নতুন রাজনৈতিক দল গঠন করতে যাচ্ছে জামায়াতে ইসলামী। ‘বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট পার্টি’ বা ‘বাংলাদেশ ওয়েলফেয়ার পার্টি’ নামে নিবন্ধন করার যাবতীয় প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে।
দলটির নিবন্ধনের জন্য বুধবার নির্বাচন কমিশনে (ইসি) আবেদন করা হবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র থেকে জানা গেছে। নতুন এই দলের সভাপতি হচ্ছেন জামায়াতের ডেমরা থানার আমির আনোয়ার হোসেন। আর সাধারণ সম্পাদক হলেন ছাত্রশিবিরের সাবেক বিদেশবিষয়ক সম্পাদক এবং বর্তমানে জামায়াতে ঢাকা মহানগর দক্ষিণের কর্মপরিষদের সদস্য নিজামুল হক (নাঈম)।
দলের নিবন্ধন নিয়ে দীর্ঘ জটিলতায় রয়েছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধে বিরোধীতার দায়ে ২০১৩ সালের ১ আগস্ট দলটির নিবন্ধন বাতিল ও অবৈধ ঘোষণা করে রায় দেন হাইকোর্ট। এর পাঁচ বছর পর ২০১৮ সালের ২৯ অক্টোবর দলটির নিবন্ধন বাতিল করে প্রজ্ঞাপন জারি করে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এর পর থেকে নতুন নামে রাজনীতিতে আসার বিষয়ে দলটিতে আলোচনা-সমালোচনা কম হয়নি।
স্বাধীনতা যুদ্ধে জামায়াতের ভূমিকার জন্য ক্ষমা চাওয়া ও দলের নাম পরিবর্তনসহ বেশ কিছু সংস্কারের দাবি নিয়ে দলের ভেতরে হয়েছে বিদ্রোহও। এ নিয়ে বির্তকের জেরে জামায়াত ছেড়েছেন অনেকে।
জামায়াত-সংশ্লিষ্ট সূত্র থেকে জানা গেছে, আগামী জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে জামায়াতে ইসলামী ‘বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট পার্টি’ নামে দল নিবন্ধনের জন্য বুধবার নির্বাচন কমিশনে আবেদন করবে। এ জন্য অপেক্ষাকৃত কম পরিচিত ব্যক্তিদের দিয়ে কমিটি করেছে।
এ বিষয়ে জামায়াতের ঢাকার একটি জোনের পরিচালক বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘নতুন নামে পলিটিক্যাল পার্টি আসবে। প্রস্তাবিত নাম ‘বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট পার্টি’। দায়িত্বে কারা থাকবেন দুদিনের মধ্যে পরিষ্কার হয়ে যাবে। সবকিছু আন্ডার প্রসেস। তবে জামায়াতের কেন্দ্রীয় কমিটির এখনকার নেতাদের কেউ থাকবেন না। নিবন্ধনের জন্য ইতিবাচক সিগন্যাল আছে। জামায়াতের গঠনতন্ত্রের কাছাকাছি গঠনতন্ত্র হয়েছে। ইসলামের নামে কিছু থাকবে না। সবকিছু ধীরে ধীরে হবে। গঠনতন্ত্রে মুক্তিযুদ্ধ থাকবে।’
জামায়াতের সাংগঠনিক এই নেতা এও জানান, নতুন দলে যারা আসবেন বা থাকবেন, তাদের জামায়াত থেকে পদত্যাগ করানো হবে। না হলে রাজনৈতিক কৌশলের কারণে বহিষ্কারও দেখানো হতে পারে।
জামায়াতের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সূত্রগুলো বাংলা ট্রিবিউনকে জানিয়েছে, রাজধানীর নয়া পল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের আশপাশেই নতুন দলের অফিস খোঁজা হচ্ছে। এছাড়া, ইসলামী ব্যাংক মালিবাগ শাখায় দলের অ্যাকাউন্ট পরিচালনা করার জন্য চেষ্টা করা হচ্ছে। মঙ্গলবার রাত ১০টা পর্যন্ত ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খোলার প্রক্রিয়া নিষ্পন্ন হয়নি বলেও জানায় সূত্র।
জামায়াতের গঠনতন্ত্রের কাছাকাছি গঠনতন্ত্র হয়েছে। ইসলামের নামে কিছু থাকবে না। সবকিছু ধীরে ধীরে হবে। গঠনতন্ত্রে মুক্তিযুদ্ধ থাকবে।
