ক্রিকেটের মাঠে ‘রাজত্ব’ করার সময় ‘প্লে বয়’ তকমা ছিল তার। কিন্তু তার পরেও পাক রাজনীতির ‘কঠিন পিচে’ খেলতে নেমে সফল হয়েছেন ইমরান খান। নিজের দল গড়ে ভোটে জিতে প্রধানমন্ত্রী হয়ে বদলে দিয়েছিলেন পাকিস্তানের পাঁচ দশকের পুরনো রাজনৈতিক সমীকরণ।
ঘটনাচক্রে গত এপ্রিলে প্রধানমন্ত্রিত্ব হারানোর আগে তৎকালীন পাক সেনাপ্রধান কামার জাভেদ বাজওয়ার সঙ্গে শেষ সাক্ষাৎকারে ইমরানকে শুনতে হয়েছিলে সেই পুরনো অভিযোগ। সম্প্রতি একটি সাক্ষাৎকারে ইমরান নিজেই সে কথা জানিয়েছেন। ইমরানের দাবি, জেনারেল বাজওয়ার অভিযোগের প্রেক্ষিতে তিনি বলেছিলেন— ‘‘হ্যাঁ আমি প্লে বয় ছিলাম।’’
প্রসঙ্গত, এক নারীর সাথে ফোনে অন্তরঙ্গ কথোপকথনের অভিযোগে সম্প্রতি ফের বিতর্কে পড়েছেন ইমরান। দেশটির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রানা সানাউল্লাহ জানিয়েছেন, ফাঁস হওয়া এই অডিওগুলো ইমরানেরই।
প্রসঙ্গত, নিজের লাহোরের বাসভবনে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপচারিতায় তার নামে ছড়িয়ে পড়া তিনটি ‘নোংরা অডিও’ নিয়ে বলতে গিয়ে আলোচ্য প্রসঙ্গে মূলত কথা বলেন ইমরান।
এ সময় তিনি বলেন, “এই ধরনের নোংরা অডিও ও ভিডিওর মাধ্যমে আমরা আমাদের যুবসমাজকে কী বার্তা দিচ্ছি।”
ক্ষমতাসীন প্রভাবশালী, যারা এ ধরনের অডিও রেকর্ড করছে তাদেরকে পরোক্ষভাবে দোষারোপ করে ইমরান এমনটাই বলেছেন বলে জানিয়েছে প্রেস ট্রাস্ট অব ইন্ডিয়া (পিটিআই)।
সম্প্রতি ফাঁস হওয়া তিনটি অডিও ক্লিপ পাকিস্তানের রাজনৈতিক মহলে আলোড়ন তুলেছে। ওই তিনটি ক্লিপে ইমরানের ‘ফোন সেক্সের’ প্রমাণ আছে বলে বলছে বিরোধীরা। ইমরানের দল তেহরিক-ই-ইনসাফ ওই তিনটি ক্লিপকে জাল বলে অভিহিত করেছে।
তবে এখনকার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রানা সানাউল্লাহ দাবি করেছেন, তিনটি ক্লিপই আসল এবং এ ধরনের ভিডিও ক্লিপও সামনে প্রকাশ্যে আসবে।
এ প্রসঙ্গে ইমরান খান বলেন, বাজওয়া আমার পিঠে ছুরিকাঘাত করেছে। আমাকে ক্ষমতা থেকে দূরে রাখতে সেনাবাহিনীতে তার লোকজনেরা এখনো কাজ করছে। পাকিস্তানের সংবাদমাধ্যম জিও নিউজের প্রতিবেদন অনুসারে, পাকিস্তানের সাবেক সেনাপ্রধান জেনারেল (অব.) কমর জাভেদ বাজওয়ার সঙ্গে তার শেষ বৈঠকের কথা স্মরণ করে এ কথা বলেন ইমরান খান।
সাংবাদিকদের সঙ্গে আলোচনার একপর্যায়ে ইমরান খান বলেন, ‘জেনারেল বাজওয়া আমাকে প্লেবয় বলে উল্লেখ করেছিলেন। তার মন্তব্যের জবাবে আমি তাকে বলেছিলাম, ‘হ্যাঁ, আমি প্লেবয় ছিলাম।’
তবে ইমরান খান ও কমর জাভেদ বাজওয়ার মধ্যে কবে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছিল সে বিষয়ে তিনি কিছু জানাননি।
পিটিআই প্রধান আরও বলেন, ‘সাবেক সেনাপ্রধান বাজওয়া আমাদের পেছন থেকে ছুরি মেরেছিলেন এবং সহানুভূতিও দেখিয়েছিলেন।’ ইমরান খান দাবি করেন, বাজওয়ার নিয়োগ করা ব্যক্তিরা এখনও রাষ্ট্রীয় বিষয়ে হস্তক্ষেপ করার কাজ করে যাচ্ছে। অবশ্য আগেও একাধিকবার এমন অভিযোগ করেছেন সাবেক পাক প্রধানমন্ত্রী।
ইমরান খান অভিযোগ করে বলেন, তার প্রধানমন্ত্রিত্বের সময় জেনারেল বাজওয়াই ছিলেন ক্ষমতার মূল চালিকাশক্তি। পাকিস্তানের জাতীয় দুর্নীতি দমন সংস্থা (এনএবি) নিয়ন্ত্রণ করতেন বাজওয়া। তার সিদ্ধান্তেই ঠিক হতো কোন কোন রাজনীতিবিদকে কারাগারে পাঠানো হবে। এর আগে ইমরান খান দাবি করেছিলেন, পাকিস্তানে এখনও বাজওয়ার রেখে যাওয়া ‘সেট-আপ’ সক্রিয় রয়েছে।
পাকিস্তানের সাবেক এ প্রধানমন্ত্রী সম্প্রতি বলেছেন, ‘এনএবি আমাকে আসিফ আলি জারদারি ও নওয়াজ শরিফদের মতো শীর্ষ রাজনীতিকদের বিরুদ্ধে মামলার বিষয়ে জানিয়েছিল। তবে সেই মামলা নিয়ে অগ্রসর হতে দেননি জেনারেল বাজওয়া।’
২০২২ সালের এপ্রিলে অনাস্থা ভোটের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে ক্ষমতাচ্যুত হন ইমরান খান। ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর থেকেই জেনারেল কামার জাভেদ বাজওয়ার বিরুদ্ধে সরব তিনি।
নিজের দল পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই)-এর অন্দরে বিদ্রোহ, বিরোধীদের ঐক্যবন্ধ হওয়ার কারণে পাক পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলিতে গরিষ্ঠতা হারান ইমরান। ঘটনার নেপথ্যে পাক সেনা এবং গুপ্তচর সংস্থা আইএসআই ‘বড় ভূমিকা’ নিয়েছিল বলে একাধিক বার প্রকাশ্যে অভিযোগ করেছেন পিটিআই প্রধান।
ঘটনাচক্রে, প্রধানমন্ত্রী ইমরান সেনাপ্রধান পদে বাজওয়ার মেয়াদ দ্বিতীয় বার বাড়াতে গররাজি হওয়ার ইঙ্গিত দেওয়ার পরই তার বিরুদ্ধে বিরোধী জোটের তৎপরতা বাড়ে। সেনা ও আইএসআইয়ের চক্রান্তেই গত এপ্রিলে ক্ষমতাচ্যুত হতে হয়েছিল বলে ইমরান সে সময় প্রকাশ্যে অভিযোগ করেছিলেন।
এসডব্লিউএসএস/১১৪২
আপনার মতামত জানানঃ