রাজধানীর হাতিরঝিল থানা হেফাজতে সুমন শেখ (২৪) নামে এক আসামির মৃত্যু হয়েছে। স্বজনদের অভিযোগ, পুলিশকে পাঁচ লাখ টাকা ঘুষ না দেওয়ায় সুমনকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। এ ঘটনায় স্বজনরা হাতিরঝিল থানা ঘেরাও করে বিক্ষোভ করেছেন।
রাজধানীর হাতিরঝিল থানায় যুবকের মৃত্যুকে পুলিশ ‘আত্মহত্যা’ দাবি করলেও স্বজনদের অভিযোগ, গ্রেপ্তারকৃতকে মারধর করা হয়েছে। আর তাদেরকে দেখানো সিসিটিভি ভিডিওতে মৃতদেহ বা ঝুলন্ত দেহ ‘ছিল না’।
পুলিশ বলছে, চুরির অভিযোগে গ্রেপ্তার সুমন শেখ (২৭) শুক্রবার মাঝরাতের পর জেল হাজতে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেন। যেটির একটি সিসিটিভি ভিভিও স্বজনদের দেখানো হয়েছে।
আর এ ঘটনায় ওই থানার দুই সদস্যকে সাময়িক বরখাস্ত এবং তদন্ত কমিটি গঠনের কথাও জানিয়েছে পুলিশ।
স্বজনদের অভিযোগ, শনিবার বিকাল পর্যন্ত তাদের মৃত্যুর বিষয়ে জানানো হয়নি। বিকালে আদালতে আত্মহত্যা করেছে সংবাদ পেয়ে তারা থানায় এসে জানতে পারেন সুমনের মৃত্যুর খবর।
এরপর পরিবারের সদস্যদের পাশাপাশি স্থানীয় বেশ কিছু সংখ্যক বাসিন্দা হাতিরঝিল থানার সামনে বিক্ষোভ করেন।
সুমনের স্ত্রী জান্নাত আরা জানান, রামপুরা টিভি সেন্টারের পাশে একটি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করতেন সুমন। সেখানে চুরির অভিযোগে তাকে মারধর করা হয়। পরে পুলিশকে খবর দেয়া হয়। রাতে পুলিশ তাকে থানায় আনার সময় মারধর করেছে। এরপর থানা হাজতে নির্যাতনের সময় সুমনের মৃত্যু হয়। তার বাড়ি নবাবগঞ্জ থানার দক্ষিণকান্দি।
জান্নাত বলেন, ‘আমার স্বামীরে ওরা থানার ভেতর মেরে ফেলছে। অফিসে ওরে মারছে। রাতে পুলিশ গিয়ে নিয়ে আসছে। পুলিশও মারতে মারতে আনছে। রাতে আমি থানায় দেখতে আসছিলাম, আমারে অকথ্য ভাষায় গালাগালি করে বের করে দিছে।’
পুলিশ হেফাজতে গ্রেপ্তার থাকা ব্যক্তির মৃত্যু অবশ্যই গুরুতর ঘটনা তাই এর পূর্ণ সুষ্ঠু তদন্ত হওয়া উচিত। পুলিশের বিরুদ্ধে আনীত নির্যাতনের অভিযোগ ও হেফাজতে মৃত্যুর বিষয় দুটি অনাকাঙ্ক্ষিত ও অনভিপ্রেত যা কখনোই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না।
হাতিরঝিল থানার সামনে ছেলে রাকিবকে (৬) পাশে নিয়ে কান্নাজড়িত কণ্ঠে জান্নাত বলেন, ‘আমার স্বামীকে ধরার পর পুলিশ পাঁচ লাখ টাকা দাবি করে। টাকা না দেওয়ায় ওরা তাকে মেরে ফেলছে। যারা আমার ছেলেকে এতিম করল, আল্লাহ তাদের বিচার কইরো।’
পরিবারের সদস্যদের দাবি, সুমন শেখকে আটকের কথা শুনে রাতেই তারা থানায় যান। তখন তাদের বলা হয়, সকালে তাকে আদালতে পাঠানো হবে। সকালে তারা আবার থানায় গেলেও তাদের সুমনের মৃত্যুর কথা জানানো হয়নি।