জামায়াতের একজন উচ্চপর্যায়ের দায়িত্বশীল জানান, অন্তত সপ্তাহখানেক আগে জামায়াতের উচ্চপর্যায়ের একটি বৈঠকে নতুন নামে দলের নিবন্ধনের জন্য আবেদন করার সিদ্ধান্ত হয়। ওই বৈঠকে জামায়াতের আমির ডা. শফিকুর রহমান ‘অপরিচিত কিছু নেতা’ বের করে নতুন দলের দায়িত্বে আনার জন্য নির্দেশনা দিয়েছেন। যাদের জামায়াত হিসেবে চিহ্নিত করা যাবে না, এমন ব্যক্তিদের নতুন দলে দায়িত্ব দেওয়ার পরামর্শ দেন তিনি। সূত্রের দাবি, নিবন্ধন হয়ে গেলে পরে অপরিচিতদের সরিয়ে মূল নেতাদের সামনে আনা হতে পারে।
জামায়াতের উচ্চপর্যায়ের একজন নেতা বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, ইতোমধ্যে নির্বাচন কমিশনে জাস্টিজ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট পার্টি নামে একটি দল আবেদন করেছে। এই দলটিতেও জামায়াত শিবিরের নেতাকর্মীরা রয়েছেন। এছাড়া অন্তত আরও প্রায় ৭টি দল রয়েছে, যেগুলোতে জামায়াত-শিবিরের নেতারা বিভিন্ন পদে রয়েছেন।
দলটির একাধিক সূত্র জানায়, নবগঠিত দলে প্রভাবশালী অবস্থানেও থাকছে সংস্কারবাদী তরূণ নেতারা। বিশেষ করে জামায়াতের প্রবীন নেতাদের বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধ ইস্যুতে বিতর্ক থাকায় এই দলের নেতৃত্বে আনা হচ্ছে মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী সময়ে জন্ম নেওয়া নেতাকর্মী ও মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সন্তানদের। নতুন দলের সব কমিটিতেও রাখা হয়েছে অপেক্ষাকৃত কম পরিচিত ব্যক্তিদের। এছাড়া দল হিসেবে ধর্মীয় রাজনৈতিক দলের পরিচয় থেকেও সরে আসছে জামায়াত।
ভিন্ন নামে নিবন্ধন পেতে যাচ্ছে জামায়াত
এদিকে শর্ত পূরণ করে ভিন্ন নামে জামায়াত ইসির নিবন্ধন পেতে পারে বলে জানিয়েছেন নির্বাচন কমিশনার (ইসি) মো. আলমগীর। আজ বুধবার দুপুরে সাংবাদিকদের তিনি এ তথ্য জানান।
ইসি বলেন, ‘জামায়াতের কেউ যদি যুদ্ধাপরাধী না হয় এবং তাদের গঠনতন্ত্র যদি সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক না হয়, তাহলে শর্ত পূরণ করে ভিন্ন নামে তাদের নিবন্ধন পেতে বাধা নেই।’
এর আগে অবশ্য যুদ্ধাপরাধের দায়ে অভিযুক্ত রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ভিন্ন নামে আবেদন করলেও তাদের নিবন্ধন পাওয়ার সুযোগ নেই বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছিলেন নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর।
তিনি বলেছিলেন, দলটির নিবন্ধন আদালতের আদেশে বাতিল হয়েছে। তাই ঐ দলের ব্যক্তিরা ভিন্ন নামে আবেদন করলেও নিবন্ধন পাওয়ার সুযোগ নেই। গত ২৯ আগস্ট নির্বাচন ভবনের নিজ দপ্তরে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এমন কথা বলেন।
যদি নতুন করে আবেদন করে একই মানুষ, কিন্তু ভিন্ন দল, তাহলে কী সুযোগ আছে—এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘একই মানুষ আসবে কি না, তাতো আর বলতে পারব না। যারা আবেদন করছেন, যদি দেখি যে ক্রাইরেটিয়া মেলে না, তাহলে তো দিতে পারব না।’
উচ্চ আদালতের আদেশে ২০১৮ সালের ২৮ অক্টোবর দলটির নিবন্ধন বাতিল করে প্রজ্ঞাপন জারি করে ইসি। আপিল বিভাগ জামায়াতের সেই আপিল খারিজ করে দেয় ২০২০ সালের ৫ আগস্ট।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৬০৪
আপনার মতামত জানানঃ