রাশিয়ার সীমান্ত থেকে মাত্র ২০ কিলোমিটার দূরে মোতায়েন করা হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের সেনাদের। পূর্বাঞ্চলীয় ব্লক শক্তিশালী করার লক্ষ্যে এস্তোনিয়ায় সেনা বৃদ্ধি করছে সামরিক জোট ন্যাটো। তারই অংশ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের পদাতিক বাহিনীকে সেখানে মোতায়েন করা হয়েছে। বাল্টিক দেশটির প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় নিজেই এ তথ্য দিয়েছে।
মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত এক বিবৃতিতে বলা হয়, ভরু শহরের তারা সামরিক ঘাঁটিতে মার্কিন সেনারা অবস্থান করছে। এই ঘাটির অবস্থান রুশ সীমান্ত থেকে ২০ কিলোমিটার দূরে। ইউএস সার্ভিস সদস্যদের আগমনের বিষয়টি নিয়ে মার্কিন প্রতিরক্ষা বাহিনীর কর্নেল রিচার্ড আইকেনা বলেন, আমেরিকান সেনারা এস্তোনিয়ায় এসে অত্যন্ত আনন্দিত। তারা বন্ধু রাষ্ট্রের সঙ্গে কাধে কাধ মিলিয়ে কাজ করে যেতে চায়।
বিবৃতিতে যোগ করা হয়েছে যে, ওয়াশিংটন এস্তোনিয়ায় হিমার্স প্লাটুন মোতায়েন করতে যাচ্ছে। প্রতিরক্ষা মন্ত্রী হ্যানো পেভকুর বলেছেন, ২০২৫ সালের মধ্যে নিজস্ব হিমার্স ইউনিট পেতে যাচ্ছে এস্তোনিয়া। তবে মার্কিন হিমার্স সেখানে মোতায়েন হলে আগে থেকেই এস্তোনিয়ার সৈন্যরা এটি পরিচালনা শিখে ফেলতে পারবে। প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে আরও বলা হয়েছে, মার্কিন সেনাদের এস্তোনিয়ায় মোতায়েন প্রমাণ করে যে, ওয়াশিংটন এবং টালিন একই মূল্যবোধে বিশ্বাস করে এবং আমাদের স্বার্থও একই।
এস্তোনিয়ার সামরিক কর্মকর্তারা ইউরোপে ‘নিরাপত্তার অবনতি’ এবং ইউক্রেনে রাশিয়ার ‘আগ্রাসনের’ প্রেক্ষিতে নিজ দেশে ন্যাটোর সেনাদের উপস্থিতি বাড়ানোর প্রয়োজনীয়তার কথা তুলে ধরেন। অপরদিকে নিজের সীমান্তে ন্যাটোর শক্তি বৃদ্ধির প্রতিবাদ জানিয়ে আসছে মস্কো। দেশটি বলছে, ন্যাটোর এমন আচরণ সংঘাত শুধু দীর্ঘায়িত করবে।
এদিকে, ২০২৩ সালের শুরুর দিকে রুশ বাহিনী নতুন করে ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভে হামলা করতে পারে। এই লক্ষ্যে দুই লাখ সেনা নিয়ে প্রস্তুতি নিচ্ছে ক্রেমলিন। ইউক্রেনের সশস্ত্র বাহিনীর প্রধান জেনারেল ভ্যালেরি জালুঝনি ব্রিটিশ সাময়িকী দ্য ইকনোমিস্টকে দেওয়া এক সক্ষাৎকারে তার এই আশঙ্কার কথাই জানিয়েছেন।
ইউক্রেনে রাশিয়ার বিশেষ সামরিক অভিযান শুরুর দশ মাস হতে চলল। যুদ্ধের শুরুর দিকে কিয়েভে হামলা করে রুশ বাহিনী। তবে ইউক্রেনীয় বাহিনীর ব্যাপক প্রতিরোধের মুখে পিছু হটে। এখন যুদ্ধ চলছে ইউক্রেনের পূর্ব ও দক্ষিণাঞ্চলে। তবে জেনারেল ভ্যালেরি বলছেন, কিয়েভে আবার হামলার আশঙ্কা করছে ইউক্রেন।
