বাংলাদেশ আইনে যৌতুক নিষিদ্ধ হলেও দেশ থেকে এখনো তা নির্মুল করা সম্ভবপর হয়ে ওঠেনি। বরং ধীরে ধীরে যৌতুকের মতো একটি সামাজিক ব্যাধী ব্যবসায়ে পরিণত হয়েছে। ঘরের ছেলেটি বিবাহ যোগ্য হয়ে উঠলে অনেক পিতা-মাতার ব্যবসায়ী মন ছেলের বিয়ে-মাধ্যমে যৌতুক প্রত্যাশা করে থাকেন। যৌতুক সমাজের রন্ধ্রে এতোটাই প্রোথিত হয়ে গেছে যে যৌতুক গ্রহণ পাত্র-পরিবারের নিকট একটি অধিকারে দাঁড়িয়ে গেছে। সেই হিসেবেই ছেলের বিয়ের মাধ্যমে বড় রকমের অর্থই দাবি করার অধিকার ফলাতে থাকেন। এবং কালক্রমে অনেক অসাধু পরিবারের নিকট একটি ব্যবসায়ে রুপান্তরিত হয়। এদিকে কনের বিয়েতে কাবিনের টাকা ধার্যে চাতুর্যতা দেখানো এবং পরে তালাকের মাধ্যমে সেই টাকা দাবি করে আর্থিক লাভবান হবার প্রতারক শ্রেণিরও উদ্ভব হয়েছে। এই শ্রেণি কন্যার বিয়েতে মোটা অংকের কাবিন করান এবং পরে কন্যা মারফতে তালাক দিয়ে কাবিনের টাকা আদায় করা এক রকম ব্যবসায়ে পরিণত হয়েছে। আর শতকরা ৮০ শতাংশ বাঙালি পুরুষ এ কাবিন বাণিজ্যের বলি হচ্ছে বলে দাবি করেন বাংলাদেশ পুরুষ অধিকার ফাউন্ডেশন। রোববার (২৭ ডিসেম্বর) রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে সাজানো কাবিন ব্যবসায়ীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে মানববন্ধন করেন বাংলাদেশ পুরুষ অধিকার ফাউন্ডেশন।
তারা মনে করেন, বর্তমানে কাবিন বাণিজ্যের বলি হচ্ছে শতকরা ৮০ শতাংশ বাঙালি পুরুষ। দেশে এবং বিদেশে বিভিন্ন পরিবার উচ্চ কাবিন করিয়ে বিয়ে দিয়ে এক সপ্তাহের মাথায় কনে পক্ষ থেকে তালাক দিয়ে কাবিন দাবি করে। এর সংখ্যা ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং এখন এটি ব্যবসায় রূপ নিয়েছে।
অসাধু পরিবারগুলো মোটা অংকের কাবিন নির্ধারণ করে মেয়ের বিয়ে দিচ্ছে। কিছুদিন পরই পরিবারের কথামতো স্বামীকে তালাক দিয়ে সাজানো কাবিনের টাকা দাবি করছে। পরবর্তীতে পরিকল্পনা অনুযায়ী আবারো সম্পদশালী পাত্র দেখে মেয়ের বিয়ে দেয় পরিবার। সেখানেও অনেক ক্ষেত্রে একই ঘটনা ঘটে। এমন ঘটনা দিনকে দিন বাড়ায় তা ব্যবসায়ে পরিণত হয়েছে বলে মনে করেন বাংলাদেশ মেন’স রাইটস ফাউন্ডেশন।
তারা বলেন, কিছু নারী বিয়ের নামে কাবিনের ব্যবসা করে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে, অথচ এদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না। তাই তারা এমন একটি আইন করার দাবি জানায়, যেন কনে পক্ষ স্বেচ্ছায় তালাক দিলে কোনো কাবিন না দাবি করতে পারে অথবা স্ত্রী ডিভোর্স দিলে দেনমোহরের সমপরিমাণ টাকা স্বামীকে ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।
একইসঙ্গে বহুবিবাহ প্রতারণা রোধে বিবাহ রেজিস্ট্রেশন পদ্ধতি ডিজিটাল করার জন্যও এসময় সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয় মানববন্ধন কর্মসূচি থেকে।
যৌতুক এবং কাবিন দুটোই বাণিজ্যিক রুপ ধারণ করায় উদ্বিগ্ন সংশ্লিষ্ট মহল। জীবনের স্পর্ষকাতর এই ক্ষেত্রগুলো ব্যবসায়ে পরিণত হওয়ায় সমাজে রাষ্ট্রে বিবাহ বিষয়ক একধরণের আতঙ্ক তৈরী হয়েছে বলে তারা মনে করেন। আর এই দুই পক্ষের পেছনে একধরণের অসাধু মানসিকতাকে দায়ী করেন তারা। যৌতুক নির্মুলে দেশে আইন প্রচলিত হলেও কাবিন বাণিজ্যের তেমন কোনো সুস্পষ্ট আইন নেই। আর এমনিতেই সমাজে রাষ্ট্রে তালাক সংশ্লিষ্ট ব্যাপারে পুরুষ মানসিকতাকে দীর্ঘদিন ধরে দায়ী করে আসছে। এক শ্রেণির কপট পরিবার তারই সুযোগ নিচ্ছে বলে সংশ্লিষ্টদের ধারণা। তাদের অনেকে মনে করেন, কাবিন বাণিজ্যের অধিকাংশ তালাক সম্পন্ন হয় পুরুষের বিরুদ্ধে নারী নির্যাতন যৌতুক দাবি ইত্যাদি অভিযোগ তুলে। বিগত কয়েক বছর ধরে বিভিন্ন নারীবাদী সংগঠন, আইন বিষয়ক সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা একটা পরিসংখ্যান তুলে আসছেন যে, দেশে প্রায় নব্বই শতাংশ নারী নির্যাতন মামলা, যৌতুকের দাবি সংশ্লিষ্ট মামলাই ভুয়া। অনেক কপট শ্রেণি এইসব আইন ব্যবহার করে কাবিনে উল্লেখ সমপরিমাণ টাকা হাতিয়ে নেয় বলে অভিযোগ সংশ্লিষ্ট মহলের।
এসডাব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৩০৫
আপনার মতামত জানানঃ
![Donate](https://statewatch.net/wp-content/uploads/2021/06/xcard.jpg.pagespeed.ic.qcUrAxHADa.jpg)
আপনার মতামত জানানঃ