভিযানের পক্ষেও অনুকুল নয় বলে মত বিজ্ঞানীদের।
চিরতুষারের দেশ আন্টার্কটিকা। এখানে রহস্য অনেক। এই যেমন কিছুদিন আগে কৃত্রিম উপগ্রহের তোলা ছবিতে ধরা পড়েছে সাত মাইল এলাকা ধরে বরফের উপরে রহস্যময় দাগ! যা দেখে বিজ্ঞানীদের কপালে ভাঁজ।
পাণ্ডববর্জিত ওই এলাকায় মাটির উপরে কীসের দাগ ওটা? যেন কোনও কিছু খুব দ্রুতবেগে ওখান দিয়ে চলে গিয়েছে! এই দাগ নিয়েই শুরু হয়েছে নানা জল্পনা।
পৃথিবীর অন্যতম দুর্গম স্থান আন্টার্কটিকার কোনও কোনও জায়গার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা -৯০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। কিছু এলাকা এতই দুর্গম, বিজ্ঞানীরা সেখানে পৌঁছতে পারেন না। সেক্ষেত্রে স্যাটেলাইট ইমেজই ভরসা। আর এবার সেই ছবি দেখেই চক্ষু চড়কগাছ তাদের।
ওই রহস্যময় দাগের উৎস কী? ছবি দেখে সাংবাদিক জো পাপ্পালার্দোর মত, ”মনে হচ্ছে, কিছু একটা যেন দ্রুত নিচে নেমে বরফের উপর দিয়ে দ্রুতবেগে চলে গিয়েছে। সম্ভবত কোনও কিছু ভেঙে পড়েছে।” তার ইঙ্গিত বিমান দুর্ঘটনার দিকেই।
তিনি মনে করিয়ে দেন, ১৯৭৯ সালে অ্যান্টার্কটিকাতেই নিউজিল্যান্ডের ফ্লাইট ৯০১ বিমানটি ভেঙে পড়েছিল। বিমানের ২৩৭ জনেরই মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছিল।
তবে পাপ্পালার্দোর তত্ত্ব নাকচ করে দিয়েছেন বিজ্ঞানী মার্ক ডি’ অ্যান্টনিও। তার মতে, ছবিটি খুঁটিয়ে দেখলে বিমান দুর্ঘটনার সম্ভাবনাকে উড়িয়ে দিতেই হবে। কেননা আশপাশে এমন কোনও চিহ্নই নেই, যা বিমান দুর্ঘটনার পক্ষে প্রমাণ দেয়।
হয়তো এ বিষয়ে আরও অনেক দাবির দেখা পাওয়া যেত। বিশেষ করে ‘কন্সপিরেসি থিওরিস্টরা’ অনেক সময়ই যে কোনও রহস্যময় ঘটনা সম্পর্কে আজগুবি দাবি করে থাকেন।
কিন্তু সেই অবকাশ আর রইল না। রহস্যের সমাধান ইতিমধ্যেই করে ফেলেছেন নাসার (NASA) বিজ্ঞানী ড. কেলি ব্রান্ট। তিনি নিজে ওই দুর্গম স্থানে পরিদর্শনে গিয়েছিলেন।
আর তখনই তার কাছে পরিষ্কার হয়ে যায় বিষয়টি। তিনি জানিয়েছেন, ওই দাগ আসলে এক বিরল হিমবাহের। বহু টন বরফ একসঙ্গে জমে ওই ধরনের হিমবাহ তৈরি হয়। তারপর ইরাবাস পর্বতের উপর থেকে তা দ্রুত নেমে আসে নিচে। প্রবল গতিতে গড়িয়ে যায় সামনের দিকে।
এসডব্লিউ/এসএস/০৯৩০
আপনার মতামত জানানঃ