যুক্তরাষ্ট্রে এর আগে কোভিড-১৯-এর জন্য যেসব আর্থিক প্রণোদনার ব্যবস্থা ছিল সেগুলোর বেশিরভাগের মেয়াদ এ মাসেই শেষ হওয়ার কথা। এদিকে করোনার প্রকোপ আবারও বাড়ছে। ক্ষতিগ্রস্ত অনেকে আগের ঝক্কিই কাটিয়ে উঠতে পারেননি। এর মধ্যে নতুন করে আবার লকডাউনের ছায়া সে দেশের জনগণের মধ্যে প্রণোদনার দাবিকে জোরদার করে তুলছিল। কংগ্রেস অবশ্য বেশ কয়েক মাস চেষ্টা করে একটা সমাধানে পৌঁছেছে। কিন্তু প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের তাতে সম্মতি নেই।
অনেক তর্ক বিতর্কের পর করোনা মহামারীর দ্বিতীয় ধহাক্কা মোকাবিলার জন্য প্রায় ৯০ হাজার কোটি ডলারের প্রণোদনা প্যাকেজে সম্মত হন যুক্তরাষ্ট্রের আইনপ্রণেতারা। কিন্তু দেশটির কংগ্রেসে পাস হওয়া এই কভিড রিলিফ বিলকে ‘অপব্যয়’ বলে আখ্যায়িত করেছেন বিদায়ী প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তার মতে এই প্রণোদনা প্যাকেজ যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকদের জন্য ‘অসম্মানজনক’। বিলটি কার্যকর হওয়ার জন্য ট্রাম্পের স্বাক্ষরের প্রয়োজন। কিন্তু তার ভেটোর কারণে তা হচ্ছে না।
কী আছে প্যাকেজে
রিলিফ প্যাকেজে নানা ধরনের বিধান রাখা হয়েছে। যার ফলে মহামারীর কারণে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত লাখ লাখ নাগরিক উপকৃত হবেন বলে আশা করা হচ্ছে। এতে এককালীন যে ৬০০ ডলার দেওয়ার কথা বলা হচ্ছে তা মার্চে দেওয়া প্রণোদনার তুলনায় অর্ধেক।
এই প্যাকেজের আওতায় ফেডারেল বেকারভাতা সপ্তাহে ৩০০ ডলার পর্যন্ত করা হয়েছে, যা ১১ সপ্তাহ পর্যন্ত দেওয়া হবে। এ ছাড়া বাড়িভাড়া বাবদ সহায়তা প্যাকেজে ২ হাজার ৫০০ কোটি ডলার রাখা রয়েছে। সেই সঙ্গে এ মাসের মধ্যে বাড়িভাড়ার মেয়াদ শেষ হলে কাউকে উচ্ছেদের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। এর বাইরে হাসপাতালে আকস্মিক আকাশচুম্বী বিলও যাতে না করা হয় তার ওপরও নিষেধাজ্ঞা আনা হয়েছে।
গত সোমবার কংগ্রেসের নেতারা সাড়ে পাঁচ হাজার পৃষ্ঠারও বেশি বড় এই বিল উপস্থাপন করেন এবং কয়েক ঘণ্টা পর এর ভোটাভুটি হয়। কয়েকজন আইনপ্রণেতা অভিযোগ করেন যে, মতামত দেওয়ার জন্য তারা বিলটি পুরো পড়েও উঠতে পারেননি। তা সত্ত্বেও বিলটি হাউজ অব রিপ্রেজেন্টেটিভে ৩৫৯-৫৩ ভোটে এবং সিনেটে ৯২-৬ ভোটে পাস হয়েছে।
প্রেসিডেন্টের আপত্তি কোথায়
