অস্ত্রের ব্যবহার বেড়ে যাওয়ায় সারা দেশে সাঁড়াশি অভিযান শুরু করতে যাচ্ছে পুলিশ। পুলিশ সদর দপ্তর এই অভিযান চালানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তবে ওই অভিযানের দিনক্ষণ এখনো ঠিক হয়নি।
সম্প্রতি মহানগর থেকে গ্রাম পর্যন্ত বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে আসছে বিএনপি। এ ছাড়া ৪ মার্চ সব মহানগরের থানা পর্যায়ে পদযাত্রার নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করেছে বিএনপি।
দলটির পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, এমন কর্মসূচি অব্যাহত রাখবে তারা। এই পরিস্থিতিতে সাঁড়াশি অভিযানের উদ্যোগ নিতে যাচ্ছে পুলিশ। রাজনৈতিক মহলে আলোচনা আছে, বিএনপির আন্দোলন-কর্মসূচি দমাতে পুলিশের সাঁড়াশি অভিযান শুরু হচ্ছে।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি সূত্রও একই কথা বলেছে। তবে পুলিশ সদর দপ্তর বলেছে, ২৬ মার্চ মহান স্বাধীনতা দিবস সামনে রেখে অস্ত্র উদ্ধারে এই বিশেষ অভিযান চালানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
গত ২৪ ফেব্রুয়ারি নরসিংদীর শিবপুরে উপজেলা চেয়ারম্যান হারুনুর রশিদ খানকে বাড়িতে ঢুকে গুলি করা হয়। দলীয় কোন্দলের ওই গুলির ঘটনা বলে ধারণা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর।
এর আগে ১৯ ফেব্রুয়ারি সিরাজগঞ্জের তাড়াশের দেশীগ্রাম ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আবদুল কুদ্দুস সরকারকে গুলি করে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। পুলিশসহ একাধিক সূত্র জানিয়েছে, রাজনৈতিক কোন্দলের জের ধরে তাঁকে হত্যা করা হয়।
এই পরিস্থিতিতে অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারে বড় অভিযান চালাতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে নির্দেশনা দেয় আইনশৃঙ্খলাসংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি।
সম্প্রতি অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার করে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেছিলেন, একটি চক্র ভুয়া লাইসেন্স করে অবৈধ অস্ত্র নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে।
চক্রটি দেশব্যাপী এই জালিয়াতি ছড়িয়ে দিয়েছে। র্যাব বিপুলসংখ্যক জালিয়াতির এসব লাইসেন্স জব্দ করেছে। উদ্ধার করেছে অবৈধ অস্ত্র।
বুধবার ঢাকার বাইরের একাধিক রেঞ্জের উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি) ও পুলিশ সুপারের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তাঁরা জানান, পুলিশ সদর দপ্তর থেকে বিশেষ বা সাঁড়াশি অভিযান চালানোর সিদ্ধান্তের চিঠি বা নির্দেশ তাঁরা এখনো পাননি।
বুধবার এ ব্যাপারে জানতে চাইলে পুলিশ সদর দপ্তরের ডিআইজি (অপারেশনস) মো. হায়দার আলী খান বলেন, অস্ত্র উদ্ধার পুলিশের নিয়মিত কাজের অংশ। কোনো ঘটনা বা উপলক্ষ সামনে রেখে পুলিশ দেশব্যাপী অস্ত্র উদ্ধারে বিশেষ বা সাঁড়াশি অভিযান চালায়। ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবস সামনে রেখে ঠিক এমনই অভিযান চালানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে পুলিশ সদর দপ্তর।
