ভারতের কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী নিশীথ প্রামাণিকের বিরুদ্ধে চুরির দুটি মামলা হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার পশ্চিমবঙ্গের আলিপুরদুয়ারের বিচার বিভাগীয় বিচারক প্রতিমন্ত্রী নিশীথের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছেন।
ভারতের কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর বিরুদ্ধে চুরির মামলা, গ্রেপ্তারি পরোয়ানা। এ ঘটনায় রাজ্যে ক্ষমতাসীন তৃণমূল কংগ্রেস ও বিজেপির মধ্যে শুরু হয়েছে তুমুল বিতণ্ডা।
২০০৯ সালে আলিপুরদুয়ার শহরের একটি সোনার দোকানে চুরির অভিযোগ তুলে নিশীথ প্রামাণিকের বিরুদ্ধে দুটি মামলা করে পুলিশ। তখন নিশীথ প্রামাণিক বিজেপির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন না, ছিলেন তৃণমূল কর্মী।
২০১৯ সালে নিশীথ প্রামাণিক তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দিয়ে আলিপুরদুয়ার সংসদীয় আসনে বিজেপির টিকিটে জিতে সংসদ সদস্য হন। তারপর কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী হন।
গতকাল এই মামলা আলিপুরদুয়ারের বিচার বিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে উঠলে বিচার বিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেট নিশীথ অধিকারীর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন। মামলার পররবর্তী তারিখ ৭ ডিসেম্বর।
আলিপুরদুয়ার আদালতের সরকারি কৌঁসুলি প্রশান্ত নারায়ণ মজুমদার জানিয়েছেন, আলিপুরদুয়ার আদালতের তৃতীয় বিচার বিভাগীয় বিচারক কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী নিশীথ প্রামাণিকের বিরুদ্ধে চুরির মামলায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছেন।
২০১৯ সালে নিশীথ এমপি ভোটে জেতার পর মামলাটি বিধাননগরের এমপি আদালতে স্থানান্তরিত হয়। পরে হাইকোর্টে আপিল করেন নিশীথ। হাইকোর্টের নির্দেশে বিধাননগরের আদালত থেকে সেই মামলা আলিপুরদুয়ার লোয়ার কোর্টে পাঠানো হয়।
আলিপুরদুয়ার আদালতের সরকারি আইনজীবী প্রশান্ত নারায়ণ মজুমদার জানিয়েছেন, আদালতের এই নির্দেশ নিয়ে তার প্রতিক্রিয়া জানতে বুধবার মন্ত্রী নিশীথ প্রামাণিককে একাধিকার টেলিফোন করা হলে পাওয়া যায়নি। তার ফোন সুইচঅফ ছিল। মেসেজ পাঠানো হলেও, তার উত্তর দেননি।
প্রশান্ত বলেন, বুধবার এই মামলার শুনানিতে নিশীথ প্রামাণিকের পক্ষে কোনও আইনজীবীও ছিলেন না, এত ক্ষুদ্ধ হয়ে থার্ড কোর্টের বিচারক কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী নিশীথ প্রামাণিকের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন।
এদিকে মন্ত্রীর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির খবর প্রকাশ্যে আসতেই রাজনৈতিক মহলে শোরগোল পড়েছে।
নিশীথ প্রামাণিকের বাড়ি পশ্চিমবঙ্গের কোচবিহার জেলার দিনহাটার ভেটাগুড়িতে। যদিও এই মামলার শুনানির সময় নিশীথ প্রামাণিকের পক্ষের কোনো আইনজীবী আদালতে উপস্থিত ছিলেন না।
কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হওয়ার খবরে উত্তাল হয়ে পড়েছে কোচবিহার ও দিনহাটা অঞ্চল। এ ঘটনার পর নিশীথ প্রামাণিক কোনো মন্তব্য না করলেও বিজেপি নেতা রাহুল সিনহা বলেছেন, রাজ্য পুলিশ কতটা নির্লজ্জ হলে ২০০৯ সালের মামলায় ২০২২ সালে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে! এ থেকেই স্পস্ট হয়, শুধু রাজনৈতিক প্রতিহিংসা চরিতার্থ করতেই এ ধরনের অভিযোগ আনা হয়েছে।
এদিকে, তৃণমূলের আলিপুরদুয়ার জেলার সভাপতি মৃদুল গোস্বামী বলেছেন, ‘এটা আমাদের জন্য কত দুর্ভাগ্য যে একজন কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর বিরুদ্ধে চুরির অভিযোগে মামলা হয়। এসব ঘটনার পর বিজেপির আর বড় করে মুখ খোলার পথ থাকবে না।’
আর কোচবিহারে নিশীথ প্রামাণিকের প্রতিপক্ষ তৃণমূলের উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রী উদয়ন গুহ বলেছেন, ‘আমরা তো প্রথম থেকেই বলেছিলাম, নিশীথ প্রামাণিকের মতো একজন ‘সমাজবিরোধী’–কে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর আসনে বসানো আমাদের দুর্ভাগ্য ছাড়া আর কিছু নয়। গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির মধ্য দিয়ে আমাদের অভিযোগকে মান্যতা দিলেন আদালত।’
আর এ ঘটনার পর বিজেপির আলিপুরদুয়ারের সংসদ সদস্য জন বার্লা বলেছেন, এসব করে পার পাবে না তৃণমূল। রাজ্য সরকার তো এখন উন্নয়নের কাজ না করে প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে রাজনীতি শুরু করেছে।
উল্লেখ্য, ২০২১ সালে ভারতের কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী নিশীথ প্রামাণিকের ‘বাংলাদেশি নাগরিকত্ব’ নিয়ে পশ্চিমঙ্গের রাজনীতিতে হইচই হয়েছিলো। আসামের কংগ্রেস আইনপ্রণেতা রিপুন বোরা প্রথমে এ নিয়ে প্রশ্ন তুলেন।
বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত খবর উল্লেখ করে আসামের কংগ্রেস নেতা রিপুন দাবি করেন, নিশীথ আদতে বাংলাদেশের গাইবান্ধা জেলার পলাশবাড়ির উপজেলার হরিনাথপুরের বাসিন্দা। ভারতে কম্পিউটার কোর্স করার নামে আসার পরে কোচবিহারে থেকে যান। প্রথমে তৃণমূলে এবং পরে বিজেপিতে যোগ দিয়ে সাংসদ হন।
এসডব্লিউ/এসএস/১৬৪৩
আপনার মতামত জানানঃ