দীর্ঘদিন ধরেই ইথিওপিয়ার বিভিন্ন এলাকায় বিভিন্ন বিদ্রোহী গোষ্ঠীর সঙ্গে সরকারী নিরাপত্তারক্ষীদের সংঘর্ষ চলছে। গত কয়েক বছরে সেই পরিস্থিতির মধ্যেও দেশে শান্তি প্রতিষ্ঠার চেষ্টা চালিয়ে বিশ্বজুড়ে সুনাম কুড়িয়েছেন ইথিওপিয়ার প্রধানমন্ত্রী আবি আহমেদ। এর ফলে ২০০৯ সালে সর্বকনিষ্ঠ রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে শান্তিতে নোবেল পুরস্কার জিতেন। কিন্তু বর্তমানে ইথিওপিয়ার অবস্থা তার নোবেল প্রাপ্তির যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্নচিহ্ন তুলে দিয়েছে। কয়েক বছর ধরেই ইথিওপিয়ার বিভিন্ন এলাকায় নৃশংস হত্যাকাণ্ড চলছে। গত বুধবার (২৩ ডিসেম্বর) ইথিওপিয়ার বেনিশ্যাঙ্গুল-গুমুজ এলাকায় বন্দুকধারীদের গুলিতে দুইশতের অধিক মানুষ নিহত হয়।
জানা যায়, ইথিওপিয়ার মেটেকেল অঞ্চলের বুলেন কাউন্টির বেকোজি গ্রামে বিভিন্ন নৃতাত্ত্বিক গোষ্ঠী বসবাস করেন। আফ্রিকার দ্বিতীয় জনসংখ্যাবহুল দেশটিতে প্রধানমন্ত্রী আবি আহমেদ ২০১৮ সালে প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পাওয়ার পর থেকে নিয়মিতভাবে সহিংসতা লেগেই আছে।এ নিয়ে আলোচনার জন্য গত মঙ্গলবার অঞ্চলটি সফর করেন আবি আহমেদ। আঞ্চলিক প্রতিদ্বন্দ্বীদের কঠিন মুঠি থেকে গণতান্ত্রিক সংস্কার ত্বরান্বিত করার উদ্যোগ নিয়েছিলেন তিনি। গত বুধবার উক্ত গ্রামে বন্দুকধারীদের অতর্কিত এলোপাথাড়ি গুলি ছুড়তে থাকলে আতঙ্কে গ্রামবাসী ছুটে পালাতে শুরু করে। বন্দুকধারীদের অনবরত গুলিবর্ষণে স্পটেই শতাধিক ব্যক্তি নিহত হয়। বাকিদের হাসপাতালে নেওয়া হলে সেখানেও মৃত্যুবরণ করেন আরো অনেকে। ইথিওপিয়ার মানবাধিকার কমিশনের এক বিবৃতি থেকে জানা যায়, ‘সশস্ত্র ব্যক্তিদের গুলি ও অগ্নিসংযোগে দুই শতাধিক মানুষ নিহত হয়েছে।’
কারা এ হামলা চালিয়েছে তাৎক্ষণিকভাবে তা স্পষ্ট হওয়া না গেলেও রাজ্য সরকারের এক মুখপাত্র এ হামলার জন্য শান্তিবিরোধী শক্তিকে দায়ী করেছেন।
আগামী বছরের নির্বাচন সামনে রেখে ভূমি, ক্ষমতা ও সম্পদ নিয়ে আগে থেকেই ফুঁসতে থাকা উত্তেজনা নতুন করে জ্বলে উঠেছে। গত সেপ্টেম্বর থেকে এ ধরনের চারটি রক্তক্ষয়ী হামলায় বিপুল সংখ্যক মানুষ নিহত হয় প্রদেশটিতে। এর মধ্যে নভেম্বরে যাত্রীবাহী একটি বাসে বন্দুকধারীদের হামলায় ৩৪ জন নিহত হয়েছিল। এবং এক গ্রামের একটি স্কুলের মাঠে গ্রামবাসীকে জড়ো করে নির্বিচারে গুলি করে হত্যা করে ৫৪ জনেরও অধিক।
গত ছয় সপ্তাহ ধরে উত্তরাঞ্চলীয় তাইগ্রে অঞ্চলে বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে সেনাবাহিনীর লড়াই চলছে। এ যুদ্ধে সাড়ে ৯ লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছেন। সেখানে বিপুলসংখ্যক সেনা মোতায়েনের কারণে অন্যান্য অঞ্চল সেনাশূন্য হওয়ায় নিরাপত্তার হুমকি দেখা দিয়েছে। এ ছাড়া ওরোমিয়া অঞ্চলেও বিদ্রোহীদের সঙ্গে লড়তে হচ্ছে সেনাবাহিনীকে। অরক্ষিত পূর্বাঞ্চলীয় সীমান্ত দিয়ে সোমালি বিদ্রোহীদের প্রবেশের হুমকিও রয়েছে।
প্রতিবেশীর সঙ্গে সুসম্পর্ক প্রতিষ্ঠায় আবি আহমেদ প্রশংসিত হলেও নিজ দেশের স্বাধীনতাকামী অঞ্চল তাইগ্রেতে শান্তি ফেরাতে তেমন পদক্ষেপ নেননি বলে অভিযোগ। উল্টো ব্যাপক রাজনৈতিক সংস্কারের নামে তাইগ্রের অধিবাসীদের কোণঠাসা করে ফেলেন বলে অভিযোগ ওঠে আবির বিরুদ্ধে।
এসডব্লিউ/কেএইচ/১৮৪০
আপনার মতামত জানানঃ