ইসলামী ও সামাজিক মূল্যবোধ পরিপন্থী বিষয়বস্তু প্রচার না করতে অনলাইন ভিডিও শেয়ারিং ও স্যোসাল মিডিয়া প্লাটফর্ম ‘নেটফ্লিক্স’কে হুঁশিয়ারি দিয়েছে সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের কয়েকটি মুসলিম দেশ। একইসাথে এই ধরনের যেসব ভিডিও আছে সেগুলো দ্রুত সরিয়ে ফেলার আহ্বান জানানো হয়েছে। না সরালে প্রয়োজনীয় আইনি ব্যবস্থা নেয়ার হুমকি দিয়েছে দেশগুলো।
সৌদি আরব ও উপসাগরীয় সহযোগিতা কাউন্সিল (জিসিসি) গণমাধ্যমে দেয়া এক বিবৃতিতে বলেছে, সাম্প্রতিক শিশুদের জন্য তৈরি কনটেন্টসহ আরও কিছু কনটেন্ট এখানকার নিয়ম লঙ্ঘন করেছে।
যদিও সেই বিবৃতিতে কোনো ধরনের নিয়ম ভঙ্গ করছে তার বিস্তারিত বলা হয়নি।
আন্তর্জাতিক একাধিক সংবাদমাধ্যম সূত্রে ডন জানায়, গলফ কর্পোরেশন কাউন্সিলের সদস্য ছয়টি দেশ এবং সৌদি মিডিয়া রেগুলেটর যৌথ বিবৃতিতে এই হুঁশিয়ারি দেয়।
সংস্থাটির সদস্য দেশ ছয়টি হলো সৌদি আরব, বাহরাইন, কুয়েত, ওমান, কাতার ও সংযুক্ত আরব আমিরাত।
বিবৃতিতে শিশু সম্পর্কিত ইসলামী ও সামাজিক মূল্যবোধ পরিপন্থী কন্টেন্টগুলো দ্রুত সরিয়ে ফেলতে নেটফ্লিক্স কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করা হয়েছে বলে জানানো হয়। তবে বিবৃতিতে বিতর্কিত ভিডিও সম্পর্কে বিস্তারিত ব্যাখা দেয়া হয়নি।
যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়, সৌদি আরবের দর্শকদের নেটফ্লিক্স এমন বিষয়ব্স্তু দেখাচ্ছে, যা মিডিয়া আইনের লঙ্ঘন। তাদের সতর্ক করা হয়েছে যে তারা যদি এটা থেকে সরে না আসে, তাহলে দ্রুত আইনি পদক্ষেপ নেয়া হবে।
সম্প্রতি নেটফ্লিক্সের অ্যানিমেটেড শো জুরাসিক ওয়ার্ল্ড: কাম্প ক্রিটেসিয়াসে দুই কিশোরী মেয়ের একে অপরকে ভালোবাসা ও চুম্বনের দৃশ্য ভালোভাবে নেয়নি সৌদি গণমাধ্যম। দেশটির রাষ্ট্রীয় টিভিতেও এর বিরুদ্ধে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। সেই প্রতিবেদনে দুই কিশোরীর চুম্বন দৃশ্যও ব্লার করে দেখানো হয়।
নেটফ্লিক্সে প্রচারিত ফরাসি চলচ্চিত্র কিউটিসকেও শিশুদের লালনপালনের জন্য হুমকিস্বরূপ অনৈতিক বার্তা দেখানোর অভিযোগ করা হয়েছে আল এখবারিয়া টেলিভিশনের এক প্রতিবেদনে।
চ্যানেলটি বেশ কয়েকজন গণ্যমান্য ব্যক্তির সাক্ষাৎকারও নিয়েছে, যেখানে তারাও নেটফ্লিক্সের বিরুদ্ধে ইসলামি মূল্যবোধ ভাঙার অভিযোগ করেছেন এবং এ বিষয়ে কর্তৃপক্ষকে ব্যবস্থা নেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।
শিশুদের জন্য তৈরি কিছু নির্দিষ্ট কনটেন্ট সরাতে ও আইন মেনে চলার জন্য নেটফ্লিক্সের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে বলে জিসিসির কমিটির এক যৌথ বিবৃতিতে জানিয়েছে সৌদি জেনারেল কমিশন ফর অডিওভিজ্যুয়াল মিডিয়া অ্যান্ড ইলেকট্রনিক মিডিয়া।
