আসন্ন পৌর নির্বাচনের প্রচারণায় বিরোধীদের বাধা দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে আওয়ামী লীগ মনোনিত প্রার্থীদের বিরুদ্ধে। প্রথম ধাপে ২৫টি পৌর সভায় ২৮ ডিসেম্বর ইভিএম-এ এই ভোট হতে যাচ্ছে। অভিযোগ উঠেছে বিরোধীদের প্রচারণায় নামতেই দিচ্ছে না নৌকা সমর্থিত প্রার্থীরা। হামলা-মারধরের পাশাপাশি ঘুষ ও হুমকি দিয়ে নির্বাচন থেকে সরিয়ে দেওয়ার খবরও পাওয়া গেছে।
প্রচারণায় হামলা
পঞ্চগড় পৌরসভা নির্বাচনে বিএনপি মনোনিত মেয়র প্রার্থীর গণসংযোগে হামলার অভিযোগ উঠেছে। হামলায় কেন্দ্রীয় বিএনপির নির্বাহী সদস্যসহ চার জন আহত হয়েছেন। এই ঘটনায় বুধবার (২৩ ডিসেম্বর) বিএনপি সংবাদ সম্মেলন করে।
ধানের শীষের প্রার্থী বর্তমান মেয়র তৌহিদুল ইসলাম সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘পৌরসভার জালাশী হঠাৎপাড়া এলাকায় গণংসযোগ করার সময় পঞ্চগড়-১ আসনের সংসদ সদস্য মজাহারুল হক প্রধানের নির্দেশে যুবলীগ কর্মী মনির, রাজুসহ কয়েকজন তরুণ লাঠিসোটা নিয়ে হামলা চালায়। হামলায় কেন্দ্রীয় বিএনপির নির্বাহী সদস্য ও জেলা বিএনপির সদস্য সচিব ফরহাদ হোসেন আজাদ, জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য ও সাবেক ছাত্রদল নেতা আব্দুল্লাহ আল মামুন রনিক ও আবদুর রাজ্জাক আহত হন।’
পঞ্চগড়ে আওয়ামী লীগ দলীয় প্রার্থীর নির্বাচন পরিচালনা কমিটির প্রধান জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি আবু তোয়বুর রহমানের দাবি, বিএনপির মেয়র প্রার্থী আওয়ামী লীগ প্রার্থীকে ‘মহিলা’ বলায় নারী ভোটাররা ক্ষেপে গিয়েছিলেন। যুবলীগ-ছাত্রলীগের কেউ সেখানে ছিল না।
বিরোধী প্রার্থীর বাড়ির সামনে ককটেল বিস্ফোরণ
মানিকগঞ্জ পৌরসভা নির্বাচনে বিএনপির মেয়র প্রার্থীর বাসার সামনে শুক্রবার (২৫ ডিসেম্বর) রাতে ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় শনিবার (২৬ ডিসেম্বর) বিএনপি প্রার্থী আতাউর রহমান জেলা রিটার্নিং ও জেলা নির্বাচন কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন। তিনি আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী জেলা সহ-সভাপতি মো. রমজান আলীকে দায়ী করেছেন।
মনোনয়ন ফরম তুলতে গিয়ে নিখোঁজ
নাটোরে সিংড়ায় আসন্ন পৌরসভা নির্বাচনে অংশ নিতে এলাকায় পোস্টার, ব্যানার, ফেস্টুন লাগিয়েছেন পৌরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর প্রার্থী মো. হাসান আহম্মেদ। বৃহস্পতিবার (২৪ ডিসেম্বর) ১০টার দিকে এলাকায় ভোট ও দোয়া চেয়ে রওনা হন মনোনয়ন ফরম তুলতে। কিন্তু বেলা ১২টার কিছু আগে থেকেই তার ফোন বন্ধ। শুক্রবার (২৫ ডিসেম্বর) পর্যন্ত তাকে খুঁজে পাওয়া যায়নি। এনিয়ে তার অনুসারী ও পরিবারের সদস্যরা দুশ্চিন্তায় রয়েছেন। মো. হাসান আহম্মেদ পৌরসভার চকসিংড়া মহল্লার মৃত নুরশেদ প্রামানিকের ছেলে।
আ.লীগ প্রার্থীর পোস্টার লাগাচ্ছে গ্রাম পুলিশ!
