সদ্য বিদায়ী সেপ্টেম্বরে পোশাক রফতানি অস্বাভাবিকভাবে কমে গেছে। ২০২১ সালের সেপ্টেম্বর মাসের তুলনায় প্রবৃদ্ধি ৭.৫২ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে।
রোববার (২ অক্টোবর) রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) হালনাগাদ তথ্যের সূত্রে জানা গেছে।
তবে ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রথম ত্রৈমাসিকে তৈরি পোশাক রফতানি ১০.২৭ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে, যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ১৩.৪১ শতাংশ বেশি।
ইপিবির তথ্য বলছে, তৈরি পোশাক নিটওয়্যার রফতানি ৯ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে, আর ওভেন পোশাক রফতানি হ্রাস পেয়েছে ৫.৬৬ শতাংশ।
করোনার প্রভাবে টানা দুই বছর স্থবিরতা কাটিয়ে উঠার সঙ্গে সঙ্গে শুরু হয়েছে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ। এর প্রভাবে বিশ্ব অর্থনীতিতে রফতানি আয় কমবে বলে আশঙ্কা করছিলেন রফতানিকারকরা।
এ প্রসঙ্গে তৈরি পোশাক কারখানা মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ’র পরিচালক মহিউদ্দিন রুবেল বলেন, সেপ্টেম্বর থেকে যে প্রবৃদ্ধিতে মন্দা হবে, সে বিষয়ে বিজিএমইএ ইতোমধ্যে আশঙ্কা প্রকাশ করেছে। সেপ্টেম্বরের রফতানি পরিসংখ্যানে তা স্পষ্ট প্রতিফলিত হয়েছে।
তিনি বলেন, কোভিড পরবর্তীতে বিশ্বব্যাপী খুচরা বাজার বিভিন্ন সংকটের কারণে ব্যাহত হচ্ছে। বিশেষ করে, কনটেইনারের অপ্রতুলতা এবং সাপ্লাই চেইন সংকট, কাঁচামালের মূল্য বৃদ্ধি এবং পরবর্তীতে বিশ্ব অর্থনীতিতে পূর্বাভাস অনুযায়ী মন্দার আবির্ভাবের কারণে খুচরা বিক্রয়ে ধ্বস নেমেছে। ক্রেতাদের পোশাকের চাহিদা হ্রাস পাচ্ছে।
বিজিএমইএ’র মুখপাত্র আরও বলেন, ক্রেতারা তাদের ইনভেন্টরি এবং সাপ্লাই চেইনকে নিজেদের জন্য লাভজনক রাখতে সতর্কতামূলক পদক্ষেপগুলো গ্রহণ করেছে— এমনকি তাদের মধ্যে কেউ কেউ উৎপাদন এবং অর্ডার পর্যন্ত আটকে রেখেছে। সামগ্রিকভাবে শিল্পের জন্য একটি বিপর্যয়কর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। যদিও আমরা টেকসই উন্নয়ন এবং প্রতিযোগী সক্ষমতায় আমাদের শক্তি দেখিয়েছি, তারপরও বৈশ্বিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি ২০২২ সালের শেষ ত্রৈমাসিকের জন্য আশাব্যঞ্জক কিছু অনুমান করা কঠিন করে তোলে।
ইপিবির তথ্যে দেখা যায়, চলতি অর্থবছরের জুলাই-আগস্ট সময়ে তৈরি পোশাক রফতানি থেকে এসেছে এক হাজার ২৭কোটি ৪৩ লাখ ডলার, যা গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ১৩ দশমিক ৪১ শতাংশ বেশি।
ইপিবির তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, জুলাই-আগস্ট ও সেপ্টেম্বর এই তিন মাসের মধ্যে সবচেয়ে কম পোশাক রফতানি হয়েছে গত সেপ্টেম্বর মাসে। সেপ্টেম্বর মাসে পোশাক রফতানিতে আয় হয়েছে ৩১৬ কোটি ডলার। আগের বছরের সেপ্টেম্বরে এসেছিল ৩৪১ কোটি ডলার। চলতি বছরের আগস্টে পোশাক রফতানি করে আয় হয়েছিল ৩৭৪ কোটি ডলার। আর আগের মাস জুলাইয়ে রফতানি হয়েছিল ৩৩৬ কোটি ডলার।
জুলাই-আগস্ট ও সেপ্টেম্বর এই তিন মাসের মধ্যে সবচেয়ে কম পোশাক রফতানি হয়েছে গত সেপ্টেম্বর মাসে। সেপ্টেম্বর মাসে পোশাক রফতানিতে আয় হয়েছে ৩১৬ কোটি ডলার।
ইপিবির তথ্য অনুযায়ী সেপ্টেম্বরে নিট পোশাক থেকে এসেছে ১৭৩ কোটি ডলার। আগের বছরের একই সময়ে রফতানি হয়েছিল ১৯০ কোটি ডলার। আর সেপ্টেম্বর মাসে ওভেন পোশাক রফতানি হয়েছে ১৪২ কোটি ডলার। আগের বছরের একই সময়ে রফতানি হয়েছিল ১৫১ কোটি ডলার।
