তুরস্ক ও সিরিয়ায় আঘাত হানা শক্তিশালী ভূমিকম্পে নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৬৪১ জনে দাঁড়িয়েছে। আহত হয়েছে দুই হাজারের বেশি। অনেকে এখনো ধ্বংসস্তূপে আটকা পড়ে রয়েছে। স্থানীয় সময় সোমবার ভোরে স্থানীয় সময় ভোর ৪টা ১৭ মিনিটে শুরু হওয়া ভূমিকম্পটির উৎপত্তি গাজিয়ানতেপ শহরের কাছে ভূপৃষ্ঠের ১৭ দশমিক ৯ কিলোমিটার (১১ মাইল) গভীরে। এ সময় অনেক মানুষ ঘুমন্ত ছিলেন। ভবনের ধ্বংসস্তূপে অনেকে আটকা পড়েছেন। অনেকে মারা গেছেন। সাইপ্রাস ও মিশরেও ভূমিকম্প অনুভূত হয়েছে। খবর এপি।
তুরস্কের ভাইস প্রেসিডেন্ট ফুয়াত ওক্তাই জানিয়েছেন, সেখানে এখন পর্যন্ত ২৮৪ জনের মৃত্যুর বিষয়ে নিশ্চিত হয়েছেন তারা। আহত হয়েছেন আরও ২ হাজার ৩২৩ জন। তুরস্কের কাহরামানমারাস প্রদেশে ৭০, ওসমানিয়ে ২০, মালাটিয়ায় অন্তত ২৩, সানলিউরফার ১৮, দিয়ারবাকিরে ১৪ এবং আদিয়ামানে ১৩ জনের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত হয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি।
সিরিয়ায় স্বাস্থ্যমন্ত্রীর সহযোগী আহমেদ দামিরেয়ি বলেছেন, ভূমিকম্পে মৃতের সংখ্যা বেড়ে ২৪৫ জন হয়েছে এবং ৬৩৯ জন আহত হয়েছেন। হতাহতদের অধিকাংশই আলেপ্পো, লাতাকিয়া, হামা ও তারতুস প্রদেশের বাসিন্দা বলে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে বলা হয়েছে।
সিরিয়ার বিদ্রোহীদের নিয়ন্ত্রিত এলাকাগুলোতে আরো অন্ত ১২০ জন নিহত হয়েছেন বলে খবর পাওয়া যাচ্ছে। এ তথ্য নিশ্চিত হলে সিরিয়ায় নিহতের সংখ্যা তিনশর কাছাকাছি পৌঁছে যাবে। বিদ্রোহী নিয়ন্ত্রিত এলাকাগুলো তুরস্কের সীমান্তবর্তী হওয়ায় সেখানে নিহতের সংখ্যা আরও অনেক বেশি হতে পারে।
মার্কিন ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থা জানায়, স্থানীয় সময় আজ সোমবার ভোর ৪টা ১৭ মিনিটে সিরিয়ার সীমান্তবর্তী তুরস্কের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে ভূমিকম্পটি আঘাত হানে। রিখটার স্কেলে ভূমিকম্পটির মাত্রা ছিল ৭ দশমিক ৮। ভূমিকম্পটি যখন আঘাত হানে, তখন বেশির ভাগ মানুষ ঘুমন্ত ছিল।
তুরস্কের ভাইস প্রেসিডেন্ট ফুয়াত ওকতায় জানায়, এখন পর্যন্ত দেশটিতে ২৮৪ ব্যক্তি নিহত হয়েছে। আহত হয়েছে দুই হাজার তিন শর বেশি মানুষ।
ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত তুরস্কের বিভিন্ন শহরে অনুসন্ধান ও উদ্ধারকাজ অব্যাহত রয়েছে বলে জানান দেশটির ভাইস প্রেসিডেন্ট। তবে শীতকালীন তুষারঝড়ের কারণে উদ্ধারকাজ ব্যাহত হচ্ছে। তুষারে অনেক সড়ক ঢেকে গেছে।
ভূমিকম্পে তুরস্কের প্রতিবেশী সিরিয়ায় অন্তত ২৪৫ ব্যক্তি নিহত হয়েছে। দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, আলেপ্পো, লাতাকিয়া, হামা ও তারতুস প্রদেশে ২৩৭ জন নিহত হয়েছে। আহত ছয় শতাধিক। এগুলো সিরিয়ার সরকার-নিয়ন্ত্রত এলাকা। আর তুর্কিপন্থী গোষ্ঠী নিয়ন্ত্রিত দেশটির উত্তরাঞ্চলীয় এলাকায় অন্তত আটজন নিহত হওয়ার তথ্য দিয়েছে স্থানীয় একটি হাসপাতাল।
