চলমান ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রথম ৮ মাসে (জুলাই-ফেব্রুয়ারি) বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের প্রধান দুই গন্তব্য যুক্তরাষ্ট্র ও জার্মানিতে রপ্তানি কমেছে। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) পরিসংখ্যান অনুযায়ী, দুই দেশে কমার হার যথাক্রমে ২ দশমিক ৮৭ শতাংশ এবং ১ দশমিক শূন্য ৩ শতাংশ। মূলত নিটওয়্যার পণ্যের রপ্তানি কমার কারণে এই ধারা দেখা যাচ্ছে।
এ প্রসঙ্গে, বিজিএমইএর পরিচালক মহিউদ্দিন রুবেল বলেন, রপ্তানি কমার পেছনে যুক্তরাষ্ট্রে উচ্চ মূল্যস্ফীতিই দায়ী। এই ধারা অব্যাহত থাকলে সার্বিকভাবে রপ্তানি আয় কমে যেতে পারে বলে তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করেন।
একই সাথে তিনি বলেন, ‘তবে প্রথাগত বাজারের বাইরে রপ্তানির পরিমাণ বেড়ে যাওয়ায় তা যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি কমার নেতিবাচক প্রভাব কমিয়েছে। এটি একটি ভালো বিষয়।’
পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ২০২২-২৩ অর্থবছরের এই সময়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নে বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানি ছিল ১ হাজার ৫৭২ কোটি ডলার। আগের অর্থবছরের তুলনায় রপ্তানি বেড়েছে ১৪ দশমিক ২৯ শতাংশ।
ইইউ অঞ্চলের প্রধান বাজারগুলোর অন্যতম জার্মানিতে উল্লিখিত সময়ের মধ্যে পূর্ববর্তী বছরের তুলনায় রপ্তানি ১ দশমিক শূন্য ৩ শতাংশ হ্রাস পেয়ে ৪৬২ কোটি ডলারে পৌঁছেছে।
অন্যদিকে ফ্রান্স ও স্পেনে পোশাক রপ্তানি ছিল যথাক্রমে ১৮৯ কোটি ও ২৩৫ কোটি ডলার, পূর্ববর্তী বছরের তুলনায় প্রবৃদ্ধি যথাক্রমে ২৭ দশমিক ৬৫ এবং ১৮ দশমিক ৭৯ শতাংশ। তবে বুলগেরিয়া ও পোল্যান্ডে আগের বছরের তুলনায় ঋণাত্মক প্রবৃদ্ধি হয়েছে।
আলোচ্য সময়ে যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি পূর্ববর্তী বছরের তুলনায় ২ দশমিক ৮৭ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে। একই সময়ে কানাডা ও যুক্তরাজ্যে যথাক্রমে ২০ দশমিক শূন্য ৫ ও ১৪ দশমিক ৫২ শতাংশ ইতিবাচক প্রবৃদ্ধি হয়েছে।
২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রথম আট মাসে বাংলাদেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও কানাডায় রপ্তানি ছিল যথাক্রমে ৫৬০ কোটি, ৩৩৬ কোটি ও ৯৮ কোটি ডলার।
যুক্তরাষ্ট্র ও জার্মানিতে রপ্তানি কমাকে ‘চিন্তার কারণ’ হিসেবে উল্লেখ করছেন বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) পরিচালক মো. মহিউদ্দিন রুবেল।
তিনি বলেন, একক দেশ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র ও জার্মানি আমাদের সবচেয়ে বড় গন্তব্য। এ দেশগুলোতে রপ্তানি কমলে তা অবশ্যই আমাদের জন্য চিন্তার কারণ।
মহিউদ্দিন রুবেল আরো বলেন, ইউরোপের মার্কেট থেকে আমরা পূর্বাভাস পাচ্ছি যে রপ্তানি ঋণাত্মক হতে পারে। আমাদের সতর্ক থাকতে হবে। ইউরোপের সবচেয়ে বড় বাজার জার্মানিতে আমাদের রপ্তানি ঋণাত্মক। এখানে প্রবৃদ্ধি না হওয়াটা দুঃখের ব্যাপার। আমাদের দেখতে হবে কেন প্রবৃদ্ধি হচ্ছে না। আমাদের আরো জোর দিতে হবে। কারণ এ বাজারটি আমাদের জন্য গুরুত্ব বহন করে।
একই সময় অপ্রচলিত বাজারে বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানি ৩৫ দশমিক শূন্য ২ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে ৫৬৯ কোটি ডলারে পৌঁছেছে। এ বাজারগুলোর মধ্যে অন্যতম জাপান, অস্ট্রেলিয়া, ভারত ও দক্ষিণ কোরিয়ায় রপ্তানি ছিল যথাক্রমে ১০৭ কোটি, ৭৬ কোটি ৭৭ লাখ ৫০ হাজার, ৭৫ কোটি ৩৯ লাখ ২০ হাজার ও ৩৮ কোটি ৭৬ লাখ ৩০ হাজার ডলার।
চলতি অর্থবছরের জানুয়ারি পর্যন্ত পোশাক রপ্তানি থেকে মোট আয় আগের বছরের তুলনায় ১৪ শতাংশ বেড়ে ২৭ দশমিক ৪১ বিলিয়ন ডলার হয়েছে। প্রথাগত বাজারের বাইরে নতুন বাজারে ভালো ফল পাওয়ায় এ খাতের আয় বৃদ্ধি পেয়েছে।
রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ অর্থবছরের জুলাই-জানুয়ারি মাসের মাঝে ইউরোপীয় ইউনিয়নে (ইইউ) পোশাক রপ্তানি ১৫ শতাংশ বেড়ে ১৩ দশমিক ৭৩ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে, যা আগের বছরের একই সময়ে ছিল ১১ দশমিক ৯৪ বিলিয়ন ডলার।
ইউরোপের বৃহত্তম বাজার হিসেবে জার্মানি ৪ দশমিক শূন্য ৬ বিলিয়ন ডলার আয় করেছে। আগের বছরের তুলনায় এটি শূন্য দশমিক ৮৩ শতাংশ বেশি। তবে ইউরোপীয় ইউনিয়নের অন্যান্য দেশে রপ্তানির প্রবৃদ্ধি আরও বেশি হয়েছে।
প্রথাগত বাজার না হওয়া সত্ত্বেও এ বছর জাপানে রপ্তানির পরিমাণ আগের বছরের তুলনায় প্রায় ৪৬ শতাংশ বেড়ে ৯২০ মিলিয়ন ডলার হয়েছে। এ ধরনের অন্যান্য বাজারের মাঝে আছে মালয়েশিয়া, ব্রাজিল ও ভারত। এসব দেশে যথাক্রমে ৯২ দশমিক ৭ শতাংশ, ৬৪ দশমিক ১ শতাংশ এবং ৫৮ শতাংশ রপ্তানি বেড়েছে।
এসডব্লিউএসএস/১৪৪৫
আপনার মতামত জানানঃ