ইপিবির তথ্য বলছে, পোশাক রফতানি কমে যাওয়ার প্রভাব পড়েছে সার্বিক রফতানি খাতে। সদ্য সমাপ্ত সেপ্টেম্বর মাসে বিভিন্ন দেশে ৩৯০ কোটি ৫০ লাখ ডলার (৩ দশমিক ৯০ বিলিয়ন ডলার) পণ্য রফতানি করেছেন উদ্যোক্তারা। এই আয় গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ৬ দশমিক ২৫ শতাংশ কম। আর নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৭ দশমিক শূন্য ২ শতাংশ কম। গত সেপ্টেম্বরে পণ্য রফতানি থেকে ৪ দশমিক ২০ বিলিয়ন ডলার আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল সরকারের।
যদিও আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে জুলাইয়ে পোশাক খাতে রফতানি ১৬ দশমিক ৬১ বেড়েছিল। এছাড়া আগস্টে পোশাক খাতে রফতানি বেড়েছিল ৩৬ দশমিক ০৪ শতাংশ।
ইপিবির তথ্য বলছে, পোশাক রফতানি কমে যাওয়ার প্রভাব পড়েছে সার্বিক রফতানি খাতে। সদ্য সমাপ্ত সেপ্টেম্বর মাসে বিভিন্ন দেশে ৩৯০ কোটি ৫০ লাখ ডলার (৩ দশমিক ৯০ বিলিয়ন ডলার) পণ্য রফতানি করেছেন উদ্যোক্তারা। এই আয় গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ৬ দশমিক ২৫ শতাংশ কম। আর নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৭ দশমিক শূন্য ২ শতাংশ কম। গত সেপ্টেম্বরে পণ্য রফতানি থেকে ৪ দশমিক ২০ বিলিয়ন ডলার আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল সরকারের।
সেপ্টেম্বর থেকে যে প্রবৃদ্ধিতে মন্দা হবে, সে বিষয়ে ইতোমধ্যে আশঙ্কা প্রকাশ করেছিল বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রফতানিকারক সমিতি (বিজিএমইএ)। যা সেপ্টেম্বরের রফতানি পরিসংখ্যানে স্পষ্টতই প্রতিফলিত হয়েছে।
উল্লেখিত সময়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) শীর্ষ পোশাক আমদানির উৎস ছিল চীন। সেখান থেকে আমদানি ২১ দশমিক ৭৮ শতাংশ বেড়েছে। চীন থেকে তাদের আমদানি ১ হাজার ২২২ কোটি ডলারে পৌঁছেছে।
অপরদিকে তৃতীয় বৃহত্তম পোশাক রফতানিকারক তুরস্ক থেকে ইউরোপের পোশাক আমদানি বেড়েছে ২০ দশমিক ৩৮ শতাংশ। তুরস্কের আমদানির মূল্য ছিল ১ হাজার ৮৯ কোটি ডলার।
একই সময়ে ইউরোপের অন্যান্য শীর্ষ উৎস যেমন কম্বোডিয়া, পাকিস্তান, ইন্দোনেশিয়া ও ভারত থেকে আমদানি যথাক্রমে ২৪ দশমিক ৯০ শতাংশ, ৪০ দশমিক ১৫, ৩২ দশমিক ২৮ এবং ২৮ দশমিক ৬৪ শতাংশ হারে বেড়েছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, আমাদের অর্থনীতির অন্যতম চালিকাশক্তি তৈরি পোশাক শিল্প। দেশে বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের বড় অংশই আসে এ খাত থেকে। আমাদের দেশে এই শিল্পটির প্রসার ঘটে আশির দশকের শেষদিকে। এরপর নানা চড়াই-উতরাই পেরিয়ে, নানা সমস্যা ও সম্ভাবনাকে নিয়েই তৈরি পোশাক শিল্প তার পথচলা অব্যাহত রাখে। একই সঙ্গে দেশের অর্থনীতিতেও রাখছে বড় অবদান। কিন্তু এ শিল্প নিয়ে যদি কোনো শঙ্কা তৈরি হয়, তবে তা আমাদের সামগ্রিক অর্থনীতির জন্যই উদ্বেগের। কারণ এদেশের অর্থনীতির চাকাকে সচল রাখতে যেমন অবদান রাখছে, তেমনি দেশের বেকার সমস্যা সমাধানেও এ শিল্প বড় ভূমিকা রাখছে।
তারা বলেন, আমাদের সক্ষমতা বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া জরুরি, যাতে করে পণ্য রফতানিতে প্রতিযোগী দেশের সঙ্গে পাল্লা দেওয়া সহজ হয়। যে কঠিন সময় আমরা পার করছি তা কাটিয়ে সুসময় ফেরাতে সরকারসহ এই সেক্টরের সবাইকে উদ্যোগী হতে হবে। যদি কোথাও সংশোধনী লাগে, তাও দ্রুত সংশোধনীর উদ্যোগ নিতে হবে। সেই সঙ্গে যেসব রফতানি আদেশ আসে, সেগুলো যেন যথাসময়ে যথানিয়মে, যথাযথভাবে পাঠানো সম্ভব হয়, সেদিকেও মনোযোগী হতে হবে।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/২০৫৩
আপনার মতামত জানানঃ