জার্মানিতে দ্বিতীয় দফায় কঠোর লকডাউন চলছে। তবে দেশটিতে সংক্রমণ কমেনি। প্রতিদিন বেড়েই চলছে। জার্মানিতে করোনায় মোট মৃত্যুর সংখ্যা ২৬ হাজার ছাড়িয়ে গেছে। মৃতদের মধ্য বেশির ভাগই প্রবীণ।কঠোর লকডাউন আগে থেকে জারি করা হলে আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা কমিয়ে আনা সম্ভব হতো বলে অনেকে মনে করেন। এদিকে বায়োএনটেক ও তাদের মার্কিন অংশীদার ফাইজারের টিকা ২৩ ডিসেম্বর থেকে প্রয়োগ করা সম্ভব হবে বলে আশা করছেন দেশটির চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল।
চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল বলেন, এত দ্রুত বিশ্বে টিকা আসা গবেষকদের বিরাট সাফল্য। নতুন এই টিকা বহু মানুষের প্রাণ বাঁচাবে। বায়োএনটেক ও তাদের মার্কিন অংশীদার ফাইজারের টিকা ২৩ ডিসেম্বর থেকে প্রয়োগ করা সম্ভব হবে বলে তিনি আশা করেন।
জার্মানির স্বাস্থ্যমন্ত্রী ইয়ান স্পান গতকাল এক সংবাদ সম্মেলনে টিকা কমিশন গঠন করার কথা জানিয়েছেন। এই কমিশন ইতিমধ্যেই জার্মানিতে বিভিন্ন পর্যায়ে কাদের টিকা দেওয়া হবে, সেই বিষয়টি নির্ধারণ করেছে।
ভ্যাকসিন দেয়ার ক্ষেত্রে সরকার অগ্রাধিকারের তিনটি পর্যায় নির্ধারণ করেছে৷ প্রতিটি পর্যায়ে ক্রমান্বরে বিভিন্ন জনগোষ্ঠী ভ্যাকসিন পাবেন৷
প্রথম অগ্রাধিকারে রেখেছে:
১. আশি বছরোর্ধ্ব মানুষ৷
২. বয়স্ব মানুষ অথবা মানসিকভাবে অসুস্থদের নিয়মিত যারা দেখাশোনা করেন বা সেবা দেন৷
৩. কোভিড-১৯ আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিতে থাকা স্বাস্থ্য কর্মী, বিশেষ করে যারা আইসিইউ, ইমারজেন্সি বা জরুরি কক্ষ ও সামনের সারিতে কাজ করেন৷
৪. কোভিড-১৯ এর মৃত্যুঝুঁকিতে থাকা রোগীদের প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া স্বাস্থ্যকর্মীরা৷
দ্বিতীয় অগ্রাধিকারে আছে:
১. সত্তর বছরোর্ধ্ব মানুষ৷
২. কোভিড-১৯ আক্রান্ত হলে মৃত্যৃঝুঁকি বেশি এমন শারীরিক অবস্থায় যারা আছেন৷
৩. চলাফেরা করতে অক্ষম এবং গর্ভবতীদের সরাসরি সংস্পর্শে যারা বাস করেন বা সরাসরি তাদের সঙ্গে যারা কাজ করেন৷
৪. চিকিৎসক ও অন্য স্বাস্থ্যকর্মীরা যাদের কোভিড-১৯ আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেশি৷
৫. সরকারি হাসপাতালগুলো রক্ষণাবেক্ষণকারী জরুরি কর্মী৷
তৃতীয় অগ্রাধিকারে আছে:
১. ষাট বছরোর্ধ্ব মানুষ
২. কোভিড-১৯ আক্রান্ত হলে মারাত্মকভাবে অসুস্থ হতে পারেন, এমন শারীরিক অবস্থায় রয়েছেন যারা৷ যেমন, ডায়াবেটিস, ক্যান্সার, কিডনি অথবা লিভার, এইচআইভি, শ্বাসকষ্টসহ বিভিন্ন সমস্যায় ভুক্তভোগীরা৷
৩. প্রথম দুই ধাপে যেসব স্বাস্থ্যকর্মীরা টিকা পাননি৷
৪. রাষ্ট্রের কর্মকাণ্ড বজায় রাখার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ কর্মী, পুলিশ, অগ্নি নির্বাপণে নিয়োজিতরা, ত্রাণ কর্মী, এবং সংসদ সদস্যরা৷
৫. বিদ্যুৎ, পানি, খাবার সরবরাহ, টেলিযোগাযোগ নেটওয়ার্ক, যোগাযোগ ব্যবস্থা, ঔষধ নেটওয়ার্কসহ জরুরি অবকাঠামোতে নিয়োজিত কর্মীরা৷
৬. শিক্ষক ও ডেকেয়ার কর্মীরা৷
৭. অনিশ্চিত পার্ট-টাইম চাকুরিতে নিয়োজিতরা, মাংস প্রক্রিয়াজাতকরণ, গুদামে কর্মরত কর্মীরা৷
৮. রিটেইল কর্মী
সরকারের পরিকল্পনা অনুযায়ী জানুয়ারির শেষ নাগাদ জার্মানি ৩০ লাখ থেকে ৪০ লাখ টিকা হাতে পাবে৷ আর মার্চের মধ্যে তা বেড়ে হবে এক কোটি ১০ থেকে ৩০ লাখ৷ সেই হিসাবে শুধু প্রথম অগ্রাধিকারে থাকা সব জনগোষ্ঠীর টিকা পেতে আগামী বছরের মার্চ পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে৷ এই প্রক্রিয়ায় তিন সপ্তাহর ব্যবধানে দুইবার টিকা ইনজেকশনের প্রয়োজন হবে৷ সব মিলিয়ে জার্মানির গোটা জনগোষ্ঠীকে টিকার আওতায় আসতে কমপক্ষে এক বছর অপেক্ষায় থাকতে হবে৷
তবে অগ্রাধিকারের ঘোষিত তালিকায় অনেকে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন৷
জার্মান মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন এর প্রেসিডেন্ট ক্লাউস রাইনহার্টড বলেছেন, সাধারণ স্বাস্থ্যকর্মীদেরকে তালিকার এত নীচে রাখাটা ঝুঁকিপূর্ণ৷
একই ধরনের অভিযোগ করেছে পুলিশ ইউনিয়নও৷ পুলিশ অফিসাররা পথেঘাটে অনেক মানুষের সংস্পর্শে আসেন, সেই ভিত্তিতে তাদেরকে উচ্চ ঝুঁকিতে থাকা জনগোষ্ঠীর কাতারে বিবেচনা করা উচিত বলে মত দিয়েছেন তারা৷
অন্যদিকে জার্মান সংসদের প্রেসিডেন্ট ভল্ফগাং শয়েবলে সংসদ সদস্যদের ক্ষেত্রেও একই দাবি জানিয়েছেন৷ রাষ্ট্র পরিচালনার স্বার্থে অগ্রাধিকার তালিকায় সাংসদদের আরো উপরে থাকা উচিত বলে মন্তব্য করেছেন তিনি৷ সূত্র : ডয়েচে ভেলে ও রয়টার
আপনার মতামত জানানঃ