গুবরে পোকা ড্রাগন বা ইউনিকর্নের মতো ডাইনোসর রূপকথার রঙিন জগত থেকে উঠে আসা কোনো প্রাণী নয়। আজ থেকে চব্বিশ কোটি বছর পূর্বে আবির্ভূত হওয়া দৈত্যাকৃতির এই জীব প্রাগৈতিহাসিক পৃথিবীকে একচ্ছত্রভাবে চার কোটি বছর যাবত শাসন করেছে।
আধুনিক বিজ্ঞানের কারসাজিতে সেলুলয়েডের পর্দায় ডাইনোসরের অনুমিত প্রতিচ্ছবি দেখলে যারপরনাই অবাক হতে হয়। অনেক প্রজাতির ডাইনোসর লম্বায় ৪০ ফুট এবং ওজনে প্রায় ৯ টন পর্যন্ত হতো। তাদেরকে টেক্কা দেওয়ার সাধ্য কার? তবে আদিম পৃথিবীতে ডাইনোসর বাদেও এমন কিছু প্রাণীর অস্তিত্ব ছিল, যারা ডাইনোসরকে খেয়ে ফেলার ক্ষমতা রাখত।
প্রাগৈতিহাসিক কালের এমন কিছু বিচিত্র সব প্রাণী নিয়েই আজকের এই আয়োজন। পাশাপাশি এই প্রাণীগুলো যে ডাইনোসরকে খেয়ে ফেলার সামর্থ্য আছে, তা আপনার বিশ্বাসই হবে না।
গুবরে পোকা
অন্যান্য সকল প্রাণীর মতো ডাইনোসরও মৃত্যুর পর ব্যাকটেরিয়া, কৃমি, পোকা ইত্যাদির সাহায্য মাটিতে বিয়োজিত হতো। এদের মধ্যে পরিচিত এক পোকা হলো ‘বোন-বোরিং বিটল‘ নামে এক হাড়খেকো গুবরে পোকা।
এই পোকারা মাংসের চেয়ে হাড়ের প্রতি আকৃষ্ট হয় বেশি। প্রথমে তারা মৃত ডাইনোসরের হাড়ের ছিদ্রে ডিম পাড়ত, তারপর এগুলো থেকে লার্ভা বের হয়ে তা হাড়ের পুষ্টি সমৃদ্ধ হাড়ের মজ্জা খাওয়া শুরু করত। ফলে অল্প সময়ে হাড় ভেঙে মাটির সাথে অতি সহজেই মিশে যেত।
ফিতাকৃমি
ডাইনোসর যে শুধু তার চেয়ে আকারে বড় কোনো প্রাণীর হাতে শিকারে পরিণত হত, বিষয়টা সবসময় এমন নয়। এর বিপরীত কিছু ঘটনাও দেখা যেত। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, প্রাগৈতিহাসিক ফিতাকৃমির কথা। সম্প্রতি মাংসাশী এক ডাইনোসর গণের জীবাশ্ম হয়ে যাওয়া মল বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, তাদের পাকস্থলীতে নেমাটোড, ট্রেমাটোড অর্থাৎ শত ফুট লম্বা ফিতাকৃমির অস্তিত্ব বিদ্যমান ছিল। তবে এই ফিতাকৃমি ডাইনোসরকে বাহক হিসেবে ব্যবহার করে তাকে অসুস্থ করে দিত, নাকি তার সাথে মিথোজীবী হিসেবে বাস করত, সে বিষয়ে কোনো স্পষ্ট ধারণা পাওয়া যায় না।
রেপেনোম্যামাস
আজ থেকে প্রায় ১৩০ মিলিয়ন বছর পূর্বে, প্রাক-ক্রিটেশিয়াস যুগে ছিল রেপেনোম্যামাসদের বিচরণ। সেসময় দুই প্রকার প্রাক-ক্রিটেশিয়াস স্তন্যপায়ী প্রজাতি যথাক্রমে ‘R. robustus‘ এবং ‘R. giganticus‘ এর ওজন হতো প্রায় ২৫-৩০ পাউন্ডের কাছাকাছি। মজার ব্যাপার হলো, সর্বভুক এই স্তন্যপায়ীদের খাদ্যতালিকায় ছিল বাচ্চা ডাইনোসরও। ২০০৫ সালে ন্যাচার জার্নালে প্রকাশিত এক পেপারে দেখা যায়, চীনে পাওয়া এক ‘R. robustus‘ এর জীবাশ্ম বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, সেটি একটি সিটাকোসোরাস ভক্ষণ করেছিল। এ থেকে প্রমাণ হয় যে, তাদের খাদ্য তালিকায় ছোটখাট স্তন্যপায়ী, সরীসৃপ, মাছ, অমেরুদণ্ডী ছাড়াও ডাইনোসর অন্তর্ভুক্ত ছিল।
সানাজেহ
এই তালিকায় স্থান পাওয়া সর্পকুল থেকে একমাত্র প্রতিনিধি হচ্ছে সানাজেহ। হয়তো টাইটানোবোয়ার মতো প্রাগৈতিহাসিক আলোচনায় তারা চূড়ান্ত স্থান দখল করে নিতে পারেনি, কিন্তু কিছু বৈশিষ্ট্য তাদেরকে বানিয়েছে অনন্য। ৬৭ মিলিয়ন বছর পূর্বে লেট ক্রিটেসাস যুগে নিজের আঁকাবাঁকা চিহ্ন পৃথিবীর মাটিতে রেখে গেছে সানাজেহ নামক সাপের এই গণ।
৩ মিটার লম্বা এই সাপের জীবাশ্ম উদ্ধার করা হয়েছে ভারত থেকে। তারা খুঁজে খুঁজে টাইটানোসরের বাসা বের করত, যেগুলোতে ডাইনোসরের ডিম পাওয়া যাবে। তারপর ডিম থেকে ডাইনোসরের বাচ্চা বের হওয়া মাত্রই তাদের খপ করে মুখে পুরে দিত।
ডিডেলফোডন
আজ থেকে প্রায় ৬৬ মিলিয়ন বছর পূর্বে পৃথিবীতে অস্তিত্ব ছিল ডিডেলফোডন নামক মাংসাশী স্তন্যপায়ীর। তারা ছিল মেটাথেরিয়ান নামক এক স্তন্যপায়ী দলের অংশবিশেষ, যারা আজকের মারসুপিয়ালদের (ক্যাঙারু) পূর্বপুরুষ। তীক্ষ্ণ- ধারালো দাঁত দিয়ে তারা ছোট ও মাঝারি আকারের মেরুদণ্ডী প্রাণীদের চিবিয়ে ফেলত। যদিও তাদের ডাইনোসর ভক্ষণের কোনো জীবাশ্মভিত্তিক প্রমাণ নেই, তবুও যুক্তি দিয়ে উপসংহারে আসা যায় তারা সদ্য জন্মানো ডাইনোসর ছানাকে খেয়ে ফেলতে পারত।
আপনার মতামত জানানঃ