সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি : করোনাভাইরাসের কারণ দেখিয়ে ছাতক-সিলেট রেলপথে ট্রেন চলাচল বন্ধ রয়েছে দীর্ঘ ৯ মাস ধরে। স্বল্প ভাড়ায় সহজেই ট্রেনে ছাতক থেকে সিলেট ও সিলেট থেকে ছাতক যাতয়াত করতে সুবিধা হত সাধারণ যাত্রীদের। বন্ধ থাকার ফলে রেলপথে যাতায়াতকারী মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্ত শ্রেনীর যাত্রীরা চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন। এছাড়াও ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকায় বেশী ক্ষতিগ্রস্থের শিকার এই অঞ্চলের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা। ট্রেন চলাচল বন্ধে বেকার হয়ে পড়েছেন অনেকেই। করোনা মহামারীতে সারাদেশে মানুষের জীবনযাত্রা স্বাভাবিক থাকলেও অজানা কারণে করোনাভাইরাসের কারণ দেখিয়ে বন্ধ রাখা হয়েছে বাংলাদেশ রেলওয়ের গুরুত্বপূর্ণ এই রুটটি।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত ২৩ মার্চ বিকেলে ছাতক থেকে সিলেট ট্রেন ছেড়ে যাওয়ার পর আর ফিরে আসেনি। এখনও বন্ধ রয়েছে ট্রেন চলাচল। কবে থেকে আবারও নিয়মিতভাবে ছাতক-সিলেট পথে ট্রেন চালু করা হবে এ বিষয়ে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের কর্মকর্তাগন কেউই পরিস্কার করে কিছু বলতে পারছেন না। ছাতক বাজার রেলষ্টেশনের জনবল সংকট নিরসন ও দ্রুত ট্রেন চলাচলের দাবী জানিয়েছেন ব্যবসায়ী ও স্থানীয় এলাকাবাসী। শিল্প নগরী ছাতকে ১৯৫৪ সালে ৩৫ কিলোমিটার দীর্ঘ রেলপথটি স্থাপন করা হয়। বৃট্রিশ আমল থেকেই দেশ-বিদেশেরমধ্যে ব্যবসা-বানিজ্যের কেন্দ্র হিসাবে পরিচিতি সুনামগঞ্জের ছাতক উপজেলা। ১৯৮৫ সাল পর্যন্ত এই রুটে বাংলাদেশ রেলওয়ের ট্রেন যাত্রীদের সেবার মান ভাল ছিল। রেলওয়ে সেবা ও রাজস্ব আদায়ের ক্ষেত্রে এক সময় পুরস্কার পাওয়ার রেকর্ড রয়েছে এই ষ্টেশনের। ট্রেন চালুর পর ছাতক বাজার রেল ষ্ট্রেশন থেকে ৪টি পণ্য পরিবহন ট্রেন ও প্রতিদিন ৪বেলা চলাচল করতো। এছাড়া মালামাল পরিবহনে ৪টি ট্রেনে সিমেন্ট, জিপসাম, ভাঙ্গা পাথর, চুনাপাথর ও কমলাসহ বিভিন্ন ধরনের কাঁচামাল কম খরচে পরিবহন করা হতো।
আরও জানাযায়, ট্রেন চালুর শুরুর দিকে ছাতক থেকে সিলেটে যেতে ভাড়া ছিল ৪আনা। বর্তমানে ছাতক থেকে সিলেটের জনপ্রতি যাত্রী ভাড়া মাত্র ১০টাকা। ছাতক থেকে এখন ট্রেনে সিলেটে পৌছতে সময় লাগছে সর্বোচ্চ একঘন্টা ১০মিনিট। সিলেট শহর থেকে প্রতিদিনই ট্রেনে করে ছাতক শহরে অফিস করতেন প্রাইভেট একটি ব্যাংকের কর্মকর্তা মোঃ শহিদুল ইসলাম। তিনি বলেন, ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকায় বড় দূর্ভোগ নিয়ে প্রতিদিন প্রায় ২শ’ টাকা ভাড়া দিয়ে এখন সিএনজি চালিত অটোরিক্সায় ছাতকে নিয়মিতই যাতায়াত করতে হচ্ছে।
ছাতকের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী সোনা মিয়া বলেন, সিলেট পাইকারী আড়ত থেকে পিয়াজ, রসুন, আদাসহ নানা কাঁচামাল কিইন্না ট্রেনে করে ছাতক আইতাম। পরে বাজারে কাঁধে করে হাইট্রা মাল বেছতাম। মোটামুটি প্রতিদিন এই কাঁচামাল বেইচ্ছা যে লাভ পাইতাম আমার সংসার চলত। কিন্তু ৯ মাস ট্রেইন বন্ধের কারনে আমার ব্যবসা নাই। এখন আমি দিন মজুরের কাজ করে খাই।
ছাতকের ব্যবসায়ী রমিজ উদ্দিন, আজহার আলী, নুর ইসলামসহ আরো অনেকেই বলেন, কম খরচে নিরাপদে বিভিন্ন মালামাল ট্রেনে পরিবহণ করতে পারতাম। কিন্তু ট্রেন বন্ধ থাকার কারণে বাস ও সিএনজি দিয়ে বেশি টাকা ব্যয় করে মালামাল পরিবহন করতে হচ্ছে। যার ফলে আমরা ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরাসহ দরিদ্র ও মধ্যবিত্ত যাত্রীরা ভীষণ কষ্টের মধ্যে পড়েছি।
পৌরসভা এলাকার বাসিন্দা ব্যবসায়ী ও রাজনীতিবিদ ডঃ আফসার উদ্দিন বলেন, অল্প খরচে ও নিরাপদে সিলেট শহরে যাতায়াতে ট্রেন চালুর পাশাপাশি রেলপথের জনবল বৃদ্ধি করে রেললাইনের সংস্কার, ট্রেনের বগিবৃদ্ধি ও ষ্টেশনের আধুনিকায়ন করা হলে ট্রেনের যাত্রীর অভাব হবে না। এখন বন্ধ থাকার দূর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে সবাইকে। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি কামনা করছি।
মহামারী করোনা ভাইরাসের কারণে দেশের লোকাল ট্রেন বন্ধ রয়েছে বলে জানান বাংলাদেশ রেলওয়ের চট্টগ্রাম পূর্ব অঞ্চলের তত্ত্বাবধায়ক এম সালাহ উদ্দিন। তিনি বলেন, ছাতক-সিলেট পথে ট্রেন আপাতত বন্ধ। তবে পরিবেশ পরিস্থিতি বিবেচনা করে উপরস্থ কর্মকর্তাদের নিদের্শ মোতাবেক পর্যায়ক্রমে লোকাল ট্রেন চালু করা হবে।
আপনার মতামত জানানঃ