কাজী ফয়সাল : আফ্রিকার পূর্বাঞ্চলীয় দরিদ্র দেশগুলোর অন্যতম একটি সমস্যা হল পঙ্গপাল। হর্ন অফ আফ্রিকা খ্যাত দেশ তথা ইথিওপিয়া, সোমালিয়াসহ কতিপয় দেশগুলো দীর্ঘদিন ধরে লড়াই করে যাচ্ছে পঙ্গপালের বিরুদ্ধে। সমস্যা কিছুটা কমলেও সেই অগ্রগতি ধরে রাখতে পারে নি দেশগুলো। করোনা মহামারীর মধ্যে দ্বিতীয় বারের মত দেখা দিয়েছে মরু পঙ্গপালের আক্রমন।
আফ্রিকার পূর্বাঞ্চল ছাড়িয়ে পঙ্গপাল পৌঁছে গেছে যুদ্ধবিদ্ধস্ত ইয়েমেনে। এ বিষয়ে জাতিসংঘ ইতিমধ্যে সতর্ক করে দিয়ে জানিয়েছে যে, এখনি এই আক্রমন প্রতিহত না করা গেলে কয়েক লক্ষ মানুষের জীবন ও জীবিকা বিপর্যয়ের সম্মুখীন হবে। জাতিসংঘ থেকে আরও বলা হয়েছে যে, ইথিওপিয়ার পুর্বাঞ্চল ও সোমালিয়ায় পঙ্গপালের বংশবিস্তারের অনুকূল আবহাওয়া বিরাজ করছে। ফলে আগামী দিনগুলোতে এ দুটি দেশের কৃষি পঙ্গপালের কারনে চরম ঝুঁকিতে পড়তে পারে।
ঝুঁকির মুখে রয়েছে কেনিয়াও। লোহিত সাগরের উভয় পাশে পঙ্গপাল ছড়িয়ে পড়ায় ইরিত্রিয়া, সৌদি আরব ও ইয়েমেন নতুন করে ঝুঁকির মুখে পড়েছে। যুদ্ধবিদ্ধস্ত ও দুর্ভিক্ষের মধ্য দিয়ে যাওয়া ইয়েমেনের জন্য পঙ্গপাল বয়ে আনতে চলছে অকল্পনীয় পরিস্থিতি।
মাত্র এক বছর আগেই পূর্ব আফ্রিকা তাদের ৭০ বছরের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় পঙ্গপালের আক্রমনের শিকার হয়। সেই রেষ কাটিয়ে উঠতে না উঠতেই লোহিত সাগরের উভয় পাশে পঙ্গপালের বিস্তার নতুন আতঙ্কের সৃষ্টি করেছে। পঙ্গপালের বিস্তার নিয়ে জাতিসংঘের ফুড অ্যান্ড এগ্রিকালচারাল অর্গানাইজেশন এর অধীনে কাজ করছেন কেইথ ক্রিসাম। তিনি সংবাদমাধ্যমকে বলেন, কেনিয়ার জন্য পঙ্গপালের ঝুঁকি অনিবার্য হয়ে পড়েছে।
এক বছর আগে আফ্রিকা মহাদেশের ৩ লাখ ৫০ হাজার বর্গকিলোমিটার বা ১ লাখ ৩৫ হাজার বর্গমাইল জমি পঙ্গপালের আক্রমনের শিকার হয়েছিলো। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিলো পুরো পূর্ব আফ্রিকার কৃষি ব্যবস্থা। তবে পঙ্গপালের হানা লোহিত সাগরের আফ্রিকা উপকূলে সীমাবদ্ধ ছিল। চলতি বছরের জানুয়ারী থেকে অগাস্ট সময়ে পঙ্গপালের উপস্থিতি দেখা গিয়েছিল। এরপর থেকে তা ধীরে ধীরে কমে আসে। এখন নতুন করে পুরো অঞ্চলজুড়ে পঙ্গপাল হানা দিয়েছে।
তিনি আরও বলেন, এবার লোহিত সাগরের উভয় পাশে পঙ্গপালের উপস্থিতি শনাক্ত হয়েছে। এতে সহজেই অনুমান করা যায়, কেনিয়া থেকে ইয়েমেন অবধি পঙ্গপালের হানায় আরও বেশি পরিমাণ জমি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে, যা যুদ্ধ ও করোনা মহামারীর ক্ষতি ছাপিয়ে এসব দেশকে নতুন চ্যালেঞ্জে ফেলবে। কেনিয়ায় উত্তরাঞ্চলীয় নর্থ হর সাব-কাউন্টিতে পশুপালনের খামার রয়েছে গোনজোবা গুয়োরোর। তিনি বলেন, গতবারের পঙ্গপালের আক্রমণ আমার খামার তছনছ করে দিয়েছিল। সব মিলিয়ে ১৪ টি ছাগল, চারটি গরু ও দুটি উট মারা গেছে। সেই আর্থিক লোকসান এখনো কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হয় নি। এর মধ্যে নতুন করে পঙ্গপালের আক্রমন দেখা দিলে খামার বন্ধ করে দেয়া ছাড়া উপায় থাকবে না। জানি না, এ পরিস্থিতি কিভাবে সামাল দেবো।
হর্ন অফ আফ্রিকার সীমানা ছাড়িয়ে অ্যাঙ্গলো, জিম্বাবুয়ে, নামিবিয়া, জাম্বিয়া, বোতসোয়ানায় ছড়িয়ে পড়েছে পঙ্গপাল। ইতিমধ্যে ১১ লাখ হেক্টর জমি পঙ্গপালের আক্রমণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এবারের শীত ও আগামী গরমের মৌসুমে লোহিত সাগরের উভয় পাশের দেশগুলোকে কৃষিতে বড় ধরনের সমস্যা মোকাবিলা করতে হতে পারে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন যে, এখনি যদি পঙ্গপালের বিরুদ্ধে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা না নেয়া যায় তবে করোনা মহামারীর মধ্যে সংকট ভয়াবহ আকার ধারনা করবে উক্ত দেশগুলোর জন্য।
আপনার মতামত জানানঃ