সম্প্রতি নেটফ্লিক্সের অ্যানিমেটেড শো জুরাসিক ওয়ার্ল্ড: কাম্প ক্রিটেসিয়াসে দুই কিশোরী মেয়ের একে অপরকে ভালোবাসা ও চুম্বনের দৃশ্য ভালোভাবে নেয়নি সৌদি গণমাধ্যম। দেশটির রাষ্ট্রীয় টিভিতেও এর বিরুদ্ধে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে।
নেটফ্লিক্সকে সতর্ক করে দিয়ে বলা হয়েছে, আইন লঙ্ঘনকারী কনটেন্টগুলোর সম্প্রচার চালিয়ে গেলে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে।
সৌদি আরবে সমকামিতা ও বিয়েবহির্ভূত যৌন সম্পর্ক কঠোরভাবে নিষিদ্ধ। যে কোনো সম্মতিসূচক সমকামী যৌন আচরণের জন্য অভিযুক্তের বেত্রাঘাত, এমনকি মৃত্যুদণ্ডও হতে পারে।
সম্প্রতি ব্যাপক সংস্কারের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে সৌদি। ইদানীং দেশটির সিনেমা হলগুলোতে পশ্চিমা সিনেমা দেখানো হচ্ছে। গত এপ্রিলে সমকামিতা উপাদান সংক্রান্ত একই অভিযোগ ‘ডক্টর স্ট্রেঞ্জ ইন দ্য মাল্টিভার্স অফ ম্যাডনেস’ এর বিরুদ্ধে উঠলেও সিনেমাহলে এর সম্প্রচার বন্ধ হয়নি।
এদিকে সমকামী চুম্বন থাকায় জুন মাসে সংযুক্ত আরব আমিরাতে নিষিদ্ধ করা হয়েছিল অ্যানিমেটেড ফিল্ম ‘লাইটইয়ার।’
ইউটিউবকেও গত মাসে সৌদি কর্তৃপক্ষ ইসলামি মূল্যবোধের লঙ্ঘন করে এমন বিজ্ঞাপন প্রচারে অনুমতি দেয়ার জন্য অভিযুক্ত করে।
সম্প্রতি গ্রাহক হারাচ্ছে স্ট্রিমিং জগতে রাজত্ব করা নেটফ্লিক্স। ওয়ালস্ট্রিটে প্রতিষ্ঠানটির শেয়ারের দামও পড়তির দিকে। এমন পরিস্থিতিতে আরব দেশগুলোর আনা অভিযোগ প্রতিষ্ঠানটিকে আরও চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলবে।
তবে ইসলামি মূল্যবোধ লঙ্ঘনের অভিযোগের বিষয়ে এখনও কিছু বলেনি নেটফ্লিক্স।
রক্ষণশীল আরব সমাজের বিক্ষোভ ঠেলে নেটফ্লিক্স কতটুকু এগোতে পারবে, তা বলা মুশকিল। এটি ঠিক যে আরব বিশ্বের বাজার পুরোপুরি দখল করতে পারলে আখেরে নেটফ্লিক্সেরই লাভ। কিন্তু সে ক্ষেত্রে কিছু বিষয়ে আপসও করতে হতে পারে। সৌদি সাংবাদিক জামাল খাশোগির হত্যাকাণ্ড নিয়ে কথা বলায় এরই মধ্যে নেটফ্লিক্সকে ‘প্যাট্রিয়ট অ্যাক্ট উইথ হাসান মিনহাজ’ নামের জনপ্রিয় কমেডি শোয়ের একটি পর্ব সরিয়ে ফেলতে হয়েছে। সৌদি আরব রাষ্ট্রীয়ভাবে এ নিয়ে আপত্তি তুলেছিল। তাতেই আত্মসমর্পণ করে নেটফ্লিক্স।
সামনের দিনগুলোয় এমন আপত্তি যে আরও বাড়বে না, তার নিশ্চয়তা কে দেবে? কারণ, এসব সমস্যা এক দিনে সমাধান হওয়ার নয়।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৭৪৯
আপনার মতামত জানানঃ