সংবাদপত্রকে বলা হয় একটা দেশের দর্পণ। পৃথিবীর প্রায় সব দেশেই সংবাদপত্র চেক এন্ড ব্যালেন্সের কাজ করে। বাংলাদেশেও এর ব্যতিক্রম নয়। তাই আমাদের সংবিধানে ব্যাপারে স্বাধীনতা নিশ্চিত করা হয়েছে। কিন্তু এই মহাজোট সরকার আসার পর বিভিন্ন সময় এরা সংবাদকর্মীদের উপর চড়াও হয়েছে।
আ’লীগ নেতার বিরুদ্ধে হত্যাচেষ্টার অভিযোগ
জামালপুরের সরিষাবাড়ী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ড. হারুন অর রশীদের বিরুদ্ধে হত্যাচেষ্টার অভিযোগ এনেছেন স্থানীয় এক সাংবাদিক।
দৈনিক ঢাকা প্রতিদিন পত্রিকার সরিষাবাড়ী উপজেলা প্রতিনিধি আশরাফুল ইসলাম রোববার দুপুরে জামালপুর প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে এমন অভিযোগ করেন।
আশরাফুলের অভিযোগ, পত্রিকায় ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে সংবাদ প্রকাশের জের ধরে গত ২৭ অক্টোবর বিকালে একদল সন্ত্রাসী তার ওপর হামলা চালায়।
এ ঘটনায় পরে ১৪ জনকে আসামি করে সরিষাবাড়ী থানায় মামলা করেন আশরাফুল। মামলায় তিনি উল্লেখ করেন, তেজগাঁও সরকারি কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ আব্দুর রশিদ ও সরিষাবাড়ী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ড. হারুন অর রশীদের প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষ মদদে ওই হামলার ঘটনা ঘটে।
সংবাদ সম্মেলনে জীবনের নিরাপত্তা ও হামলাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করে সাবেক অধ্যক্ষ আব্দুর রশিদ ও ড. হারুন অর রশদিকে স্বাধীনতা বিরোধী পরিবারের সন্তান হিসেবেও আখ্যায়িত করেন আশরাফুল। তার দাবি, এ দুজনের বাবা ও বড় ভাই রাজাকার ছিলেন।
এ সময় রাজাকারের একটি তালিকাও দেখান আশরাফুল।
অভিযোগ অস্বীকার করে সরিষাবাড়ী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ড. হারুন অর রশীদ বলেন, ‘সাংবাদিকের ওপর হামলার ঘটনা নিন্দনীয়। এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত এবং হামলাকারীদের শাস্তি দাবি করছি।’
পত্রিকায় ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে সংবাদ প্রকাশের জের ধরে গত ২৭ অক্টোবর বিকালে একদল সন্ত্রাসী তার ওপর হামলা চালায়।
অভিযোগের বিষয়ে তেজগাঁও সরকারি কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ আব্দুর রশিদ বলেন, ‘আমার পরিবার আওয়ামী লীগের পরিবার। সামনে জাতীয় সংসদ নির্বাচন। আমি যাতে মনোনয়ন না পাই তার জন্য একটি পক্ষ এসব অপপ্রচার করছে।’
দুর্বৃত্তের হামলায় সাংবাদিক আহত
মৌলভীবাজারে দৈনিক যুগান্তরের প্রতিনিধি হোসাইন আহমেদ দুর্বৃত্তের হামলায় আহত হয়েছেন। গত শনিবার রাত নয়টার দিকে শহরের এম সাইফুর রহমান সড়কের (সাবেক সেন্ট্রাল রোড) প্রধান ডাকঘর এলাকায় তাঁর ওপর হামলা হয়। তাকে মৌলভীবাজার ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