গত ৩ ডিসেম্বর ওই সাক্ষাৎকার দেন জেনারেল ভ্যালেরি। বৃহস্পতিবার সেটি প্রকাশিত হয়েছে। সেখানে ইউক্রেনের সশস্ত্র বাহিনীর প্রধান বলেছেন, ‘নতুন করে কিয়েভে হামলার জন্য কৌশলগত ও গুরুত্বপূর্ণ প্রস্তুতি নিচ্ছে রাশিয়া। আগামী ফেব্রুয়ারিতে এই হামলা হতে পারে। নয়তো মার্চ এমনকি জানুয়ারিতেও হতে পারে।’
জেনারেল ভ্যালেরি আরও বলেন, ‘কিয়েভে হামলার জন্য একেবারে নতুন ২ লাখ সেনা নিয়ে প্রস্তুতি নিচ্ছে রাশিয়া। রাশিয়া যে আবার কিয়েভে হামলা চালাতে যাচ্ছে এ ব্যাপারে আমার কোনো সন্দেহ নেই। আমরা সব হিসাবনিকাশ করেছি, যেমন কতগুলো ট্যাংক, আর্টিলারি ও অন্যান্য আরও যেসব প্রয়োজন হতে পারে।’
ইউক্রেনের দক্ষিণ থেকে পূর্বাঞ্চলে রুশ বাহিনীর সঙ্গে ইউক্রেনীয় বাহিনীর যে যুদ্ধ চলছে কোনো ভূখণ্ড না হরিয়ে সেই যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়াই এখন প্রধান চ্যালেঞ্জ উল্লেখ করে জেরানেল ভ্যালেরি বলেন, গত সেপ্টেম্বরে উত্তর–পূর্বে খারকিভ ও নভেম্বরে দক্ষিণের খেরসন থেকে রুশ সেনাদের পিছু হটতে বাধ্য করেছে ইউক্রেন।
এদিকে, বর্তমান অবস্থা বিবেচনায় ইউক্রেন যুদ্ধ ইউরোপকে যুক্তরাষ্ট্রের ওপর অতিরিক্ত নির্ভরশীল করে তুলেছে বলে মন্তব্য করেছেন ফিনল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী সানা মারিন। গত শুক্রবার অস্ট্রেলিয়ার সিডনিতে একটি থিঙ্ক ট্যাঙ্ক বৈঠকে তিনি এ মন্তব্য করেন।
সানা মারিন বলেন, ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলা ইউরোপের জন্য নিরাপত্তা শঙ্কা তৈরি করেছে। এ কারণে ইউরোপ যুক্তরাষ্ট্রের ওপর অতিরিক্ত নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে।
‘আমি একেবারেই সত্যি কথাটা বলছি, ইউরোপ বর্তমানে যথেষ্ট শক্তিশালী নয়। যুক্তরাষ্ট্রকে ছাড়া চলতে আমাদের বহু সমস্যায় পড়তে হবে’—যোগ করেন ফিনল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী।
যুক্তরাষ্ট্রের বহু রাজনীতিকের সঙ্গে কথা হয়েছে জানিয়ে সানা মারিন বলেন, তারা আমাকে বলেছেন যে, ইউরোপকে আরও শক্তিশালী হওয়া দরকার।
‘যুক্তরাষ্ট্র আমাদেরকে বহু অস্ত্র দিয়েছে, অর্থ সহায়তা দিয়েছে, মানবিক সহায়তা দিয়েছে। অথচ ইউরোপ এখনও শক্তিশালী হতে পারেনি’।
সানা মারিন বলেন, ইউরোপের নিরাপত্তা, ইউরোপের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার জন্য আমাদের প্রয়োজনীয় সক্ষমতা অর্জন করতে হবে।
এর আগে হেলসিংকিতে এক বক্তৃতায় ফিনল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রযুক্তির জন্য ইউরোপ চীনের ওপর অতিনির্ভর হয়ে পড়েছে। গোয়েন্দা ও কম্পিউটার শিল্পে আরও বিনিয়োগ করতে হবে আমাদের।
এসডব্লিউএসএস১৪৪৫
আপনার মতামত জানানঃ