ভূমিকম্পে উভয় দেশে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। অনেক ভবন ধসে পড়েছে। ধসে পড়া ভবনের ভেতরে অনেক মানুষ আটকে থাকতে পারেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। ফলে হতাহতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
রাজধানী আঙ্কারাসহ তুরস্কের অন্যান্য শহরে এই ভূমিকম্প অনুভূত হয়। সিরিয়াসহ তুরস্কের প্রতিবেশী অন্য দেশেও ভূকম্পন অনুভূত হয়।
৮৪ বছর পর এমন ভূমিকম্প
প্রায় ৮৪ বছর পর আজ সোমবার তুরস্কে আবারও এমন ভয়াবহ ভূমিকম্প আঘাত হেনেছে। আজ ভোরে তুরস্ক ও সিরিয়ায় একযোগে রিখটার স্কেলে ভূমিকম্পটির মাত্রা ছিল ৭ দশমিক ৮।
ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডনের ভূকম্পনবিদ স্টিফেন হিকস বলেন, এর আগে ১৯৩৯ সালের ডিসেম্বরে তুরস্কের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে ৭ দশমিক ৮ মাত্রার ভূমিকম্প হয়েছিল। ওই সময় ৩০ হাজার মানুষের প্রাণহাণি ঘটে।
সিরিয়ার জাতীয় ভূকম্পন কেন্দ্রের প্রধান রায়েদ আহমেদ রাষ্ট্রীয় বেতার স্টেশনকে বলেন, ‘আমাদের এই কেন্দ্রের ইতিহাসে এটি সবচেয়ে বড় ভূমিকম্প।’ ১৯৯৫ সালে কেন্দ্রটি প্রতিষ্ঠিত হয়।
বেঁচে যাওয়া তরুণ তুর্কির বর্ণনা
তুরস্কের মালত্য শহরে বাস করেন ২৫ বছর বয়সী ওজগুল কনাকচি। দেশটিতে আজ সোমবার ভোরে আঘাত হানা ভূমিকম্পের প্রত্যক্ষদর্শী তিনি। ভূমিকম্পে অক্ষত ওজগুল বলেন, চোখের সামনে ভবনের জানালাগুলো সশব্দে চূর্ণবিচূর্ণ হতে দেখেছেন।
এ ঘটনার পর ২০২০ সালের জানুয়ারিতে তুরস্কের পূর্বাঞ্চলীয় এলাজিগ শহরে ৬ দশমিক ৭ মাত্রার ভূমিকম্পে ৪১ জন নিহত হয়েছিল। সে সময় আহত হয়েছিল এক হাজার ছয় শতাধিক মানুষ।
ভূমিকম্পে অক্ষত আছেন ওজগুল। ভূমিকম্পের সময় তিনি ও তার ভাই ঘুমাচ্ছিলেন। তিনি বলেন, ‘আমরা একে অপরের দিকে তাকিয়ে বলি, ‘তুমি কি কাঁপছ?’
ওজগুল আরও বলেন, ‘আমি ল্যাম্পের (বাতি) দিকে তাকালাম। মনে হচ্ছিল ল্যাম্পটি ভেঙে যাচ্ছে। আমরা আমাদের তিন বছর বয়সী ভাতিজাকে সঙ্গে নিয়ে লাফিয়ে বেরিয়ে পড়লাম।’
ওজগুল বলেন, ‘আমাদের চোখের সামনে আফটার শকে একটি ভবনের জানালাগুলো ভেঙে চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে যায়।’
ভূমিকম্পে ওজগুলদের ভবনটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তাদের আশপাশের পাঁচটি ভবন ধসে গেছে। তিনি বলেন, অনুসন্ধান ও উদ্ধার অভিযান অব্যাহত রয়েছে। তবে এখন খুব ঠান্ডা রয়েছে। তুষারপাত হচ্ছে। এটা আরেক উদ্বেগের কারণ হয়ে উঠেছে।
ওজগুল বলেন, সব লোক এখন রাস্তায় অবস্থান করছেন। তারা কী করবে, তা নিয়ে বিভ্রান্ত।
ভূমিকম্পের ঘটনায় জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছে তুরস্ক। ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকা পড়া লোকজনকে উদ্ধারে জোর তৎপরতা চলছে।
এসডব্লিউএসএস/২০০৫
আপনার মতামত জানানঃ