কবির হোসেন : নাম মাহবুব-এ-খোদা। সর্বস্তরে দেওয়ানবাগী নামে পরিচিত। ১৪ই ডিসেম্বর ১৯৪৯ সালে তিনি ব্রাহ্মনবাড়িয়া জেলার আশুগঞ্জ থানাধীন বাহাদুরপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবার নাম সৈয়দ আবদুর রশিদ সরদার। মা সৈয়দা জোবেদা খাতুন। ছয় ভাই দুই বোনের মধ্যে তিনি সবার ছোট। নিজ এলাকার তালশহর কারিমিয়া আলিয়া মাদ্রাসা থেকে ফাজিল পর্যন্ত পড়াশুনা করে ছাত্র জীবনের ইতি টানেন তিনি।
তিনি দাবি করেছেন, ৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছেন তিনি। এবং স্বাধীনতার পর তিন নাম্বার সেক্টর কমান্ডার শফী উল্লাহ সাহেবের সুপারিশে সেনাবাহিনীর ১৫ নম্বর বেঙ্গল রেজিমেন্টে ইমামতির চাকরি নেন।
ফরিদপুরে চন্দ্রপাড়া দরবারের প্রতিষ্ঠাতা আবুল ফজল সুলতান আহমেদ চন্দ্রপুরীর হাতে বাইয়াত গ্রহণ করেন দেওয়ানবাগী পীর। এরপর তার মেয়ে হামিদা বেগমকে বিয়ে করেন দেওয়ানবাগী। এর সুবাদে শ্বশুরের কাছ থেকে খিলাফত লাভ করেন। আবুল ফজল সুলতান আহমেদ চন্দ্রপুরীর হাতে বায়াত গ্রহণের পর তিনি ভিন্ন দিকে মোড় নিতে শুরু করেন। একের পর এক ভণ্ডামি, সুদের ব্যবসা ইত্যাদি শুরু করেন যার ফলে স্ত্রীসহ তাকে চন্দ্রপাড়া থেকে বিতাড়িত করা হয়।
এর কিছু দিন পর নিজেই নারায়ণগঞ্জে দেওয়ানবাগ নামক স্থানে একটি আস্তানা গঠন করেন এবং নিজেকে সুফি সম্রাট পরিচয় দেন। সর্বশেষ মতিঝিলের ১৪৭ আরামবাগ, ঢাকা-১০০০ এই ঠিকানায় ‘বাবে রহমত’ নামে একটি দরবার স্থাপন করেন দেওয়ানবাগী।
এখান থেকে তার তত্বাবোধন এবং নির্দেশে ‘বাবে রহমত’ মুখপাত্র আত্মার বাণী সহ বেশ কয়েকটি মাসিক পত্রিকা ও গ্রন্থ প্রকাশিত হয়। নিজেকে প্রচার প্রচারণা চালানোর জন্য এইসব পত্রিকা ও গ্রন্থ প্রকাশিত হয় বলে জানা যায়। এইসব পত্রিকা ও গ্রন্থে একের পর এক মনগড়া কথা, একেরপর এক জাল হাদিস, একের পর এক আল্লার নামে কটুক্তি, রসূলের নামে কটুক্তি করতে শুরু করেন। শুধুই যে আল্লাহ এবং তার রসূলের নামে কটূক্তি করা হয়েছে তা নয়, নবী করিম (সঃ) এর কনিষ্ঠ কন্যা ফাতেমাকে নিয়েও মিথ্যাচার করেন তিনি। তিনি তার বিভিন্ন বয়ানে এও দাবি করেন যে তিনি মুহম্মদ-কন্যা ফাতেমার স্বামী।
এদিকে তিনি এক সাংবাদিক সম্মেলনে দাবি করেন, কেবল তিনি নন, তার স্ত্রী সন্তান এবং অনেক মুরিদানারাও আল্লাহকে দেখেছেন। শুধু তাই নয়, তার দেওয়ানবাগ দরবার শরীফে আল্লাহ এবং তার সমস্ত নবী রাসূল ফেরেস্তারা মিছিল করেন। তিনি বলেন, জিব্রাইল বলতে কেউ নেই, স্বয়ং আল্লাহ তায়ালা নিজেই জিব্রাইল।
দীর্ঘদিন ধরেই তার আরামবাগের ‘বাবে রহমত’ দরবারে তার কর্মকাণ্ড পরিচালনা করে আসছিলেন। প্রতিবছর এই আরামবাগ এবং মতিঝিল এলাকাতে তার হাজার হাজার ভক্তদের সমন্বয়ে অনুষ্ঠান করে থাকেন যা দেশব্যাপী ব্যাপক আলোচনা ও সমালোচনার জন্ম দেয়। বিশিষ্ট ইসলামি চিন্তাবিদ এবং মূলধারার মুসলমানেরা দেওয়ানবাগীর পীরকে ভণ্ড এবং ইসলামচ্যুত বলে দাবি করে আসছিলেন। তাদের বক্তব্য নিজেকে সুফী সম্রাট দাবি করে মুসলমানদের বিপথের দিকে ধাবিত করে আসছেন দেওয়ানবাগী পীর। কারণ বারবার তিনি দাবি করে আসছিলেন তিনি আল্লার সাথে দেখা করেন যা একেবারে ভিত্তিহীন, বানোয়াট এবং বিভ্রান্তকর। একারণেই মূলধারার ইসলামবিদরা সবসময় দেওয়ানবাগীর কাছ থেকে সাধারণ মানুষদের দূরে থাকার কথা বলতেন। অন্যদিকে দেশের মন্ত্রী এমপি থেকে শুরু করে সর্বস্তরের মানুষের আনাগোনা লক্ষ্য করা গেছে তার দরবার শরীফে। বিভিন্ন সময়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও দেওয়ানবাগের পীরকে নিয়ে বিরুপ মন্তব্য করতে দেখা গেছে।
এদিকে সোমবার (২৮ ডিসেম্বর) ভোর ৬টা ৪৮ মিনিটে দেওয়ানবাগী পীরের (৭০) মৃত্যুর পর তার মৃত্যুর খবর নিয়ে দুই ধরণের মন্তব্য করছেন নেটিজেনরা। কেউ কেউ বলছেন একজন ইসলামচ্যুত ভণ্ডপীরের বিদায় হয়েছে, কেউ কেউ বলছেন দেওয়ানবাগী পীর একজন আশেকে রাসূল, একজন ভালো মানের পীর এবং একজন আলেম ছিলেন।
আপনার মতামত জানানঃ