সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম টুইটারে পোস্ট করার জেরে এক নারীকে ৪৫ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছে সৌদি আরবের এক আদালত।
নুরাহ বিনতে সাইদ আল-কাহতানি নামের যুক্তরাজ্যের লিডস ইউনিভার্সিটির ওই ডক্টরেটের শিক্ষার্থী নিজ দেশে ফিরে এই দণ্ডের মুখে পড়েছেন বলে জানিয়েছে পাকিস্তানের সংবাদ মাধ্যম দ্যা ডন।
যদিও তাকে নিয়ে সৌদি আরবের সরকারি সংবাদ মাধ্যমে কোনো তথ্য জানানো হয়নি।
মঙ্গলবার (৩০ আগস্ট) দ্যা ডন বলছে, কাহতানি তার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্টে কী লিখেছেন সে বিষয়ে কিছু জানানো হয়নি।
ডেমোক্রেসি ফর দ্য আরব ওয়ার্ল্ড নাউ (ডিএডব্লিউএন) নামের অধিকার গোষ্ঠীর ভাষ্যমতে, সৌদির সামাজিক কাঠামো ভাঙতে ইন্টারনেট ব্যবহার এবং সামাজিক মাধ্যমের মাধ্যমে জনশৃঙ্খলা লঙ্ঘনের দায়ে নুরাহকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়।
নুরাহকে সৌদির কাউন্টার টেররিজম ও অ্যান্টিসাইবার ক্রাইম আইনের অধীন দোষী সাব্যস্ত করা হয় বলে জানায় ডিএডব্লিউএন।
ডিএডব্লিউএন ওয়াশিংটনভিত্তিক অধিকার গোষ্ঠী। গোষ্ঠীটির প্রতিষ্ঠাতা সৌদির প্রয়াত সাংবাদিক জামাল খাসোগি। তিনি ২০১৮ সালের অক্টোবরে তুরস্কের ইস্তাম্বুলে সৌদি কনস্যুলেটে খুন হন। সৌদির বর্তমান শাসকদের কড়া সমালোচক ছিলেন খাসোগি।
নুরাহর কারাদণ্ডের বিষয়ে সৌদির আদালতের নথির একটি অনুলিপি ‘শেয়ার’ করেছে ডিএডব্লিউএন। কিন্তু এই নথির বিষয়বস্তু যাচাই করতে পারেনি এএফপি।
সৌদি কর্তৃপক্ষের কাছ থেকেও এ বিষয়ে তাৎক্ষণিক কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি।
নুরাহ সম্পর্কে খুব বেশি কিছু জানা যায়নি। তাকে ২০২১ সালের জুলাইয়ে গ্রেপ্তার করা হয়। তিনি দেশটির বিশেষায়িত ফৌজদারি আদালতে দোষী সাব্যস্ত হন। চলতি মাসে আপিলে তার গুরুদণ্ড হয়।
ডিএডব্লিউএনের ভাষ্যমতে, মাত্র কয়েক সপ্তাহের ব্যবধানে সৌদি আরবে এ ধরনের দ্বিতীয় ঘটনা ঘটল।
মাত্র কয়েক সপ্তাহের ব্যবধানে সৌদি আরবে এ ধরনের দ্বিতীয় ঘটনা ঘটল।
এ ঘটনার দুই সপ্তাহ আগে দুই সন্তানের মা এবং ব্রিটেনের লিডস বিশ্ববিদ্যালয়ের ডক্টরেট প্রার্থী সালমা আল-শেহাবকে ৩৫ বছরের কারদণ্ড দেওয়া হয়। সালমার অপরাধ ছিল, তিনি টুইটার ব্যবহার করতেন এবং বহু ভিন্নমতাবলম্বী ও কর্মী তাকে অনুসরণ করত।
ডিএডব্লিউএনের উপসাগরীয় অঞ্চলের গবেষণা পরিচালক আবদুল্লাহ আলাউদ বলেন, চলতি মাসেই সৌদিতে সালমা আল-শেহাব নামের এক নারীর ৩৪ বছরের কারাদণ্ড হয়। এ ঘটনার কয়েক সপ্তাহের ব্যবধানে নুরাহর ৪৫ বছরের কারাদণ্ড হলো।
সৌদি আরবে সমালোচকদের বিরুদ্ধে কর্তৃপক্ষের দমনপীড়নের অভিযোগ আছে।