তবে পুলিশের এই অভিযানে আতঙ্ক ছড়াতে পারে বিএনপি নেতাদের মধ্যে। কারণ পুলিশের বিগত এমন অভিযানগুলোতে গ্রেপ্তারের খড়গ নেমে এসেছে বিএনপি নেতাদের উপর। বিভিন্ন সময়ে রাজধানীসহ সারাদেশে বিশেষ অভিযানে পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার এড়াতে ঘরছাড়া হয়েছে তারা। বিভিন্ন আবাসিক হোটেল, মেস ও বিএনপির নেতাকর্মীদের বাসাবাড়িতে ব্লক রেইড দিয়ে অভিযান চালানো হয়েছে।
এই ধরনের ঘটনা ঘটেছে গত ১০ ডিসেম্বরকে ঘিরে। এ প্রসঙ্গে ওই সময় নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন, বিএনপির ১০ ডিসেম্বরের ঢাকার সমাবেশ ঘিরে বড় ধরনের নাশকতার আশঙ্কা রয়েছে। জ্বালাও-পোড়াও ভাঙচুরসহ যে কোনো ধরনের বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি থেকে নগরবাসীর জানমাল রক্ষায় তারা অভিযান শুরু করেছেন। বিএনপি নেতা আমান উল্লাহ আমান ও শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানিসহ দলটির কয়েকজন সিনিয়র নেতাও নজরদারিতে রয়েছেন বলে গোয়েন্দা সূত্র জানায়।
এদিকে বিএনপি নেতারা সে সময় বলেছেন, আগামী ১০ ডিসেম্বর ঢাকায় বিএনপির গণসমাবেশ ঠেকাতে ইতোমধ্যেই তাদের নেতাকর্মীদের গণগ্রেপ্তার শুরু করেছে পুলিশ। এর মধ্যে ঢাকাতেই সবচেয়ে বেশি নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। নেতাকর্মীদের বাসায় পুলিশ হানা দিচ্ছে। দলীয় নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার ও আটকের প্রসঙ্গে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর গতকাল দুপুরে দাবি করেছেন, এ পর্যন্ত প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, মোট গ্রেপ্তার ৩০ নভেম্বর রাত থেকে ৩ ডিসেম্বর রাত ৮টা পর্যন্ত ৭৮৩ (অন্তত পক্ষে) জন। ৩ ডিসেম্বর রাত ৮টা থেকে রবিবার ৪ ডিসেম্বর দুপুর পর্যন্ত ২৪৮ (অন্তত পক্ষে) জন। গত ৩০ নভেম্বর রাত থেকে রবিবার ৪ ডিসেম্বর দুপুর পর্যন্ত (৪ দিনে) ১০৩১ (অন্তত পক্ষে) জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, ওই সময় রাজধানীজুড়ে ব্লক রেইড প্রসঙ্গে পুলিশের দাবি-ওয়ারেন্টের আসামি, মাদক বিক্রেতা, জঙ্গি ও সন্ত্রাসীদের ধরতে ওই অভিযান চালানো হয়। জানানো হয়, এ অভিযান চলতে থাকবে সামনের দিনগুলোতেও। এটিকে রুটিন ওয়ার্ক দাবি করেছিলেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) গণমাধ্যম শাখার উপকমিশনার (ডিসি) ফারুক হোসেন।
সে সময় তিনি জানান, ‘কোনো রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে নয়, কেবল যাদের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট তথ্য-প্রমাণ রয়েছে, তাদেরই গ্রেপ্তার করা হয়েছে। রাজধানীবাসীর জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পুলিশের যা যা করণীয়, সবই করবে বলেও উল্লেখ করেন পুলিশের এই কর্মকর্তা।
বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার গুলশানের বাড়ির সামনে তল্লাশি চৌকি বসানোর বিষয়ে ডিসি ফারুক বলেন, বিএনপি চেয়ারপারসনের বাসভবনের সামনে বাড়তি যে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে, তা আমাদের নিয়মিত ডিউটির অংশ। সেখানে অতিরিক্ত কোনো কিছুই নয়, মূলত সার্বিক নিরাপত্তা বিবেচনায় ফোর্স মোতায়েন করেছি।
এসডব্লিউএসএস/১৬০০
আপনার মতামত জানানঃ