‘ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও’ নিরাপত্তা ঝুঁকি বিবেচনায় রাফিদা আহমেদ বন্যা স্বামী অভিজিৎ রায় হত্যা মামলায় সাক্ষ্য দিতে আসছেন না বলে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী গোলাম সারোয়ার জাকির গতকাল গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন। মঙ্গলবার ঢাকার সন্ত্রাসবিরোধী বিশেষ ট্রাইব্যুনালে এই মামলার প্রথম তদন্ত কর্মকর্তা সাক্ষ্য দেওয়ার পর একথা বলেন তিনি। রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী গোলাম সারোয়ার জাকির এর বক্তব্যের বরাত দিয়ে গতকাল অনেকগুলো গণমাধ্যমে এমন সংবাদ প্রকাশ হয়েছে। এই সংবাদের প্রতিক্রিয়ায় অভিজিৎ রায় এর স্ত্রী বন্যা আহমেদ আজ (বুধবার) সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে এক লেখায় রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবির তার সাথে যোগাযোগ করার দাবীকে নির্লজ্জ মিথ্যাচার বলে উল্লেখ করেছেন। তিনি ফেসবুকের ঐ লেখাতে বলেন, “আমার সাথে গত ছয় (প্রায়) বছরে এফবিআই ছাড়া কেউ যোগাযোগ করেনি। আগেও লিখেছি এ নিয়ে, এখন আবারো বলছি, বাংলাদেশ সরকার বা আমেরিকায় বাংলাদেশের এম্বাসি থেকে কেউ কখনো যোগাযোগ করেনি আমার সাথে।”
মামলা পরিচালনায় বিশেষ প্রসিকিউটর হিসেবে দায়িত্ব পালনকারী জাকিরের কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল রাফিদা আহমেদ বন্যা সাক্ষ্য দিতে যুক্তরাষ্ট্র থেকে আসছেন কি না। জবাবে তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকের সাংবাদিককে বলেন, “তাকে যথাযথ পদ্ধতিতে দূতাবাসের মাধ্যমে আদালতের সমন পাঠানো হয়েছিল। তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে তার সঙ্গে টেলিফোনে কথাও বলা হয়েছিল। কিন্তু তিনি বলেছেন, সাক্ষ্য দেওয়ার আমার শতভাগ ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে আসতে পারছি না।”
বিজ্ঞানমনস্ক লেখক ও মুক্তমনা ব্লগের প্রতিষ্ঠাতা অভিজিৎ রায় স্ত্রীকে নিয়ে থাকতেন যুক্তরাষ্ট্রে। ২০১৫ সালে বইমেলা উপলক্ষে দেশে ফিরেছিলেন দুজন। ২৬ ফেব্রুয়ারি ঢাকা পৌঁছানোর পর রাতে বইমেলা থেকে ফেরার পথে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি এলাকায় সন্ত্রাসী হামলার শিকার হন তারা। সন্ত্রাসীর চাপাতির আঘাতে নিহত হন অভিজিৎ, তার স্ত্রীও বন্যাও গুরুতর আহত হয়েছিলেন। তার হাতের একটি আঙুল কাটা পড়ে। পরে যুক্তরাষ্ট্রে ফিরে যান তিনি।
ফেসবুকে প্রকাশিত প্রতিক্রিয়ায় বন্যা আহমেদ লিখেন, আমার সাথে গত ছয়(প্রায়) বছরে এফবিআই ছাড়া কেউ যোগাযোগ করেনি। আগেও লিখেছি এ নিয়ে, এখন আবারো বলছি, বাংলাদেশ সরকার বা আমেরিকায় বাংলাদেশের এম্বাসি থেকে কেউ কখনো যোগাযোগ করেনি আমার সাথে। কেউ আমাকে সাক্ষী দিতে বলেনি, বাংলাদেশের কেউ সরাসরি জানতে চায়নি বা আমাকে জানায়নি কী হয়েছিল সেদিন, কাদের সাথে আমাদের যোগাযোগ ছিল, কাদের আমন্ত্রণে সেদিন আমরা মেলায় গিয়েছিলাম, কেন সেদিন বিকেল ৫:০০টায় দেখা করার কথা বলেও ফারসীম মান্নানরা সন্ধ্যা ৭:০০টা পর্যন্ত দেরি করিয়েছিল, এ ব্যাপারে কোন তদন্ত হয়েছে কিনা, কেন সারা মেলায় সিসিটিভি ক্যামেরা থাকলেও ঠিক যেখানে আমাদের উপর আক্রমণ করা হয়েছিল সেখানে ছিল না।
রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবির মিথ্যাচারের জবাবে ফেসবুকে বন্যা আহমেদের লেখাটি প্রকাশ হওয়ার পর অনেকেই প্রতিবাদ জানিয়েছেন। এক্টিভিস্টদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। সুব্রত শুভ নামের একজন ব্লগার ও এক্টিভিস্ট বন্যা আহমেদ এর লেখায় মন্তব্যে লিখেন, “এই বক্তব্যের উপর আপনার মতামত কী, কিংবা এই কথা কতোটুকু সত্য সাংবাদিকও তা যাচাই করার প্রয়োজন বোধ করে নাই। তারা শুধু উকিলের বক্তব্যই ছেপে দিয়েছে।। এখন যারা আপনার ফেসবুক ফলো করে না তারা তো শুধু উকিলের কথা ধরে বসে থাকবে…।।”
মনোয়ার হোসেন নামের অন্য একজন লিখেছেন, “বিডিনিউজ এ খবরটি পড়েই আমার মনে হয়েছে মিথ্যা, তথ্য প্রযুক্তির এই যুগে গোয়েবলসীয় মিথ্যা সহজে সনাক্ত করা সম্ভব।” আদিল মাহমুদ নামের অন্য একজন এক্টিভিস্ট মন্তব্যে লিখেছেন, “বাংলাদেশে এখন গুরুত্বপূর্ন লোকদেরও ডাহা মিথ্যা কথা বলা তেমন কোন বিষয় না। কেউ ব্যাখ্যা চাইলে জাকির মিয়া বলবে দূতাবাস আমাকে তাই বলেছে, দূতাবাসকে জিজ্ঞাসা করলে বলবে কে কবে যোগাযোগ করেছিল খোজ নিয়ে জানানো হবে…এই প্রক্রিয়ায় চক্রের ব্যাসার্ধ বাড়তে বাড়তে এক সময় ইস্যু হালকা হয়ে যাবে। কারো ওপরেই দায়ভার যাবে না।”
অভিজিৎ রায় হত্যার মত চাঞ্চল্যকর মামলায় রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবির এমন মিথ্যাচারে বিচার বিভাগের দূর্বলতা এবং রাষ্ট্রের নাগরিকদের সুবিচার পাওয়ার অধিকারকে রাষ্ট্র কর্তৃক উপহাস বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞমহল।
এসডব্লিউ/নসদ/১০৩০
আপনার মতামত জানানঃ