কয়েক সপ্তাহ ধরে বিভিন্ন জায়গায় বিএনপির কর্মসূচিতে হামলার ঘটনা ঘটছে৷ বিএনপির নেতারা বলছেন, হামলা-মামলা করে সরকার টিকে থাকতে চায়৷ আর আওয়ামী লীগের নেতাদের দাবি, ব্যক্তিগত শত্রুতার কারণে হামলা হচ্ছে বিএনপি নেতাদের উপর৷
এদিকে হামলা, মামলা ও সংঘর্ষের মধ্যেই সরকার বিরোধী আন্দোলন আরো তীব্র করতে চাইছে বিএনপি৷ তারা মনে করছে, এই প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়েই সাধারণ মানুষকে সরকারের বিরুদ্ধে মাঠে নামানো যাবে৷
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘‘সরকারের পায়ের তলার মাটি সরে গেছে৷ তাই হামলা-মামলা করে টিকে থাকতে চাইছে৷ এই আন্দোলনেই সরকারের পতন হবে৷’’
এর জবাবে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ বলেন, ‘‘বিএনপির নেতারা কোনো ব্যক্তিগত শত্রুতার কারণে হামলার শিকার হলেও দায় চাপাচ্ছে আওয়ামী লীগের ওপরে৷ আর গত ১২ বছর ধরেই তো তারা সরকারের পতন ঘটাচ্ছে৷ তাদের কথার জবাব দেয়ার প্রয়োজন মনে করি না৷’’
হামলা, সংঘর্ষ, মামলা বাড়ছে
বিএনপির কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে হামলা, সংঘর্ষ, মামলা এবং ১৪৪ ধারার ব্যবহার বাড়ছে৷ শনিবার ঢাকা ও কুমিল্লায় হামলার পর রবিবার লালমনিরহাটে বিএনপির কর্মসূচি পণ্ড করে দিয়েছে পুলিশ৷
ঢাকার বনানী এলাকায় শনিবারের হামলায় বিএনপি নেতা সেলিমা রাহমান, সৈয়দ মেয়াজ্জেম হোসেন আলাল, শিরিন সুলতানা, শামা ওবায়েদ ও তাবিথ আউয়ালসহ কমপক্ষে ২০ জন আহত হয়েছেন৷ আর কুমিল্লায় বরকত উল্লাহ বুলু ও তার স্ত্রী শামীমা বরকত হামলায় গুরুতর আহত হয়েছেন৷
বিএনপি শনিবার ঢাকায় জ্বালানি তেলসহ দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি ও তাদের তিন কর্মী নিহত হওয়ার প্রতিবাদে মোমবাতি প্রজ্জ্বলন এবং মৌন অবস্থান কর্মসূচি পালনের সময় সন্ধ্যায় বনানী এলাকায় হামলার শিকার হন তারা৷
এর আগে গত আগস্টেও বিএনপির শীর্ষ নেতারা হামলার শিকার হন৷ বিএনপি নেতা আবদুল আউয়াল মিন্টুর গাড়ি বহরে হামলা এবং গয়েশ্বর চন্দ্র রায়ের কেরাণীগঞ্জের বাড়িতে হামলা করা হয়৷
মিন্টুর গাড়ি বহরে হামলা হয় ফেনীর দাগনভূঞা এলাকায় যাওয়ার পথে৷ হামলার জন্য বিএনপির পক্ষ থেকে যুবলীগ ও ছাত্রলীগকে দায়ী করা হয়৷
বিএনপির সহ-দপ্তর সম্পাদক তাইফুল ইসলাম টিপু জানিয়েছেন, গত ২২ আগষ্ট থেকে ৯ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বিএনপির কর্মসূচিতে হামলায় চার জন নিহত হয়েছেন৷ আহত হয়েছেন দুই হাজার ৭৬৮ জনের বেশি নেতাকর্মী৷ সারাদেশে মোট মামলা হয়েছে ৭২ টি৷
তিনি জানান, মামলায় নাম উল্লেখ করে চার হাজার ৯৭০ জন নেতা-কর্মীকে আসামি করা হয়েছে৷ অজ্ঞাত আসামি প্রায় ২৩ হাজার ১৫০জন৷ সারাদেশে ২৫ জায়গায় ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে৷ ২৮৪ জনেরও বেশি নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে৷
আর বিএনপি’র নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষের গাড়ি, বাড়িঘর ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ৫০টি হামলা হয়েছে৷ তিনি দাবি করেন, এইসব হামলার জন্য পুলিশ এবং আওয়ামী লীগ ও তার সহযোগি সংগঠনগুলো দায়ী৷
রবিবারও ঢাকার মিরপুর এলাকা থেকে বিএনপির ৯ জন নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে৷ গত বৃহস্পতিবার মিরপুরে বিএনপির কর্মসূচি চলাকালে ‘পুলিশের ওপর হামলা’ মামলায় তাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে পুলিশ জানিয়েছে৷
আন্দোলন আরো তীব্র করবে বিএনপি?
বিএনপির তৃনমূল পর্যায়ের একাধিক নেতা জানিয়েছেন বিভিন্ন ইস্যুতে দলটি সামনে একের পর এক কর্মসূচি দেবে বলে কেন্দ্র থেকে তাদের জানানো হয়েছে৷ এর মধ্য দিয়েই পর্যায়ক্রমে কঠোর কর্মসূচিতে যাবে তারা৷ এইসব কর্মসূচিতে সব পর্যায়ের নেতা-কর্মীদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে৷
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপির ভোলা জেলার তৃণমূল পর্যায়ের এক নেতা জানান, ‘‘এখানে সময়কে গুরুত্ব দেয়া হয়েছে৷ আওয়ামী লীগ বর্তমান মেয়াদে এক বছরের কিছু বেশি সময় ক্ষমতায় আছে৷ তাদের সময় যত কমবে আন্দোলন তত তীব্র করার পরিকল্পনা আছে কেন্দ্রের৷’’
তিনি বলেন, ‘‘এখন বিভিন্ন কর্মসূচিতে প্রচুর দলীয় নেতাকর্মী উপস্থিত হচ্ছেন৷ হামলা মামলা এখন তাদের ভীত করছে না৷ কারণ আমাদের পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে৷’’
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘‘এই হামলা, মামলায় আমরা ভীত নই৷ আমরা আমাদের আন্দোলন আরো তীব্র করব৷ এভাবেই চূড়ান্ত আন্দোলনের মধ্য দিয়ে সরকারের পতন ঘটানো হবে৷’’
তিনি বলেন, ‘‘এই সরকারের পায়ের তলার মাটি সরে গেছে৷ তাই তারা হামলা-মামলার মধ্য দিয়ে টিকে থাকতে চাইছে৷ কিন্তু এতে আমাদের নেতা-কর্মীরা মোটেই ভীত নয়৷ তারা আরো উজ্জীবিত হচ্ছে৷ আমাদের কর্মসূচিগুলোতে প্রচুর লোক হচ্ছে৷ সাধারণ মানুষ অংশ নিচ্ছে৷ এটা এখন আর বিএনপির আন্দোলন নয়৷ দেশের মানুষের আন্দোলন৷ আন্দোলন এখন চূড়ান্ত পর্যায়ে যাচ্ছে৷’’
তিনি মনে করেন, আওয়ামী লীগ আর কোনো রাজনৈতিক কর্মসূচি দিতে পারবে না৷ তাদের সঙ্গে দেশের মানুষ নেই৷ তারা ভয় পেয়েছে তাই বিএনপিকে ভয় দেখাতে চাইছে৷
এসডব্লিউ/এসএস/০৯০৫
আপনার মতামত জানানঃ