পুলিশের তথ্যানুযায়ী, ঢাকার রামপুরা টিভি সেন্টারের পাশে ইউনিলিভারের পিউরইট নামের বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানে ৫৩ লাখ টাকা চুরি হলে ১৫ আগস্ট হাতিরঝিল থানায় মামলা হয়। মামলায় আল আমিন, সোহেল রানা ও অনিক হোসেন নামের তিনজনকে গ্রেপ্তারের পর তাদের দেওয়া ও অফিসের সিসিটিভি ফুটেজ দেখে উক্ত প্রতিষ্ঠানে কর্মরত শ্রমিক সুমন শেখকে চিহ্নিত করা হয়। তারই প্রেক্ষিতে শুক্রবার (১৯ আগস্ট) বিকেলে হাতিরঝিল থানা-পুলিশ সুমনকে গ্রেপ্তার করে।
ডিএমপি তেজগাঁও বিভাগের ডিসি এইচ এম আজিমুল হক সাংবাদিকদের জানান, ভোররাত ৩টা ৩২ মিনিটে সুমন তার পরনে থাকা ট্রাউজার দিয়ে গলায় ফাঁস দেন। যা সিসিটিভি ফুটেজে দেখা গেছে।
তিনি আরও জানান, ঘটনার রাতে থানায় থাকা ডিউটি অফিসার হেমায়েত হোসেন ও হাজতের প্রহরী মো. জাকারিয়াকে দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।
কিন্তু সুমনের স্ত্রী জান্নাত আরার দাবি, পুলিশ তাকে আটক পর থানায় নিয়ে আনার সময় মারধর করেছে। এরপর থানা হাজতে নির্যাতনের সময় সুমনের মৃত্যু হয়। এমনকি রাতে থানায় দেখা করতে গেলে অকথ্য ভাষায় গালাগালি করে বের করে দিয়েছে। সুমনের হত্যার অভিযোগ তুলে শনিবার বিকেলে বিক্ষুব্ধ স্বজনরা থানার সামনে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করেন
এদিকে হাতিরঝিল থানায় পুলিশি হেফাজতে সুমন শেখর মৃত্যুর ঘটনায় মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশন (এমএসএফ) ক্ষোভ ও গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। পাশাপাশি ঘটনাটির নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু তদন্ত নিশ্চিত করে অবহেলা বা নির্যাতনমূলক আচরণের উপাদান থেকে থাকলে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার জোর দাবি জানিয়েছেন সংস্থাটির প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি অ্যাডভোকেট সুলতানা কামাল। আজ রোববার(২১ আগস্ট) গণমাধ্যমে পাঠানো বিবৃতিতে বলা হয়, হেফাজতে যে কোনো ব্যক্তির সুরক্ষা নিশ্চিত করা পুলিশের আইনি দায়িত্ব।
মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশন (এমএসএফ) মনে করে, পুলিশ হেফাজতে গ্রেপ্তার থাকা ব্যক্তির মৃত্যু অবশ্যই গুরুতর ঘটনা তাই এর পূর্ণ সুষ্ঠু তদন্ত হওয়া উচিত। পুলিশের বিরুদ্ধে আনীত নির্যাতনের অভিযোগ ও হেফাজতে মৃত্যুর বিষয় দুটি অনাকাঙ্ক্ষিত ও অনভিপ্রেত যা কখনোই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। ফলে মৃত্যু যে ভাবেই হোক না কেন বিষয় দুটি গুরুত্ব দিয়ে প্রকৃত ঘটনা উদ্ঘাটনে অনতিবিলম্বে নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু তদন্ত নিশ্চিত করে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানাচ্ছে।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/
আপনার মতামত জানানঃ