মঙ্গল গ্রহের বিষুবরেখার কাছে হিমবাহের ধ্বংসাবশেষ খুঁজে পেয়েছেন মার্কিন গবেষকেরা। তারা ধারণা করছেন, সেখানে এখনো কিছু পানির অস্তিত্ব থাকতে পারে। একসময় মানুষ সেখানে যেতে পারে বলেও মনে করছেন তারা।
বিজ্ঞানীরা বলছেন, হিমবাহের কথা বলা হলেও মঙ্গল গ্রহের বিষুবরেখা অঞ্চলে পুরু বরফের কোনো অস্তিত্ব নেই। সেখানে অন্যান্য খনিজের সঙ্গে হিমবাহ থাকার কিছু চিহ্ন রয়ে গেছে। এ ছাড়া এখানে হালকা রঙের সালফেট লবণ থাকতে পারে।
গবেষকেরা বলছেন, তারা মঙ্গল গ্রহের ওই অঞ্চলের বৈশিষ্ট্য পর্যবেক্ষণ করে দেখেছেন, সেখানে হিমবাহের এগিয়ে চলার ফলে তৈরি হওয়া শৈলশিলা দেখা যায়। এ ছাড়া হিমবাহ থাকার আরও নানা লক্ষণ সেখানে রয়েছে।
গত বুধবার যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাসে অনুষ্ঠিত ৫৪তম লুনার অ্যান্ড প্ল্যানেটারি সায়েন্স সম্মেলনে এসব তথ্য তুলে ধরা হয়।
মার্স ইনস্টিটিউটের বিজ্ঞানী ও গবেষণা নিবন্ধের শীর্ষ লেখক প্যাসকল লি বলেন, ‘আমরা যা খুঁজে পেয়েছি, তা বরফ নয়; তবে তা লবণের স্তূপ। এতে হিমবাহের বিশদ আকারগত বৈশিষ্ট্য লক্ষ করা যায়। এই লবণ হিমবাহের ওপর তৈরি হয়েছিল এবং নিচে বরফ সংরক্ষিত ছিল।’
বিজ্ঞানীদের ধারণা, এই হিমবাহ ছিল ৩ দশমিক ৭ মাইল দীর্ঘ ও আড়াই মাইল চওড়া। এর উচ্চতা ছিল ১ দশমিক ১ মাইল।
বিজ্ঞানীরা বলছেন, আগ্নেয়গিরির উপাদানের প্রমাণের ওপর ভিত্তি করে তারা হিমবাহ থাকার কথা বলছেন। আগ্নেয়গিরির নানা উপাদান ও পানির বিক্রিয়ায় লবণের স্তূপ তৈরি হতে পারে।
গবেষণা নিবন্ধের সহযোগী লেখক ও ম্যারিল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক সৌরভ শুভম বলেন, ‘মঙ্গল গ্রহের বিষুবরেখা অঞ্চলে আগ্নেয়গিরির সক্রিয়তার ইতিহাস রয়েছে। ফলে আগ্নেয়গিরির কিছু পদার্থ হিমবাহের বরফের সংস্পর্শে এসে রাসায়নিক বিক্রিয়ায় সালফেট লবণের শক্ত স্তর তৈরি করতে পারে।’
গবেষকদের ধারণা, ২৯০ কোটি বছর আগে মঙ্গল গ্রহের আমাজনীয় ভূতাত্ত্বিক যুগে হিমবাহের অস্তিত্ব ছিল। কিন্তু হিমবাহের সূক্ষ্ম ও বিশদ বৈশিষ্ট্য থেকে ওই অঞ্চল এখনো অনেকটাই নতুন বলেই মনে করছেন তারা।
মূলত মঙ্গলে একটা সময়ে বিশাল জলরাশি ছিল। শুধু জলরাশি বললে ঠিক বলা হবে না, মঙ্গলে ছিল বিশাল সমুদ্র। কারণ সেই সমুদ্রের গভীরতা ছিল হাজার ফুটেরও বেশি। সাম্প্রতিক গবেষণায় উঠে এসেছে এমনই চাঞ্চল্যকর তথ্য। অর্থাৎ গবেষণার পরে মঙ্গলকে আর রুক্ষ্ম, শুষ্ক গ্রহ বলে মনে করলে চলবে না।
মঙ্গল আদতে লাল গ্রহ। তপ্ত লোহার মতো মঙ্গলের রং। কিন্তু মঙ্গলের গড় তাপমাত্রা মাইনাস ৪০ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড। ফলে গরমের লেশমাত্র ভাগও নেই। হিমাঙ্কের তাপমাত্রার থেকে অনেক মঙ্গলের তাপমাত্রা। স্বাভাবিকভাবেই এই গ্রহে যা কিছু জলরাশি তা বরফ হয়ে থাকতে চায়। তার উপর বায়ুমণ্ডল খুব পাতলা এবং খুব ঠান্ডা হওয়ার কারণে বরফ ছাড়া আর কোনও জলের অস্তিত্ব নেই এখানে।
তবে সাম্প্রতিক একটি গবেষণায় কিন্তু ভিন্ন দাবি করা হয়েছে। মঙ্গলেও জলরাশি ছিল। ৪.৫ বিলিয়ন বছর আগে মঙ্গল গ্রহে ৩০০ মিটার অর্থাৎ প্রায় হাজার ফুট গভীর সমুদ্র ছিল। এই সংক্রান্ত গবেষণাপত্রটি প্রকাশিত হয়েছিল গত ১৭ নভেম্বর। তারপর থেকেই মঙ্গলে সমুদ্রের অস্বিত্ব নিয়ে চর্চা চলছে।
কোপেনহেগেন বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা মঙ্গলে সমুদ্রের উপস্থিতি নিয়ে একটি গবেষণা করেন। সেন্টার ফল স্টার অ্যান্ড প্ল্যানেট ফর্মেশনের প্রফেসর মার্টিন বিজারো একটি প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলেছেন, মঙ্গল গ্রহে বরফে ভরপুর গ্রহাণু বর্ষণ হয়। এই কাণ্ড গ্রহেৎ বিবর্তনের প্রথম ১০০ মিলিয়ন বছরে ঘটেছিল।
এই গবেষণায় আর একটি আকর্ষণীয় দিক যা উঠে এসেছে, তা হল- গ্রহাণুগুলি জৈব অণু বহন করে, যা জীবনের জন্য জৈবিকভাবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তবে বরফের গ্রহাণুগুলি যে কেবল লাল গ্রহে জল পরিবরণ করেছিল, এমনটা নয়, সেই সঙ্গে আবার অ্যামিনো অ্যাসিডের মতো বায়োলজিক্যাল উপাদানগুলিও বহন করেছিল। ফলে মঙ্গলে জলের সঙ্গে জীবনও ছিল।
সাম্প্রতির এই গবেষণায় বলা হয়েছে, মঙ্গল গ্রহের ওই প্রাচীন মহাসাগরগুলি কমপক্ষে ৩০০ মিটার গভীর ছিল। এক কিলোমিটার গভীরতা পর্যন্ত পৌঁছেছিল মহাসাগরগুলি, এমন প্রমাণও মেলে। গবেষকরা বলেন, মঙ্গলে তখন এতটাই জল ছিল যে, পৃথিবীতেও এতটা জল ছিল না। সেই সময়ে পৃথিবীর সঙ্গে অন্য একটি গ্রহের বিশাল সংঘর্ষ হয়েছিল বলেও গবেষণার উঠে আসে। ফলে তখন পৃথিবীতে নেমে এসেছিল বিপর্যয়।
এসডব্লিউএসএস/১১৩০
আপনার মতামত জানানঃ