বৈশ্বিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে ২০২২-এর সূচক প্রকাশ করেছে আন্তর্জাতিক গবেষণা ও জনমত জরিপ প্রতিষ্ঠান গ্যালাপ ইন্টারন্যাশনাল। এবারের সূচকে দক্ষিণ এশিয়ার তিন দেশ পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা ও ভারত বৈশ্বিক আইনশৃঙ্খলা সূচকে বাংলাদেশের চেয়ে এগিয়ে রয়েছে। সূচকে ১০০ পয়েন্টের মধ্যে পাকিস্তানের স্কোর ৮২, শ্রীলঙ্কার ৮০ এবং ভারতের স্কোরও ৮০।
রিপোর্টে যে দেশের স্কোর যত বেশি, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি তত ভালো বলে মনে করা হয়। বুধবার প্রকাশিত গ্যালাপের বৈশ্বিক আইনশৃঙ্খলা সূচক-২০২২ এ বাংলাদেশের স্কোর ১০০ পয়েন্টের মধ্যে ৭৯।
এদিকে গ্যালাপের বৈশ্বিক আইনশৃঙ্খলা সূচক-২০২২ এ সবার ওপরে রয়েছে সিঙ্গাপুর। এছাড়া এই সূচকে সবচেয়ে নিচে রয়েছে আফগানিস্তান। অর্থাৎ তালেবানশাসিত এই দেশটিই বিশ্বের সবচেয়ে ‘কম নিরাপদ’ দেশ।
সংবাদমাধ্যম বলছে, ২০২১ সালের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির ওপর ভিত্তি করে বুধবার গ্যালাপের বৈশ্বিক আইনশৃঙ্খলা সূচক-২০২২ রিপোর্টটি প্রকাশিত হয়। এতে ১০০ পয়েন্টের মধ্যে ৯৬ স্কোর নিয়ে সবার শীর্ষে রয়েছে সিঙ্গাপুর। এরপর দ্বিতীয়, তৃতীয়, চতুর্থ ও পঞ্চম অবস্থানে রয়েছে যথাক্রমে তাজিকিস্তান (৯৫), নরওয়ে (৯৩), সুইজারল্যান্ড (৯২) ও ইন্দোনেশিয়া (৯২)।
অন্যদিকে ১০০ পয়েন্টের মধ্যে মাত্র ৫১ স্কোর নিয়ে সূচকে সবচেয়ে নিচে রয়েছে আফগানিস্তান। তলানিতে থাকা ৫টি দেশের অন্য চারটি হলো- গ্যাবন (৫৪), ভেনেজুয়েলা (৫৫), ডেমোক্র্যাটিক রিপাবলিক অব কঙ্গো বা ডিআর কঙ্গো (৫৮) এবং সিয়েরা লিওন (৫৯)।
সূচকে নেপাল বাংলাদেশের চেয়ে পিছিয়ে রয়েছে। গ্যালাপের সূচকে পার্বত্য এই দেশটির স্কোর ৭৮। এছাড়া অন্যান্য দেশের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের স্কোর ৮৩, যুক্তরাজ্যের ৭৯, রাশিয়া ৭৭, সৌদি আরব ৮৯ এবং আরব আমিরাতের স্কোর ৯২।
মূলত কয়েকটি প্রশ্নের ওপর ভিত্তি করে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি বা অবনতির এই স্কোর নির্ধারণ করা হয়ে থাকে। এগুলো হচ্ছে- বাসিন্দারা নিজ এলাকায় রাতে একা একা হাঁটতে নিরাপদ বোধ করছেন কিনা, স্থানীয় পুলিশের প্রতি বাসিন্দারা আস্থা রাখছেন কিনা। এছাড়া চুরি, ছিনতাই বা হামলার শিকার হওয়ার বিষয়টিও এই স্কোর নির্ধারণের ক্ষেত্রে বিবেচনায় নেওয়া হয়ে থাকে।
গ্যালাপের সূচক অনুসারে, আফগানিস্তান এমন একটি দেশ যেখানে তালিবান গোষ্ঠীর ক্ষমতা দখলের পর রাতের বেলা একা হাঁটার সময় জনগণের নিরাপদ বোধ করার ‘সম্ভাবনা কম’।
বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে দাবি করা হয়, ২০২১ সালে তালিবান গোষ্ঠী কাবুলের ক্ষমতা দখল করার পর থেকে অভূতপূর্ব মাত্রার অর্থনৈতিক, আর্থিক এবং মানবিক সংকটের কারণে আফগানিস্তানজুড়ে মানবাধিকার পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়েছে।
বাসিন্দারা নিজ এলাকায় রাতে একা একা হাঁটতে নিরাপদ বোধ করছেন কিনা, স্থানীয় পুলিশের প্রতি বাসিন্দারা আস্থা রাখছেন কিনা। এছাড়া চুরি, ছিনতাই বা হামলার শিকার হওয়ার বিষয়টিও এই স্কোর নির্ধারণের ক্ষেত্রে বিবেচনায় নেওয়া হয়ে থাকে।
এছাড়া নাজুক নিরাপত্তা পরিস্থিতির কারণে আফগানিস্তানে সন্ত্রাস, হত্যাকাণ্ড, বিস্ফোরণ এবং হামলার ঘটনা নিয়মিত ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এমনকি তালিবানের অধীনে আফগান ভূখণ্ডে নারী শিক্ষার সুযোগ সীমিত করাসহ মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটছে বলেও অভিযোগ রয়েছে।
দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির বিষয়ে সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা বলেন, দেশে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড বৃদ্ধির চারটি সুস্পষ্ট কারণ রয়েছে। এগুলো হলো-ক্রাইম ম্যাপিংয়ে ‘হট স্পট’ চিহ্নিত না করা; খুনি বা অপরাধীকে ভয় দেখানোর ক্ষেত্রে ব্যর্থতা, দুর্বল মামলা এবং তদন্ত রিপোর্ট ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির অভাব। এছাড়া রাজনৈতিক প্রভাবে শাস্তি এড়িয়ে যাওয়ার সংস্কৃতিও একটি বড় কারণ বলে মনে করা হয়। এ কারণে একদিকে যেমন অপরাধীদের গায়ে হাত দেওয়া যাচ্ছে না; অন্যদিকে গ্রেপ্তার হলেও তাদের আটকে রাখা সম্ভব হচ্ছে না।
তারা বলেন, বলার অপেক্ষা রাখে না, নৃশংস হত্যাকাণ্ডসহ অন্যান্য অপরাধের মাত্রা কমাতে হলে প্রথমে এর পেছনে থাকা কারণগুলো চিহ্নিত করে তা নিরসনের উদ্যোগ নিতে হবে। খুনসহ অন্যান্য অপরাধের ঘটনা যথাযথ তদন্তের মাধ্যমে অপরাধীদের আইনের আওতায় এনে শাস্তি নিশ্চিত করা গেলে ধর্ষণ হত্যাকাণ্ডসহ অন্যান্য সামাজিক অপরাধ কমে আসবে-এতে কোনো সন্দেহ নেই।
অবশ্য আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি জবাবদিহিতা প্রতিষ্ঠাও জরুরি। দেশে শান্তি-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকার ক্ষেত্রে জবাবদিহিতা অন্যতম শর্ত হলেও দুঃখজনক হলো, রাষ্ট্রে তার ব্যাপক ঘাটতি রয়েছে। জাতীয় সংসদে কার্যকর কোনো বিরোধী দল নেই। সংসদে শক্তিশালী বিরোধী দল না থাকলে সরকারের ভুলক্রটিগুলো চিহ্নিত করার মতো কেউ থাকে না। তখন এর সুযোগ নিয়ে অপরাধীরা বেপরোয়া হয়ে ওঠে।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৬০০
আপনার মতামত জানানঃ