ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল -১ থেকে বুয়েট শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদ হত্যা মামলাটি স্থানান্তরের আদেশ চেয়ে ২২ আসামির করা আবেদন নাকচ করে দিয়েছেন হাইকোর্ট। গতকাল সোমবার(২১ ডিসেম্বর)বিচারপতি এফআরএম নাজমুল আহসান ও বিচারপতি শাহেদ নুরুদ্দিনের বেঞ্চ এই আবেদনটি প্রত্যাখ্যানের আদেশ দেন।
ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল আবদুল্লাহ আল মাহমুদ বাশার বলেন, ‘বিচারক পরিবর্তন ও আদালত স্থানান্তর চেয়ে আসামিদের আবেদন উত্থাপিত হয়নি মর্মে খারিজ করেছেন হাইকোর্ট। ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-১-এর বিচারক আবু জাফর মো. কামরুজ্জামান আদালতে মামলাটি বর্তমানে সাক্ষ্য গ্রহণের পর্যায়ে রয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘কোনো মামলায় আদালত পরিবর্তন বা অন্য কোনো বিষয়ে আপত্তির জন্যে হাইকোর্টে আবেদন করতে হলে তাকে ওই আদালতে সে সংক্রান্ত আবেদন করে সেটির শুনানির পর তা নিষ্পত্তি করে আসতে হবে। কিন্তু আসামিদের পক্ষ নিম্ন আদালতে কোনো ধরনের আবেদন না করেই তারা আদালত পরিবর্তন চেয়ে হাইকোর্টে আবেদন করেছে। তাই সার্বিক বিষয় বিবেচনা করে হাইকোর্ট সেই আবেদন খারিজ করেছেন এবং বলেছেন আবরার হত্যার ঘটনায় আসামিদের আদালত পরিবর্তনের আবেদন ত্রুটিযুক্ত ছিল।’
এর আগে ৩ ডিসেম্বর নিরপেক্ষ বিচার নিয়ে আশঙ্কা থাকায় ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-১-এর বিচারক আবু জাফর মো. কামরুজ্জামানের প্রতি অনাস্থা জানান আসামিপক্ষের আইনজীবীরা। এই আদালতে মামলাটির বিচারিক কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। বুয়েট শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদ হত্যা মামলায় বেআইনিভাবে মামলার সাক্ষীদের পুনরায় আদালতে ডেকে জবানবন্দি নেয়া হয়েছে। এতে নিরপেক্ষ বিচার নিয়ে আসামিদের ন্যায়বিচারের আশঙ্কা তৈরি হওয়ায় আদালতের প্রতি অনাস্থা জানিয়েছেন কারাগারে আটক ২২ আসামির আইনজীবী।
আবরার হত্যার ঘটনায় বিচারিক আদালতে যে মামলা চলছে সেটি সাক্ষ্যগ্রহণ পর্যায়ে রয়েছে। এখানে মোট ৬০ জন সাক্ষী আছে। এখন পর্যন্ত ৪০ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হয়েছে। কিন্তু মামলার যে ২৫ জন আসামি রয়েছে। তাদের মধ্যে তিনজন পলাতক। আসামিপক্ষ থেকে হাইকোর্টে এসেছিল যে, তারা বিচারিক (নিম্ন) আদালতে ন্যায় বিচার পাবেন না মর্মে আশঙ্কা করেন। তাই এই মামলায় পরবর্তী কার্যক্রম অন্য কোনো আদালতে পরিচালনা করতে চান। এ জন্যে তারা একটি আবেদন করেছিলেন।
আবেদনে বলা হয় , এ আদালতে ‘ন্যায়বিচার না পাওয়ার আশঙ্কা তৈরি হওয়ায়’ তারা অন্য কোনো আদালতে মামলা স্থানান্তরের জন্য হাইকোর্টে আবেদন করবেন।
আবেদনে বলা হয়, রাষ্ট্রপক্ষের ৩১ নম্বর সাক্ষী ডা. সোহেল মাহমুদ সাক্ষ্য দেওয়ার সময় যে জবানবন্দি দিয়েছেন, তা কম্পিউটারে কম্পোজ করা ছিল। তার জবানবন্দি আগেই নথিতে জবানবন্দি হিসেবে সন্নিবেশিত হয়েছে। তাছাড়া আসামিপক্ষের বিভিন্ন সাক্ষীকে জেরার বিষয় হুবুহু রেকর্ড করা হয়নি, যা আইনসম্মত নয়।
রাষ্ট্রপক্ষ থেকে ধারণা করা হয়েছিল ডিসেম্বরের মধ্যে মামলাটি রায় ঘোষণা সম্ভব হবে। কিন্তু আসামিপক্ষ উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হয়ে মিথ্যা তথ্য প্রকাশ করে আদালতের প্রতি অনাস্থা প্রকাশ করে আবেদন করেছে। একইসঙ্গে উচ্চ আদালতে যাবে বলেও জানিয়েছে। এই বিষয়ে ৬ ডিসেম্বর শুনানির জন্য দিন ধার্য ছিল।
পরে ৬ ডিসেম্বর আবরার ফাহাদ হত্যা মামলায় আদালতের প্রতি অনাস্থা এবং মামলা উচ্চ আদালতের বদলি সংক্রান্ত আদেশ জমা দেওয়ার জন্য আদালত ২১ ডিসেম্বর দিন ধার্য করেন। গতকাল সোমবার (২১ ডিসেম্বর) বিচারপতি এফ আর এম নাজমুল আহাসান ও বিচারপতি শাহেদ নুর উদ্দিনের হাইকোর্ট বেঞ্চ আবরার ফাহাদ হত্যা মামলার বিচারক পরিবর্তন ও আদালত স্থানান্তর চেয়ে আসামিদের আবেদন উত্থাপিত হয়নি মর্মে খারিজ করে দেন।
আপনার মতামত জানানঃ