অসৌজন্যমূলক ভাষায় অসত্য অভিযোগ সম্বলিত চিঠি পেয়ে হতবাক হয়েছেন বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ। আজ শনিবার(১৯ ডিসেম্বর) বেলা সাড়ে ১১টায় রাজধানী বনানীর নিজ বাসভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে দলের পক্ষ থেকে দেয়া শোকজ নোটিশ প্রসঙ্গে এমন প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন তিনি।
মেজর (অব.) হাফিজ বলেন, ‘আমি একজন যুদ্ধাহত, খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা। বিজয়ের মাসে শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসে অসৌজন্যমূলক ভাষায় অসত্য অভিযোগসংবলিত কারণ দর্শানোর নোটিশ পেয়ে হতবাক হয়েছি। দলের ভাইস চেয়ারম্যানকে একজন যুগ্ম মহাসচিব (আদিষ্ট না হয়েও) এমন কঠিন, আক্রমণাত্মক ভাষায় কৈফিয়ত তলব করায় অত্যন্ত অপমানিত বোধ করছি। এখানে প্রটোকল ও সৌজন্যের ব্যত্যয় ঘটেছে। আমি ২৯ বছর ধরে বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট, আমার যোগদানের তারিখ, ভাইস চেয়ারম্যান পদে নিয়োগ পাওয়ার তারিখ, আমার নামের বানানসহ অনেক ভুলই রুহুল কবির রিজভীর স্বাক্ষরিত চিঠিতে দৃশ্যমান।’
হাফিজ উদ্দিন বলেন, দলীয় নেতৃত্বের সিদ্ধান্তের প্রতি যথাযথ সম্মান প্রদর্শন করেই পত্রে বর্ণিত অভিযোগ সম্পর্কে আমার নিম্নরূপ বক্তব্য পেশ করছি-
১. আমাকে কখনো বরিশাল বিভাগীয় সাংগঠনিক টিমের দায়িত্ব দেয়া হয়নি।
২. জাতীয়তাবাদী কৃষকদলের কেন্দ্রীয় মনিটরিং কমিটির আহ্বায়ক পদের অফার অসুস্থতার জন্য গ্রহণ করতে পারিনি। আমার বর্তমান বয়স ৭৬ বছর দুই মাস, বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটি কিংবা স্থায়ী কমিটিতে আমার চাইতে বয়স্ক ব্যক্তির সংখ্যা চারের অধিক হবে না বলেই আমার ধারণা।
৩. দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে অনুষ্ঠিত সভায় যোগদানের পূর্বেই পুলিশ আমাকে ঢাকা বিমানবন্দর থেকে গ্রেপ্তার করে, এ কারণেই বরিশাল যেতে পারিনি। আমার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রবিরোধী ষড়যন্ত্রের মিথ্যা অভিযোগ এনেছিল বর্তমান সরকার। বিএনপির কোনো সিনিয়র নেতার বিরুদ্ধে এ ধরনের মারাত্মক অভিযোগ দায়ের করার কথা আমার জানা নেই। এ মামলা ছাড়াও এক ডজন মামলায় আমি গত দশ বছর ধরে নিয়মিত হাজিরা দিয়ে যাচ্ছি।
৪. ৫, ৬ বর্ণিত দলীয় সভায় আমাকে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি। অতীতে স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবসসহ মহান মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে জড়িত স্মরণীয় দিবসসমূহে আমাকে আমন্ত্রণ জানানো হোক, গত দেড় বছরে এ ধরনের অনুষ্ঠানেও দলের দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিরা আমাকে ডাকার প্রয়োজনবোধ করেননি। বোঝাই যাচ্ছে বিএনপিতে মুক্তিযোদ্ধাদেরকে কোণঠাসা করে রাখার জন্য একটি মহল সক্রিয় রয়েছে। বিগত এক বছরে আমি জাতীয় প্রেসক্লাবে অনুষ্ঠিত ছয়টি সভায় অংশগ্রহণ করেছি, আয়োজক জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দল দুটি, বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি দুটি, বিএনপি ঘরানাভুক্ত সংগঠন একটি। দেশের খ্যাতনামা মুক্তিযোদ্ধারা এই সভাসমূহে অংশগ্রহণ করেছিলেন। অসৎ উদ্দেশ্যে আমি বিএনপির বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের সমালোচনা করেছি, এটি একেবারেই অসত্য ঢালাও মন্তব্য। বিগত ১২ ডিসেম্বর প্রেস ক্লাব অডিটোরিয়ামে রণাঙ্গনের মুক্তিযোদ্ধা ও সাবেক বিমান বাহিনী প্রধানসহ অবসরপ্রাপ্ত সামরিক বাহিনীর কর্মকর্তাদের এক সভায় আমি শেখ হাসিনাকে পদত্যাগ করে নিরপেক্ষ সরকারে অধীনে নতুন নির্বাচন দেবার জন্য দাবি জানিয়েছি।
৭. প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় আমি দলীয় স্বার্থ ও শৃঙ্খলাবিরোধী কোনো বক্তব্য দিইনি। সকল প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়া বর্তমান ক্ষমতাসীন সরকারের নিয়ন্ত্রণাধীন, এখানে আমাদের বক্তব্য উদ্দেশ্যমূলকভাবে প্রায়শ: বিকৃত এবং খণ্ডিতভাবে প্রচার করা হয়। আমি ৩৪ বছর যাবৎ রাজনীতি করছি, কখনও কারো বিরুদ্ধে এমনকি প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধেও রাজনৈতিক শিষ্টাচার বহির্ভূত বক্তব্য রাখিনি। অনির্বাচিত আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধেও অনেকবার বক্তব্য রেখেছি, কিন্তু কাউকে ব্যক্তিগত আক্রমণ করিনি।
প্রসঙ্গত, ১৪ ডিসেম্বর জাতীয় প্রেসক্লাবে সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদের আলোচনা সভা ছিল। এতে হাফিজ উদ্দিন আহমেদ ও শওকত মাহমুদও অংশ নেন। অনুষ্ঠান শেষে বিএনপির নেতা-কর্মীদের একটি দল পুরানা পল্টন মোড় ও জিরো পয়েন্টে অবস্থান নিয়ে সরকারবিরোধী বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন। পরে পুলিশ লাঠিপেটা করে তাঁদের সরিয়ে দেয়।
বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্বের কেউ কেউ মনে করেন, দলের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে নেতা-কর্মীদের বিভ্রান্ত করে এ ধরনের বিক্ষোভ করার পেছনে হাফিজ উদ্দিন ও শওকত মাহমুদ দায়ী। এরপর ওই দিন সন্ধ্যায় দুজনকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয় বিএনপি। তাতে শওকত মাহমুদকে ৭২ ঘণ্টা ও হাফিজ উদ্দিনকে ৫ দিনের সময় দেওয়া হয়। নোটিশে সই করেন দলের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।
বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয় সূত্র বলছে, শওকত মাহমুদ গত বুধবার রাতেই জবাব দিয়েছেন। তাতে তিনি বলেছেন, জাতীয়তাবাদী দলের আদর্শের বাইরে, দলের সিদ্ধান্তের বাইরে শৃঙ্খলাবিরোধী কোনো কাজে তিনি জ্ঞাতসারে সম্পৃক্ত ছিলেন না। এরপরও তাঁর অজান্তে কোনো কাজে জড়িত থাকলে তার জন্য তিনি দুঃখিত।
অন্যদিকে মেজর হাফিজ আজ তাঁর অবস্থান জানালেন। তাতে বিএনপিকে কারণ দর্শানোর নোটিশে কী বলেছেন, তাও উল্লেখ করেছেন।
এসডব্লিউ/কেএইচ/১৪৪৫
আপনার মতামত জানানঃ