বছরের পর বছর নানা অপকর্ম করেন তারা। যখনই নতুন কমিশনার আসেন, নিজেদের পারদর্শিতা দেখাতে অতি সক্রিয় হয়ে ওঠেন। নতুন কমিশনারের মেজাজ-মর্জি বুঝে এবং লাইন সংযোগ ঠিকঠাক হয়ে গেলে তারা আবার পা বাড়ান সেই অন্ধকার পথে। রাজশাহী মহানগর পুলিশের (আরএমপি) এক ডজনের বেশি বিতর্কিত পুলিশ কর্মকর্তার এমন কাহিনী শুধু পুলিশ নয়, মহানগরবাসীর মুখে মুখে। বিতর্কিত এসব পুলিশ কর্মকর্তার কেউ দেড় যুগ, কেউ বা দুই যুগ আরএমপিতে আছেন, আর দুই হাতে টাকা কামিয়ে সম্পদের পাহাড় গড়েছেন। সুষ্ঠু আইনশৃঙ্খলার পথে এরাই বড় অন্তরায়।
গোয়েন্দা সংস্থা ও অনুসন্ধান সূত্রে জানা গেছে, বোয়ালিয়া থানার এসআই আবদুল মতিন ২০০৫ সালের ৮ আগস্ট কনস্টেবল পদে আরএমপিতে যোগ দেন। ২০১৭ সালের ১৮ ডিসেম্বর এসআই পদে পদোন্নতি পান। ১২ বছর আরএমপিতেই আছেন। মতিন বিপুল সম্পদ গড়ে তুলেছেন।
বোয়ালিয়া থানার এসআই গোলাম মোস্তফা ২০০৪ সালে কনস্টেবল পদে চাকরি নিয়ে ২০০৭ সালের ২৪ মে আরএমপিতে এসে ২০১২ সালের ১৫ জুলাই এএসআই পদে পদোন্নতি পান। চার বছর বোয়ালিয়ায় আছেন। তার বিরুদ্ধে মাদক সিন্ডিকেট পরিচালনা, টাকা আদায়, ওয়ারেন্ট ধরে সামারিসহ আদায় বাণিজ্য ও নানাবিধ অভিযোগ উঠেছে। গড়ে তুলেছেন বিপুল অবৈধ সম্পদ।
বোয়ালিয়া থানার আরেক এসআই উত্তম কুমার রায় ১৩ বছর আরএমপিতে। বোয়ালিয়া থানায় ৬ বছর। গোয়েন্দা প্রতিবেদন অনুযায়ী এসআই উত্তম বিপুল পরিমাণ অবৈধ সম্পদের মালিক হয়েছেন।এসআই সেলিম ১৯৯৫ সালে কনস্টেবল পদে নিয়োগ পেয়ে ২০০৯ সালের ১৭ জুন আরএমপিতে ঢোকেন। সেলিম এখন মতিহার থানায়। ১১ বছর আরএমপিতে। তার বিরুদ্ধে মাদক সিন্ডিকেটের সঙ্গে সখ্যর অভিযোগ রয়েছে। এ এসআই তবারক হোসেন ১৮ বছর আরএমপিতে। ২০০৩ সালে এএসআই পদে পদোন্নতি পেয়ে বিভিন্ন থানা-ফাঁড়ি ঘুরে এখন এয়ারপোর্ট থানায়। ২৮ বছরের চাকরিজীবনে ১৮ বছর আরএমপিতে। আবদুর রশিদ ১৯৯৮ সালের ২৬ মে কনস্টেবল পদে নিয়োগ পেয়ে ২০০৩ সালের ১৬ মে আরএমপিতে আসেন। ২০১৬ সালে এসআই পদে পদোন্নতি পান। পোস্টিং বাণিজ্য করে বিপুল অর্থের মালিক। আরএমপির আরেক সামারি মাস্টার এসআই শরিফুল ১৯৯৮ সালের ৬ জুন কনস্টেবল পদে চাকরিতে আসেন। ২০০৪ সালের ২৬ মার্চ আরএমপিতে পোস্টিং নেন। ২০১৪ সালের ২৬ অক্টোবর এসআই পদে পদোন্নতি পান। ২২ বছরের চাকরিজীবনে ১৭ বছর শরিফুল আরএমপিতে আছেন। ২০১৭ থেকে রাজপাড়া থানাতেই আছেন। পুলিশের অন্য সদস্যরা বলেন, এসআই শরিফুল হচ্ছেন টাকার মেশিন। তাকে ছাড়া থানা অচল। এ কারণে কোনো ওসি তাকে ছাড়তে চান না। এদিকে বেলপুকুর থানার এসআই শফিকুল ইসলামের বিরুদ্ধে নিরীহ মানুষকে ফাঁসিয়ে দেয়ার ভয় দেখিয়ে অর্থ আদায়ের অভিযোগ রয়েছে। রাজপাড়া থানার এএসআই মাহবুব ৬ বছর রাজপাড়া থানায়। তার বিরুদ্ধে রয়েছে মাদক সম্পৃক্ততার অভিযোগ। একই থানার এএসআই কামরুজ্জামান, মতিহারের এসআই টিএম সেলিম, রাজপাড়ার এসআই মোতালেব, বায়া পুলিশ ফাঁড়ির টিএসআই হানিফ দীর্ঘদিন আরএমপিতে এবং নানান অপরাধে জড়িয়ে আছেন।
টিএসআই মনিরুল ইসলাম কেশবপুর ফাঁড়ির ইনচার্জ। প্রায় ২৫ বছর আরএমপিতে। গড়েছেন অবৈধ সম্পদের পাহাড়। বোসপাড়া ফাঁড়ির এএসআই ইউসুফের বিরুদ্ধে মাদক ব্যবসাসহ নারী কেলেঙ্কারির অভিযোগ রয়েছে। ডিবির এসআই হাসান ও পরিদর্শক খাইরুলের বিরুদ্ধে অপরাধ কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ত থাকার অভিযোগ রয়েছে। আরএমপির নতুন কমিশনার আবু কালাম সিদ্দিক বলেছেন, সংশ্লিষ্টদের বিষয়ে খোঁজখবর নেয়া হচ্ছে। দ্রুত সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। রাজশাহীকে মাদক ও অপরাধমুক্ত করা আমাদের লক্ষ্য।
আপনার মতামত জানানঃ