হোসাইন আহমেদ জানিয়েছেন, তিনি শহরের শমসেরনগর সড়কের কার্যালয় থেকে বেরিয়ে মোটরসাইকেলে ব্যক্তিগত কাজে পশ্চিমবাজারের দিকে যাচ্ছিলেন। প্রধান ডাকঘর এলাকায় পৌঁছালে পেছন থেকে আসা তিনটি মোটরসাইকেল ও একটি প্রাইভেট কারের আরোহীরা তার গতিরোধ করে। পরে সাইকেল ও কারের আরোহীরা তাকে সাইকেল থেকে ধাক্কা দিয়ে সড়কে ফেলে দেয় এবং দেশীয় অস্ত্র দিয়ে মারধর করে। এতে তিনি গুরুতর আহত হন। পরে লোকজন ভিড় করলে দুর্বৃত্তরা পালিয়ে যায়।
স্থানীয় লোকজন হোসাইন আহমেদকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করেন। হামলার খবর পেয়ে রাতেই মৌলভীবাজার প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক পান্না দত্তসহ গণমাধ্যমকর্মীরা হাসপাতালে ছুটে যান। মৌলভীবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সুদর্শন কুমার রায় ও মৌলভীবাজার সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইয়াছিনুল হক ওই রাতে হাসপাতালে আহত সাংবাদিকের সঙ্গে কথা বলেন।
হোসাইন আহমেদ বলেন, ‘হামলাকারীরা পেছন থেকে এসে আক্রমণ করেছে। আমি তাদের কাউকে চিনতে পারিনি। এই বিষয়ে পুলিশের সঙ্গে কথা বলে পরবর্তী পদক্ষেপ নেব।’
সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইয়াছিনুল হক বলেন, ‘বুঝতেছি না, হঠাৎ করে কেন উনার (হোসাইন আহমেদ) ওপর এ রকম হামলা হলো। উনিও (আহত সাংবাদিক) কোনো ক্লু দিতে পারছেন না। রাত্রিবেলা, অনেক দোকান বন্ধ ছিল। কাউকে জিজ্ঞাসাবাদও করতে পারছি না। অই এলাকার সিসি ক্যামেরার কিছু ফুটেজ দেখছি। আজ আরও খোঁজ নেব।’
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যে-ই সুযোগ পাচ্ছে সে-ই সাংবাদিকদের উপর নির্যাতন করছে৷ সেটা যে শুধু সরকারি দলের লোক তা নয়, ব্যবসায়ীরা করছে, অর্থশালীরা করছে৷ আসলে সাংবাদিকদের খবরটি যাদের বিরুদ্ধে যাচ্ছে, তারাই এটা করছে৷
তারা মনে করেন নির্যাতনকারীদের কঠোর শাস্তি হলে বারবার নির্যাতনের ঘটনা ঘটতো না৷
তারা বলেন, বিগত কয়েক দশকে বাংলাদেশে সাংবাদিকদের ওপর নির্যাতন, হয়রানি ও আক্রমণের বেড়ে যাওয়ায় পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন এ পেশার অনেকেই। আইনের দীর্ঘসূত্রিতা, জটিল বিচারিক প্রক্রিয়া সেইসঙ্গে রাষ্ট্র ও প্রতিষ্ঠান পক্ষ থেকে কোন ধরণের সহযোগিতা না থাকার কারণে সাংবাদিক নির্যাতন ও সহিংসতা থামানো যাচ্ছেনা। সাংবাদিকদের স্বার্থ রক্ষায় সক্রিয় কোন প্ল্যাটফর্ম না থাকায় এই পেশা দিন দিন ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠছে বলেও মন্তব্য করেন তারা।
তারা বলেন, সাংবাদিকরা নির্যাতনের শিকার হলেও সেগুলো আদালতে নিতে চান না। কেননা মামলা করতে গেলে প্রতিষ্ঠান থেকে যে সাপোর্ট লাগে বা অর্থনৈতিকভাবে যে সাপোর্ট লাগে, সেটা তাদের সবার থাকেনা। এ অবস্থায় বিচার নিশ্চিত করা কঠিন হয়ে যায়। বাংলাদেশের সংবিধানে মত প্রকাশের স্বাধীনতার কথা বলা হলেও রাষ্ট্রীয় সামাজিকভাবে সেই স্বাধীনতা নিশ্চিত করা যায়নি বলে জানান তারা।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৪১৫
আপনার মতামত জানানঃ