নাটোর সদর উপজেলার বড়হরিশপুর ইউনিয়নে গ্রাম পুলিশকে ব্যবহার করে নির্বাচনি প্রচারণার পোস্টারিং করাতে গিয়ে বেকায়দায় পড়েছেন ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান। চেয়ারম্যানের এমন কাজে প্রতিবাদ জানিয়েছে জেলা গ্রাম পুলিশ সংগঠন। তবে বিষয়টি অস্বীকার করে ওই চেয়ারম্যান বলেছেন, এটা তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র।
অভিযুক্ত ওই চেয়ারম্যানের নাম ওসমান গণি ভূঁইয়া। তিনি প্রায় ১৯ বছর ধরে বড় হরিশপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও বর্তমানে ওই ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান।
বিরোধীদের কুপিয়ে আহতের অভিযোগ
পটুয়াখালীর কুয়াকাটা পৌরসভা নৌকা প্রতীকের মেয়র প্রার্থী আ. বারেক মোল্লার ছেলে ও দুই ভাইসহ ৬০ কর্মী-সমর্থকের বিরুদ্ধে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর কর্মী-সমর্থককে কুপিয়ে জখম, হত্যাচেষ্টার অভিযোগে মহিপুর থানার ওসিকে ৭২ ঘণ্টার মধ্যে এজাহার গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
বৃহস্পতিবার (২৪ ডিসেম্বর) কলাপাড়া সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট শোভন শাহরিয়ারের আদালত স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী আনোয়ার হোসেনের সমর্থক কুয়াকাটার হোসেনপাড়া গ্রামের শানু হাওলাদারের ছেলে আনোয়ার হোসেনের নালিশি মামলা আমলে নিয়ে এই আদেশ দেন। আদালতের বেঞ্চ সহকারী ফেরদৌস মিয়া বিষয়টি গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেছেন।
মামলা সূত্রে জানা যায়, আসামিরা ১৭ ডিসেম্বর থেকে কুয়াকাটার সর্বত্র ধারালো অস্ত্র নিয়ে অবাধে চলাফেরা করে জগ প্রতীকের স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থীর কর্মী সমর্থকদের ভীতি প্রদর্শন করে আসছে। ২৩ ডিসেম্বর পৌরসভার ২নং ওয়ার্ডে নির্বাচনি উঠান বৈঠক শেষে বাড়ি ফেরার পথে আসামিরা বাদীসহ অন্যদের কুপিয়ে আহত করে। এ সময় একটি স্যামসাং মোবাইল সেট এবং বাদী ও সাক্ষীদের ব্যবহৃত স্বর্ণালঙ্কার ছিনিয়ে নেয় অভিযুক্তরা।
প্রতিপক্ষের বাড়িতে হামলা-লুট
বরগুনার বেতাগী পৌরসভা নির্বাচনে হামলার অভিযোগ তুলেছেন বিএনপি মনোনিত মেয়র প্রার্থী হুমায়ুন কবির। তিনি অভিযোগ করেন, তার বাড়িতে প্রতিপক্ষ গোলাম কবিরের সমর্থকরা হামলা, ভাঙচুরসহ লুটপাটের ঘটনা ঘটিয়েছে। তবে বিষয়টি অস্বীকার করে পাল্টা অভিযোগ করেছে আওয়ামী লীগ প্রার্থী কবির।
‘ঘুষ’ দিয়ে বিএনপি প্রার্থীকে সরিয়ে দেওয়ার অভিযোগ
বিএনপির দুই কাউন্সিলর প্রার্থীসহ চার নেতাকে ঘুষ দিয়ে নির্বাচন থেকে সরিয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে আওয়ামী লীগ প্রার্থীর বিরুদ্ধে। বগুড়ার আদমদীঘি উপজেলার সান্তাহার পৌরসভার আসন্ন নির্বাচনে এমন ঘটনা ঘটেছে।
এই ঘটনায় প্রতিবাদ করেছে বিএনপির তৃণমূল নেতারা। তারা দলের অভিযুক্ত নেতাদের পদত্যাগ দাবি করেছেন। জেলা কমিটি ইতোমধ্যে অভিযুক্তদের শোকজ করেছে। সান্তাহার পৌর বিএনপির আহ্বায়ক মজিবর রহমান ও যুগ্ম আহ্বায়ক রফিকুল ইসলাম স্বাক্ষরিত চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে, ৭ নম্বর ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতার জন্য পৌর বিএনপি নেতা জাহিদুল ইসলাম ও পৌর যুবদল নেতা মাহামুদুল আলম দলীয় মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেন। এখানে আওয়ামী লীগের একমাত্র প্রার্থী আবদুল কুদ্দুস। বিএনপি মনোনিত দুই কাউন্সিলর প্রার্থী গত ২০ ডিসেম্বর তাদের মনোনয়নপত্র জমা দেওয়া থেকে বিরত থাকেন। ফলে আওয়ামী লীগ প্রার্থী আবদুল কুদ্দুস সান্তাহার পৌরসভার ৭ নম্বর ওয়ার্ডে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় কাউন্সিলর নির্বাচিত হচ্ছেন।
এসডাব্লিউ/নাসি/২০১০
আপনার মতামত জানানঃ