গত মঙ্গলবার রাতে এক টুইট বার্তায় এই বিলকে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ‘অসম্মানজনক’ ও ‘অপব্যয়’ বলে আখ্যায়িত করেছেন। তার মতে, এত অল্প ডলারের প্যাকেজের কোভিড মোকাবিলার সামর্থ্য নেই। তাই যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকদের জন্য মাথাপিছু বরাদ্দের হার বাড়ানোর জন্য তিনি কংগ্রেসের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, বিলের নাম দেওয়া হয়েছে কোভিড রিলিফ বিল, কিন্তু কোভিডের সঙ্গে এর প্রায় কোনো সম্পর্কই নেই।
৯০ হাজার কোটি ডলারের এই প্রণোদনা প্যাকেজে প্রত্যেক নাগরিকের জন্য ৬০০ ডলার করে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ওই বরাদ্দ জনপ্রতি ২ হাজার ডলার করার আহ্বান জানিয়েছেন। দেশটির আইনপ্রণেতাদের প্রতি তিনি অপ্রয়োজনীয় ও অযথা ব্যয় কমিয়ে মাথাপিছু বরাদ্দ বাড়াতে বলেছেন। তিনি বলেন, আমি কংগ্রেসকে বলেছি এই বিল সংস্কার করতে এবং হাস্যকর এ বরাদ্দ জনপ্রতি ৬০০ ডলার থেকে বাড়িয়ে ২ হাজার ডলার বা দম্পতিদের জন্য ৪ হাজার ডলার করা হোক।
বিলটিতে বিদেশি সংস্থা ও দেশকে দেয়া বরাদ্দ অপ্রয়োজনীয় বলে মনে করছেন ট্রাম্প। এই বিলে কোন কোন দেশের জন্য অর্থ বরাদ্দ করা হয়েছে, টুইটে তারও ফিরিস্তি তুলে ধরেছেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। বিলে উল্লেখ করা হয়েছে, কম্বোডিয়াকে সাহায্য করা হবে ৮ কোটি ৫৫ লাখ ডলার। মিয়ানমারকে দেয়া হবে ১৩ কোটি ৪০ লাখ ডলার এবং মিশর ও সে দেশের সেনাবাহিনীর জন্য দেয়া হচ্ছে ১৩ লাখ ডলার বরাদ্দ রাখা হয়েছে। ট্রাম্প বলেছেন, এই অর্থ দিয়ে তারা রাশিয়ার কাছ থেকে সামরিক সরঞ্জাম কিনতে পারে।
অন্য দেশের জন্য আর্থিক সহায়তার সমালোচনা করে ট্রাম্প বলেন, ওই অর্থ দুঃস্থ নাগরিকদের জন্য খরচ করা উচিত। সামনের মাসে দায়িত্ব হস্তান্তর করতে যাওয়া এই প্রেসিডেন্ট বলেন, কংগ্রেস অন্য রাষ্ট্র, লবিস্ট আর বিশেষ স্বার্থের জন্য অনেক টাকা খুঁজে পায়। কিন্তু দেশের মানুষের জন্য সামান্যই খরচ করে।
কংগ্রেসে পাস হওয়া বহুল আলোচিত এই বিলে ট্রাম্প স্বাক্ষর করতে ইতস্তত করার পর ইতিমধ্যে ২ হাজার ডলারের প্রণোদনার একটি সংশোধনী প্রস্তাব এনেছে কংগ্রেস। কিন্তু বিদেশে অপ্রয়োজনীয় বরাদ্দের বিষয়ে ট্রাম্পের মন গলবে কিনা তা এখনো পরিষ্কার নয়। ট্রাম্প স্বাক্ষর না করলে তার বিদায়ের আগ পর্যন্ত এ বিল কার্যকর করা যাবে না। গত কয়েক মাস ধরেই এই বিলটি নিয়ে বহু আলোচনা-সমালোচনা হয়েছে দেশটিতে। এখন এটি বিশ্ব রাজনীতির অংশ হয়ে উঠল।
এসডাব্লিউ/এসএন/আরা/১২৪০
আপনার মতামত জানানঃ