গত জুলাই মাসে সৌদি ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমানের সাথে বৈঠক করেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। ওয়াশিংটন এবং তার ঐতিহ্যবাহী মিত্র রিয়াদের মধ্যে সম্পর্কের একটি বড় ক্ষত ছিল মানবাধিকার নিয়ে উদ্বেগ। কিন্তু বাইডেনের সফরের পরই মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনাগুলো ঘটছে।
ওয়াশিংটন গত সপ্তাহে জানায়, শেহাবের সাজা নিয়ে আমরা উদ্বেগ প্রকাশ করেছি। তবে কাহতানি এবং শেহাবের দণ্ড বাস্তবে সৌদি শাসক যুবরাজ মোহাম্মদের একচ্ছত্র আধিপত্য বিস্তারের চেষ্টার অংশ হিসেবে দেওয়া হয়েছে। ভিন্নমতের বিরুদ্ধে এটি যুবরাজের ক্র্যাকডাউন বলা যায়। তবে তিনি নারীদের গাড়ি চালানোর অনুমতি দেওয়ার মতো সংস্কার বাস্তবায়ন করেছেন। নারীদের চাকরির ব্যাপারে নানা প্রকল্প চালু করেছেন।
সৌদির রাজনৈতিক বন্দিদের আত্মীয়রা প্রাথমিকভাবে আশা করেছিল, বাইডেনের সফর কারাবন্দি প্রিয়জনদের মুক্তি দিতে সহায়তা করবে।
ডন এর উপসাগরীয় অঞ্চলের গবেষণা পরিচালক আবদুল্লাহ আল-আউদ বলেন, শেবাব এবং কাহতানি উভয়ই সৌদি সরকারের সমালোচক। এজন্য তাদের বিরুদ্ধে অপমানজনক আইন কার্যকর করা হয়েছে।
সৌদি আরবের জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষার সাথে সেদেশের শাসকগোষ্ঠীর চিন্তাভাবনা ও রাষ্ট্র পরিচালনার নীতির কোনো সঙ্গতি নেই। সৌদি আরবের রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় জনগণের অংশগ্রহণেরও কোনো সুযোগ নেই। যেহেতু সেখানে গণতন্ত্র নেই তাই শাসক বা সরকার নির্বাচনের অধিকারও জনগণের নেই। সম্পদে প্রাচুর্য সৌদি রাজ পরিবারের সদস্যরা অত্যন্ত আরাম-আয়েশি জীবন যাপন করলেও সেদেশটির জনগণের একটা বিরাট অংশ দরিদ্র, বেকার এবং বৈষম্যের শিকার। সামাজিক ব্যবধান বাড়তে থাকায় জনমনে সরকার বিরোধী প্রতিবাদ, ক্ষোভ ও সমালোচনা বাড়ছে।
কিন্তু সরকার কোনো ধরনের সমালোচনা শুনতে রাজি নয় এমনকি নাগরিক অধিকার আন্দোলনকারীদের তৎপরতা চালানোরও কোনো সুযোগ নেই। যে কোনো প্রতিবাদকারীকে সরকার কঠোর হাতে দমন করে।
পর্যবেক্ষকরা বলছেন, সৌদি নাগরিকদের বিরুদ্ধে শাসকবর্গের জুলুম নির্যাতনের ব্যাপারে একদিকে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ নীরব রয়েছে অন্যদিকে বাকস্বাধীনতা ও মানবাধিকারের দাবিদার বৃহৎ শক্তিগুলোও টু শব্দটিও করছে না। শুধুমাত্র হিউম্যান রাইটস ওয়াচ ও বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থা সৌদি সরকারের দমনপীড়নের বিরুদ্ধে কথা বলছে ও সমালোচনা করছে। বেসরকারি এসব সংস্থার রিপোর্ট কিংবা তাদের সমালোচনার খুব একটা মূল্য না থাকায় এবং কোনো বিষয়ে তাদের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের ক্ষমতা না থাকায় সৌদি সরকার তাদের সমালোচনায় কর্ণপাত করছে না।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১১৫৫
আপনার মতামত জানানঃ