ইসলামের নবী হযরত মুহাম্মদ (সা.)-কে অবমাননা করলে শিরশ্ছেদ করতে হবে। তাই কীভাবে শিরশ্ছেদ করতে হয় তার প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। পাকিস্তানের লাল মসজিদে তরুণীদের শিরশ্ছেদ করার প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
ইতোমধ্যে ওই প্রশিক্ষণ দেওয়ার একটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছে। যা নিয়ে তোলপাড় চলছে।
সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা গেছে, মসজিদের মধ্যে বোরকা পরা এক শিক্ষক তরুণীদের তলোয়ারের প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন, কীভাবে শিরশ্ছেদ করতে হয়। প্রশিক্ষণ পর্বে তলোয়ার হাতে তরুণীদের স্লোগান দিতেও দেখা গেছে। প্রশিক্ষণে শেখানো হচ্ছে, যারা নবীকে ‘অপমান’ করবে তাদের একমাত্র শাস্তি হচ্ছে শিরশ্ছেদ।
Inside the #LalMasjid girls are being taught how to butcher or behead someone.
“In Islam, blasphemy is a subject of intellectual discussion rather than a subject of physical punishment.” Amina Begam Ansari (@Amana_Ansari) shares her views.
#TheRightStand @AnchorAnandN pic.twitter.com/yCW3oMcxBN
— News18 (@CNNnews18) September 5, 2022
এই বিষয় নিয়ে ভারতীয় সংবাদ মাধ্যম নিউজ১৮-এর সঙ্গে কথা বলেছেন বিশ্লেষক আমিনা বেগম আনসারি। তিনি বলেন, আমাদের সমাজ থেকে এ ধরনের প্রশিক্ষণ বন্ধ করতে হবে।
আমিনার আশঙ্কা, এ সব দেখে পরের প্রজন্ম জঘন্য অপরাধ ঘটাতে পারে। তাই অবিলম্বে এই ধরনের প্রশিক্ষণ বন্ধ করা হোক। তিনি আরও বলেন, এটা ইসলামের রাজনীতিকরণ করা হচ্ছে। এটা শুধু ভারতের জন্যই নয়, ভারতীয় মুসলমানদের জন্যও হুমকি ও বিপজ্জনক।
তবে এই ভিডিও নিয়ে এখন পর্যন্ত সত্যতা যাচাই করা সম্ভব হয়নি বলে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।
পাশাপাশি পাকিস্তানের ধর্মীয় নির্যাতনের হাতিয়ার হয়ে উঠেছে ব্লাসফেমি আইন। পাকিস্তানে ব্লাসফেমি আইনের সূচনা হয় সাবেক সামরিক শাসক জিয়াউল হকের অধীনে ১৯৮০ এর দশকে৷ এই আইন অনুযায়ী ইসলামের নবী হযরত মোহাম্মদ (সা.) কে অবমাননা করলে তার শাস্তি মৃত্যুদণ্ড৷ এছাড়া ইসলাম ধর্ম, পবিত্র কোরআনসহ নির্দিষ্ট ধর্মীয় ব্যক্তিদের নিন্দা বা অবমাননায় কারাদণ্ডসহ কঠোর শাস্তির বিধান রয়েছে৷
যুক্তরাষ্ট্রের কমিশন অন ইন্টারন্যাশনাল রিলিজিয়াস ফ্রিডম (ইউএসসিআরএফ)-এর তথ্য অনুযায়ী, পাকিস্তানে বর্তমানে ৮০ জন এই ‘ব্লাসফেমির অপরাধে কারাগারে আটক রয়েছেন৷ তাদের অর্ধেকই যাবজ্জীবন কারাদণ্ড বা মৃত্যুদণ্ডের মুখোমুখি৷
তবে মানবাধিকার সংস্থাগুলো বলছে, সংখ্যালঘুদের দমনে এই আইনের অপব্যবহার করা হচ্ছে৷ অনেক ক্ষেত্রে মুসলিমরাও ব্যক্তিগত শত্রুতার জেরে একজন আরেকজনকে ব্লাসফেমি মামলায় ফাঁসিয়ে দিচ্ছেন৷
পাকিস্তানের পরিস্থিতি বুঝতে সম্প্রতি প্রকাশিত ইউরোপীয় পার্লামেন্টের সদস্যদের সমালোচনামূলক রিপোর্ট সম্পর্কে জানা প্রয়োজন। পাকিস্তানে খ্রিষ্টান, শিখ, হিন্দু বা আহমদিয়াদের মতো ধর্মীয় সংখ্যালঘুরা যে কী চরম দুর্দশা ও নির্যাতনের মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন, তা নিয়েই এই রিপোর্ট।
বাস্তব জীবন থেকে একের পর এক উদাহরণ তুলে ধরে তারা দেখিয়েছেন, কীভাবে সেখানে সংখ্যালঘু সমাজের নারী বা বাচ্চা মেয়েরা পর্যন্ত ধর্ষণ ও অপহরণের শিকার হচ্ছেন। তাদের প্রতিনিয়ত খুনের হুমকিও দেওয়া হচ্ছে।
ওই প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, পাকিস্তানে ধর্মীয় সংখ্যালঘুরা আর্থ-সামাজিক, রাজনৈতিক বা সাংস্কৃতিকভাবে প্রান্তিক জনগোষ্ঠী হওয়ার কারণে তাদের ওপর নানাভাবে বৈষম্য করা হচ্ছে রাষ্ট্রীয় মদতেই।
পাশাপাশি মন্তব্য করা হয়েছে, সুন্নি মুসলিম-গরিষ্ঠ পাকিস্তানি সমাজ এই সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে সংঘবদ্ধ হিংসা, গণহত্যা, বিচারবহির্ভূত হত্যা, অপহরণ, ধর্ষণ কিংবা জোর করে ইসলামে ধর্মান্তর করে চলেছে নির্বিচারে।
এসডব্লিউ/এসএস/১৯৪৫
আপনার মতামত জানানঃ