গেল দুই সপ্তাহ ধরে চট্টগ্রাম শাহ আমানত বিমান বন্দরে কার্গো খালাসের কাজ বন্ধ রেখেছে চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউস। কি কারণে চট্টগ্রাম বিমান বন্দরে কার্গো খালাস বন্ধ রেখেছে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ, সেই বিষয়ে সুস্পষ্ট কোনো ব্যাখ্যা নাই সংস্থাটির কাছে । টানা দুই সপ্তাহ কার্গো খালাস ও ফ্লাইট না আসার ফলে বিদেশ থেকে পাঠানো পণ্য সংগ্রহ করতে পারছেন না প্রবাসীরা। কার্গে খালাস বন্ধ থাকার কারণে একই সাথে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে স্থানীয় সিএন্ডএফ ব্যবসায়ীরাও।
জানা যায়, চট্টগ্রাম শাহ আমানত বিমানবন্দর দিয়ে কার্গো বিমান আসে সপ্তাহে একদিন। সেটিও গেল দুই সপ্তাহ ধরে বন্ধ রয়েছে। ফলে প্রবাসীরা স্বজনদের কাছে কার্গো করে পণ্য পাঠাতে পারছেন না। ঠিক কি কারণে বন্ধ রাখা হয়েছে কার্গো খালাস; সে সম্পর্কে সুস্পষ্ট কোনো বক্তব্য নেই চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের। তবে অনুসন্ধানে জানা গেছে কার্গো খালাস বন্ধ রাখার নেপথ্য কারণ ঘুষ বাণিজ্যের চাঞ্চল্যকর তথ্য। এরমধ্যে কার্গো খালাস চালু করার জন্য চল্লিশ লক্ষ টাকা ঘুষ দাবি করেছেন কুমিল্লা কাস্টমসের এক শীর্ষ কর্মকর্তা।
বিমানবন্দরে কার্গো খালাস থেকে চট্টগ্রাম কাস্টস হাউসের মুনাফা মাসে ত্রিশ লাখ টাকা। কার্গো খালাস বন্ধ থাকার কারণে সেই মুনাফা থেকেও বঞ্চিত হচ্ছে কাস্টমস হাউজ। ভুক্তভোগীরা বলছেন অনৈতিক সুবিধা আদায়ের জন্য বিমানবন্দরে কার্গো খালাস বন্ধ রেখে প্রবাসীদের জিম্মি করা হয়েছে। মুলত, চট্টগ্রাম বিমানবন্দর দিয়ে কার্গোর মাধ্যমে বিদেশ থেকে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য পাঠিয়ে থাকেন প্রবাসীরা। শুল্কয়ান শেষে চট্টগ্রাম বিমানবন্দর থেকে সেই পণ্য ছাড়িয়ে নিতো প্রবাসীদের স্বজনরা ; কার্গো খালাস বন্ধ রাখার কারণে সেটি সম্ভব হচ্ছে।
এক মাসের জন্য সৌদি আরব থেকে দেশে এসেছিলেন ফটিকছড়ি উপজেলার শফিউল আজম। ল্যাগেজের অতিরিক্ত পণ্য তিনি কার্গো করেছিলেন। এখন পুনরায় সৌদি আরবে ফেরত যাওয়ার সময় হলেও চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউজের ছাড়পত্র, পণ্য খালাস বন্ধ থাকার কারণে তাঁর লাগেজ ছাড় করাতে পারেননি। ।
শফিউল আজম বলেন, ‘ দশ হাজার টাকার উপরে যাতায়াত খরচ করেছি। কার্গো চার্জ দিয়েছি। মাত্র বিশ কেজি পণ্যের জন্য। সেখানে তেমন কিছু নেই। ভাবছি আর খালাসই করবো না। কারণ ফিরে যাবার সময় হয়ে গেছে। ‘
কাতার প্রবাসী মইনুল ইসলামের পরিস্থিতিও একই রকম। তিনিও আরেক ভুক্তভোগী ; ল্যাগেজ ডিক্লারেশনের অতিরিক্ত পণ্য কার্গোতে দিয়ে বিপদে পড়েছেন তিনিও। গেল দুই সপ্তাহে অন্তত দশদিন চট্টগ্রামের বেসরকারি সিএন্ডএফ অফিসে দৌড়ঝাঁপ করে পণ্য খালাস করতে পারেননি তিনিও।
চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউজের একটি সূত্র জানায়, চট্টগ্রাম বিমানবন্দরে কার্গোর মাধ্যমে মূলত নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র প্রবাসীরা বাংলাদেশে পাঠিয়ে থাকেন। এখন পণ্য ছাড়িয়ে নেবার জন্য পাঁচশোর অধিক প্রবাসী অপেক্ষা করছেন। মুলত, তাদের জিম্মি করে অনৈতিক ফাঁয়দা হাসিলের কৌশল নিয়েছে কিছু অসাধু কাস্টমস কর্মকর্তা।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম কাস্টমস’র অতিরিক্ত কমিশনার ড. আবু নুর রশিদ আহমেদ জানান, ‘ কবে নাগাদ কার্গো খালাস চালু হবে সেই বিষয়ে কোন তথ্য নেই। সামনের সপ্তাহের বৃহস্পতিবার চট্টগ্রামে কার্গো ফ্লাইট আসবে কিনা সেটিও জানাতে পারেননি তিনি।’
বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান এয়ারভাইস মার্শাল এম মফিদুর রহমান বলেন, যথেষ্ট কঠোরভাবে বলা হয়েছে একটি লাগেজও যাতে নষ্ট না হয়। লাগেজটাকে যেন মানুষের মতো ফিল (অনুভব) করা হয়। প্রাণীর মতো ফিল করা হয়। কিন্তু বারবারই তারা এটি ভুলে যাচ্ছে। ভুলে যাওয়ার কারণ হলো, তাদের প্রতি প্রপার (সুষ্ঠু) সুপারভিশন নেই। তিনি বলেন, ইতোমধ্যে চট্টগ্রাম বিমানবন্দরের কার্গো হ্যান্ডলিং দুবাইভিত্তিক ডানাটাকে দেওয়া হয়েছে। সেখানে সবকিছু সুষ্ঠুভাবে হচ্ছে। কোনো যাত্রী ভোগান্তি নেই। সরকারের আয়ও বেড়েছে। কার্গো খালাস বন্ধ রাখার কারণ খতিয়ে দেখা হবে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন সিএন্ডএফ ব্যবসায়ী জানান, যথাযথ কাগজপত্র উপস্থাপন করা হচ্ছে না ; কাস্টমস হাউজের এমন দাবির কোন ভিত্তি নেই। এক সপ্তাহ খালাস বন্ধ রাখলে প্রবাসীদের অনেকেই ডেমারেজ ক্লেম করতে পারবে। আবার অধিকাংশ প্রবাসী পণ্য খালাস করতে চাইবে না, যেহেতু তেমন দামি পণ্য তারা কার্গো করে না। ক্ষতিটা হবে ব্যবসায়ীদের আর রাষ্ট্রের। লাইন চালু করার জন্য চল্লিশ লক্ষ টাকা ঘুষ দাবি করেছে ‘আরিফ’ নামের কাস্টমস হাউজের এক দালাল। সে কুমিল্লার (কাস্টমস) ডিসির পক্ষে এই টাকা চেয়েছে। সিএন্ডএফ ব্যবসায়ীরা টাকা দেবার পক্ষে নয় সেকারনেই লাইন বন্ধ রাখা হয়েছে। আপনারা খবর নিয়ে দেখেন। ‘ ‘
চলতি বছরের এপ্রিল মাসে ব্যবসায়ী নেতাদের দাবির মুখে শাহজালাল বিমানবন্দরের কার্গো ওয়্যার হাউজে আটকে থাকা পোশাক শিল্পের কাঁচামালের ডেমারেজ চার্জ মওকুফের ঘোষণা দেয় বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়। চট্টগ্রাম বিমানবন্দরের কার্গো ওয়ারহাউজে অনেক পোষাক রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানের জরুরি কাঁচামাল আটকা পড়েছে। চট্টগ্রামের গার্মেন্টস ব্যবসায়ীরাও কার্গো খালাস দ্রুত চালু করার দাবি জানিয়েছেন।
আপনার মতামত জানানঃ