অবৈধ দোকানকে বৈধ করার নামে শত কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র সাঈদ খোকনসহ সাতজনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। আজ মঙ্গলবার(২৯ ডিসেম্বর) ঢাকা মহানগর হাকিম আশেক ইমামের আদালতে মার্কেটের সভাপতি দেলোয়ার হোসেন এই মামলা করেন।
মামলার অপর আসামিরা হলেন– সাবেক প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা ইউসুফ আলী সরদার, উপসহকারী প্রকৌশলী মাজেদ, কামরুল হাসান, হেলেনা আক্তার, আতিকুর রহমান স্বপন ও ওয়ালিদ।
মামলার অভিযোগে বলা হয়, আসামিরা পরস্পর যোগসাজসে ফুলবাড়িয়া সিটি সুপার মার্কেট-২ এর ব্লক-এ,বি সি মূল বিল্ডিং এর মুল নকশাবহির্ভূত অংশ হিসাবে স্থাপনা তৈরি করে দোকান বরাদ্দ দেওয়ার ঘোষণা দেয়। ওই ঘোষণার পর ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে যোগাযোগ করেন। তখন আসামিরা তাদের টাকা জমা দিতে বলে। আর যাদের নামে দোকান বরাদ্দ আছে তাদের ভুল বুঝিয়ে ভয়-ভীতি দেখিয়ে ফুলবাড়িয়া সিটি সুপার মার্কেট-২ এর মূল নকশা বহির্ভূত এক্সটেনশন ব্লক-এ, বি, সি-তে দোকান না নিলে মূল মার্কেটের দোকান মালিকদের দোকানের বরাদ্দ বাতিল ও তালা লাগিয়ে দেওয়ার হুমকি দেয়। এ পরিপ্রেক্ষিতে তারা এক্সটেনশন ব্লকে দোকান নিতে বাধ্য হন।
২০১৮ সালে দক্ষিণ সিটির সাবেক মেয়র সাঈদ খোকনের শেষ সময়ে গুলিস্তান ফুলবাড়ীয়া এলাকার ১৬টি মার্কেটে তালা ঝুলিয়ে দিয়েছিলেন তার লোকজন। তখন অবৈধ দোকানকে বৈধতা দেয়ার কথা বলে প্রতি দোকান থেকে লাখ লাখ টাকা উত্তোলন করা হয়। অভিযোগ রয়েছে, কেবল ফুলবাড়ীয়া-২ মার্কেট থেকেই ২০১৮ সালে ২১ কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়া হয়।
সাবেক মেয়রকে টাকা দেয়ার প্রমাণ রাখতে দেলোয়ার উত্তরা ব্যাংকের ফুলবাড়ীয়া ব্রাঞ্চ এক্সিম ব্যাংকের পল্টন ব্রাঞ্চ, যমুনা ব্যাংক, সাউথইস্ট ব্যাংকের করপোরেট ব্রাঞ্চের একাউন্ট ব্যবহার করেছেন। এসব ব্যাংকের ৪৮টি চেক ট্রানজেকশনের লিস্ট আছে বলে দেলোয়ার দাবি করেন। এছাড়াও রয়েছে কোটি কোটি টাকা প্রদানের পে-অর্ডারসহ নগদ টাকা দেয়ার একাধিক প্রমাণ। কেবল ফুলবাড়ীয়া-২ মার্কেট থেকে ২১ কোটি টাকা তুলেছে মালিক সমিতি। আর ওই টাকা তৎকালীন মেয়র সাঈদ খোকনকে দেয়ার জন্য জমা দেন ফুলবাড়ীয়া মার্কেট-২ এর সভাপতি দেলোয়ার হোসেন দেলুর অ্যাকাউন্টে।
জানা গেছে, ডিএসসিসির মালিকানাধীন ওই মার্কেটটির তিনটি ব্লকে নকশাবহির্ভূত ৯১১টি দোকান ছিল। এসব দোকান উচ্ছেদে গত ৮ ডিসেম্বর অভিযান শুরু করেন ডিএসসিসির কর্মকর্তারা। ওই দিন কয়েক দফায় দোকান মালিক ও কর্মচারীদের সঙ্গে সংঘর্ষের পর শুরু হয় উচ্ছেদ অভিযান। অভিযানে প্রায় ৩০০ দোকান উচ্ছেদ করা হয়।
ভুক্তভোগী ব্যবসায়ীরা জানান, দোকানের বৈধতা পেতে সাঈদ খোকনের মেয়র থাকার সময় দোকানপ্রতি ৫ থেকে ১০ লাখ টাকা দিয়েছেন তারা। অনেক ব্যবসায়ীর অভিযোগ, টাকা দেওয়ার পরও সে সময় দোকানের বৈধতা পাননি তারা।
তারা আরও জানান, দোকান মালিক সমিতির সভাপতি দেলোয়ার হোসেন দেলু প্রায় দুই যুগ ধরে ওই তিনটি প্লাজা বা মার্কেট এককভাবে নিয়ন্ত্রণ করেছেন। তার নেতৃত্বেই অবৈধ এসব দোকান তৈরি করা হয়েছিল। দোকান মালিক সভাপতি দেলোয়ার হোসেন দেলু এবার দোকান বরাদ্দে অনিয়মের অভিযোগ তুলে সাবেক মেয়র সাঈদ খোকনসহ সাত জনের বিরুদ্ধে মামলা করলেন।
এদিকে এসব দোকানকে বৈধ বলছেন দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র সাঈদ খোকন। তিনি এই উচ্ছেদ অভিযান অবৈধ বলে দাবি করছেন। সাঈদ খোকন জানান, বোর্ড সভার মাধ্যমে আমরা এসব দোকানকে বৈধতা দিয়েছি। দেলোয়ার হোসেন দেলুর দোকান বিক্রি ও বৈধ করার কথা বলে নেওয়া টাকা সিটি করপোরেশন পেয়েছে কিনা, এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, সিটি করোপরেশেন ২০১২ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত ভাড়া আদায় করেছে। সব কিছু বিবেচনা করেই এসব বৈধতা দেওয়া হয়েছে। সব কিছুর কাগজপত্র আছে।
এ বিষয়ে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের বর্তমান মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস জানান, এসব দোকান অবৈধ। যারা অবৈধভাবে দখল করে দোকান তুলেছেন তারা কাকে টাকা দিয়েছেন সেটি আমাদের দেখার বিষয় নয়। যাদের অনুমোদন আছে তারাই এখানে ব্যবসা করবেন। আমরা সেটি নিশ্চিত করব। পর্যায়ক্রমে আমরা সিটি করপোরেশনের সব মার্কেট থেকে অবৈধভাবে গড়ে তোলা সব দোকান উচ্ছেদ করব।
এসডাব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৭০১
আপনার মতামত জানানঃ