পশ্চিমবঙ্গের ডায়মন্ড হারবারে কয়েকটি কালী মূর্তি ভাঙ্গার ঘটনায় তিনজনকে আটক করেছে পুলিশ। অভিযুক্তদের মধ্যে একজন প্রতিমাশিল্পী, আর অন্য দু’জন তার সহযোগী। আটক তিনজনের নাম প্রহ্লাদ সর্দার, প্রতাপ সর্দার এবং পুষ্পেন্দু বেরা।
তারা নিজেরাই মূর্তি ভেঙ্গে দিয়েছিল বলে দাবী পুলিশের। প্রতিমা বিক্রি না হওয়ার হতাশা থেকে সহানুভূতি কুড়োতে নিজেরাই মূর্তি ভেঙ্গে ফেলেছিল অভিযুক্তরা, এমনটাই বলছে পুলিশ।
ডায়মন্ড হারবারারের পুলিশ সুপার একটি সাংবাদিক সম্মেলনে বলেছেন, অভিযোগ পেয়ে আমরা এই ঘটনার তদন্তে নামি। সন্দেহ হওয়ায় জিজ্ঞাসাবাদ করি মৃৎশিল্পী প্রভাত সর্দারকে।
তিনি জানান যে গত ২৩ শে অক্টোবর নিজেই রাত্রিবেলা মদ্যপ অবস্থায় মূর্তিগুলি ভেঙেছেন। এই মূর্তিগুলি যে গ্রাহকরা অর্ডার দিয়েছিলেন তাদের মূর্তিগুলি পছন্দ হয়নি। এরপর রাগের বশে তিনি সেই মূর্তিগুলি ভাঙেন। পরের দিন সকালবেলা এই ঘটনার মোড় অন্যদিকে ঘোরানোর জন্য তিনি সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাঙা মূর্তির ছবি পোস্ট করেন।
প্রসঙ্গত, ডায়মন্ড হারবারের রামনগর থানা এলাকার নুরপুরের মুকুন্দপুর মোড়ে কালীপুজোর দিন মৃৎশিল্পী প্রভাত সরদারের মূর্তি তৈরির কারখানা থেকে উদ্ধার করা হয় ৪ টি বিকৃত কালী মূর্তি।
শিল্পী প্রভাত সরদার দাবি করেন, কালীপুজোর আগের রাতে দুষ্কৃতীরা তার কারখানায় ঢুকে কালী মূর্তি ভাঙচুর করেছে। এরপর পুলিশি তদন্তে প্রভাত স্বীকার করে নেন যে তিনি নিজেই ওই মূর্তি গুলি ভেঙেছেন। তারপর পুলিশের পক্ষ থেকে প্রভাত সর্দার সহ ২ সহযোগীকে গ্রেপ্তার করা হয়।
উল্লেখ্য, কালী পুজোর আগের রাতে ২৩শে অক্টোবর মূর্তি ভাঙ্গা হয়, আর পরের দিন সকালে তা জানতে পারেন এলাকার মানুষ।
ভাঙ্গা কালী মূর্তিগুলির ছবি সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ায় হিন্দুত্ববাদী কিছু সংগঠন স্থানীয়ভাবে প্রতিবাদ, পথ অবরোধও করেছিল।
বিষয়টিতে সাম্প্রদায়িক রঙ দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছিল বলে জানিয়েছেন ডায়মন্ড হারবারের পুলিশ সুপার ধৃতিমান সরকার।
ধৃতিমান সরকার জানান, “ওই তিনজনকে জেরা করে এটাই জানা গেছে যে তারা প্রতিমা গড়ার জন্য অগ্রিম নিয়েছিল, কিন্তু মূর্তিগুলিতে কিছু না কিছু খুঁত ছিল বলে ক্রেতারা সেগুলি নিতে চায় নি। অগ্রিমের টাকাও ফেরত দেওয়ার চাপ ছিল।”
পুলিশ বলছে, স্থানীয় সূত্রগুলি থেকে খবর নিয়ে এবং ওই প্রতিমা শিল্পীর সঙ্গে কথায় তারা বেশ কিছু অসঙ্গতি পায়। কিন্তু একটা সময়ে ধৃতরা নিজেরাই স্বীকার করে যে তারাই মূর্তি ভেঙ্গে ফেলেছিল টাকা ফেরতের চাপ আর ক্ষোভ থেকে।
ধৃতদের নিয়ে ওই শিল্পীর দোকানে গিয়ে গোটা ঘটনার পুনর্নির্মাণ করানো হয়। সেটির ভিডিও রেকর্ডিংও করা হয়েছে, যেখানে ওই প্রতিমা শিল্পীকে বলতে শোনা যাচ্ছে যে কেন তারা মূর্তিগুলি ভেঙ্গে ফেলেছিলেন।
পুলিশের জেরায় প্রতিমা শিল্পী প্রহ্লাদ সর্দার জানান, “প্রতিমা নিতে যারা আসছিল, তাদের চোখে কোনও মূর্তির চোখে বা হাতে কিছু কিছু ত্রুটি ধরা পড়ে গিয়েছিল। ক্রেতারা কেউ বলছিল যে মূর্তি নেব না, বা টাকা কম দেব; এসব বলছিল। তারপরেই নেশা ভাঙ করে এটা করেছি।”
প্রহ্লাদ সর্দারের ভাই প্রতাপ পুলিশকে জানায় যে একটা নয়, একের পর এক ক্রেতা এসে এধরণের খুঁত দেখতে পাচ্ছিল। তারা টাকাও ফেরত চাইছিল। সেদিন রাতে মদ খেয়ে দাদা বলে যে ঠাকুর ভেঙ্গে ফেল।”
পুলিশ বলছে, ভাঙ্গা মূর্তিগুলির ছবি দিয়ে অনেকে সামাজিক মাধ্যমে পোস্ট করেছেন। ভাঙ্গা ঠাকুরের সংখ্যা সবাই নিজের খেয়াল খুশি মতো লিখেছে। কেউ ৫০, কেউ ৬০ এরকমও লেখা হয়েছে, যার সঙ্গে বাস্তবের কোনও মিল নেই।
পুলিশ সুপার ধৃতিমান সরকারের কথায়, “কিছু কিছু ফেসবুক আর টুইটার হ্যান্ডেল থেকে সাম্প্রদায়িক উস্কানি দেওয়া হচ্ছিল। সাম্প্রতিক অতীতে কিছু ঘটনার সঙ্গে অযথা এই ঘটনাকে লিঙ্ক করার চক্রান্ত হচ্ছিল।”
ধৃতিমান সরকার বলছেন, সত্য ঘটনা জানার পরে ওইসব সামাজিক মাধ্যমের পোস্টগুলি মুছে দিতে হবে, না হলে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এসডব্লিউ/এসএস/১১০৭
আপনার মতামত জানানঃ