আফগানিস্তানে মেয়েদের স্কুল বন্ধ করে উল্টো অভিভাবকদের ওপর দোষ চাপাচ্ছে তালিবান। বলছে যে, লোকেরা বর্তমান পরিস্থিতিতে তাদের মেয়েদের স্কুলে দিতে চায় না।
রোববার আফগানিস্তানের ভারপ্রাপ্ত শিক্ষামন্ত্রী দাবি করেছেন, দেশটির মানুষ চায় না বর্তমান পরিস্থিতিতে আফগান মেয়েরা স্কুলে পড়ুক।
দেশটির উরুজগান প্রদেশ পরিদর্শনকালে এমনটাই বলেছেন তালিবান সরকারের শিক্ষামন্ত্রী নুরুল্লাহ মুনির।
মুনিরের মতে, সাংস্কৃতিক সীমাবদ্ধতার কারণে ষষ্ঠ শ্রেণির ওপরের মেয়ে শিক্ষার্থীদের জন্য স্কুলগুলো বন্ধ রয়েছে।
তিনি জোর দিয়ে বলেছেন, আরও ভালো পরিবেশ তৈরি হলে ষষ্ঠ শ্রেণির ওপরের মেয়েরাও পড়াশোনার সুযোগ পাবে।
ভারপ্রাপ্ত শিক্ষামন্ত্রী আরও বলেন, ‘আপনি যদি জিজ্ঞাসা করেন যে এই মসজিদে কতজন লোক তাদের ১৬ বছর বয়সী মেয়েকে স্কুলে পাঠাতে ইচ্ছুক, তাহলে আমাকে একই প্রশ্ন (মেয়েদের শিক্ষাসংক্রান্ত) জিজ্ঞাসা করার প্রয়োজন হবে না। আপনি এবং আমি উভয়ই একই আফগান সমাজ ও সংস্কৃতিতে বড় হয়েছি। সবার কাছে তা পরিষ্কার।’
যদিও উরুজগানের অনেক বাসিন্দাই বলেছেন, ইসলামিক আমিরাত অনুমতি দিলে তারা তাদের মেয়েকে স্কুলে পাঠাতে প্রস্তুত।
বাসিন্দারা বর্তমান সরকারকে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব মেয়েদের স্কুলগুলো পুনরায় চালু করার অনুরোধ করেছেন।
উরুজগানের নাগরিক সমাজের প্রতিনিধি জাভিদ খপলওয়াক বলেন, ‘আমি মনে করি যে মন্ত্রী কাবুল থেকে এসেছেন এবং তিনি আমাদের জনগণের প্রতিনিধিত্ব করতে পারবেন না, কারণ তিনি কাবুল থেকে এসেছেন। উরুজগানের মানুষ চায় তাদের মেয়েরা স্কুলে ফিরে যাক। তারা আগে স্কুলে যেত।’
রাজ্যের আরেক বাসিন্দা মোহাম্মদ ওয়ালি সামসোর বলেন, ‘যে স্কুলগুলো বন্ধ হয়ে গেছে সেগুলো যত তাড়াতাড়ি সম্ভব আবার চালু করা উচিত, কারণ এটা জনগণের দাবি।’
গত জুলাইয়ে ইসলামিক আমিরাত আফগানিস্তানের ধর্মীয় পণ্ডিতদের প্রধান শেখ ফকিরুল্লাহ ফাইক বলেছিলেন, ইসলামিক আমিরাতের সর্বোচ্চ নেতা মাওলাবী হিবাতুল্লাহ আখুন্দজাদা ষষ্ঠ শ্রেণির ঊর্ধ্বে নারী শিক্ষার্থীদের জন্য স্কুল পুনরায় খোলার বিপক্ষে নন।
ফকিরুল্লাহ ফাইক দাবি করেছিলেন, মেয়েদের স্কুলগুলো পুনরায় খোলায় দেরি হওয়ার একমাত্র কারণ হলো, তালিবান চাচ্ছে পুরুষ ও নারী শিক্ষার্থীদের ক্লাসরুম আলাদা করতে।
যে স্কুলগুলো বন্ধ হয়ে গেছে সেগুলো যত তাড়াতাড়ি সম্ভব আবার চালু করা উচিত, কারণ এটা জনগণের দাবি।
তিনি আরও বলেছিলেন, ‘শিগগিরই মেয়েদের জন্য স্কুলগুলো আবার চালু হবে। আমাদের সব মন্ত্রী ও নেতারা এ বিষয়ে একমত।’
তালিবানের পক্ষ থেকে এর আগে ষষ্ঠ শ্রেণি থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষার ক্ষেত্রে মেয়েদের অংশগ্রহণ স্থগিত করে দেয়া হয়।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নারীদের নিরাপত্তা ও উপযুক্ত পরিবেশের অভাব থাকার কারণেই এমন পদক্ষেপ বলে জানায় তালিবান।
যদিও ইসলামিক আমিরাতের মুখপাত্র জাবিউল্লাহ মুজাহিদ জানিয়েছিলেন, ধর্মীয় সমস্যার কারণে মেয়েদের স্কুল বন্ধ করা হয়েছে।
উল্লেখযোগ্যভাবে, পাকতিয়া বালিকা বিদ্যালয় সংক্ষিপ্ত খোলার পরে তালিবানরা প্রকাশ্যে বিশ্বব্যাপী সমালোচিত হয়েছিল।
টোলো নিউজ জানিয়েছে, এটি আফগানিস্তানের ভেতরে এবং বাইরে গুরুতর প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে। শনিবার, কয়েক ডজন মেয়ে তাদের স্কুল বন্ধ করার প্রতিবাদে পাকতিয়ার কেন্দ্রে রাস্তায় নেমেছিল।
বিক্ষোভের ভিডিওগুলি সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছে এবং আফগান জনসাধারণের পাশাপাশি বিখ্যাত রাজনীতিবিদ এবং মানবাধিকারকর্মীরা সংহতি জানিয়ে প্রতিবাদ জানিয়েছে।
বেশ কিছু মানবাধিকারকর্মী সম্প্রতি একটি খোলা চিঠিতে বিশ্ব নেতৃবৃন্দকে যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশটির মেয়েদের জন্য মাধ্যমিক বিদ্যালয় পুনরায় চালু করার জন্য তালিবানদের উপর কূটনৈতিক চাপ সৃষ্টি করার আহ্বান জানিয়েছেন।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৮৪৭
আপনার মতামত জানানঃ