সাংবাদিকদের জন্য সবচেয়ে বিপজ্জনক স্থান হচ্ছে মেক্সিকো। যেখানে সাংবাদিকদের নিরাপদ সাংবাদিকতার সুযোগ একদম তলানিতে। দেশটিতে প্রায়ই সাংবাদিক হত্যার ঘটনা ঘটে
মেক্সিকোর সাংবাদিকদের জন্য চলতি বছরটি সবচেয়ে ভয়াবহ হতে যাচ্ছে। বছরের ৮ মাস শেষ না হতেই রেকর্ড ১৮ জন হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন। গতকাল বৃহস্পতিবার(১৮ আগস্ট) এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানায় মানবাধিকার সংস্থা আর্টিকেল নাইন্টিন। খবর রয়টার্স।
সংস্থার আঞ্চলিক পরিচালক লিওপোল্ডো মালডোনাডো বলেন, এই ১৮ মৃত্যুর মধ্যে নয়টির ক্ষেত্রে সাংবাদিকদের কাজের সঙ্গে সম্ভাব্য যোগসূত্র পাওয়া গিয়েছে।
তিনি বলেন, শতাব্দির মধ্যে সংবাদমাধ্যমের জন্য সবচেয়ে বছর হতে পারে ২০২২ সাল। এখনো বছরের চার মাসের বেশি বাকি থাকলেও এর মধ্যেই আগের বছরগুলোর পরিসংখ্যান অতিক্রম করে গেছে মেক্সিকো। গত বছর হত্যাকাণ্ডের শিকার হয় ১৩ সাংবাদিক। ২০২০ সালে ১৪ জনের মৃত্যু ছিল রেকর্ড। ওই দুই বছরের অর্ধেক হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে সাংবাদিকদের কাজের যোগসূত্র পাওয়া গিয়েছে।
আর্টিকেল নাইন্টিন জানায়, চলতি বছরের প্রথমার্ধে সাংবাদিকদের উপর ৩৩১টি হামলার ঘটনা লিপিবন্ধ হয়েছে। এর মধ্যে বেশির ভাগই ভয়ভীতি ও হয়রানি সম্পর্কিত। এ সব হুমকির ঘটনার অনেক ক্ষেত্রে ক্ষমতার অপব্যবহার হয়েছে।
২০১৮ সালের তুলনায় চলতি বছরের প্রথমার্ধে এ ধরনের ঘটনা বেড়েছে ৫১ দশমিক ৮ শতাংশ।
মানবাধিকার সংস্থাটি জানায়, এই ছয় মাসে দেশের ভেতর জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত হয়েছে চারজন সাংবাদিক ও দুজন নির্বাসনে যেতে বাধ্য হয়েছেন।
আরো বলা হচ্ছে, প্রথমার্ধে সাংবাদিকদের উপর হামলার ১২৮টি ঘটনার ক্ষেত্রে রাষ্ট্রের ক্ষমতাসীনদের ভূমিকা পাওয়া গিয়েছে। যা ২০০৭ সাল থেকে দেখা যাচ্ছে।
শতাব্দির মধ্যে সংবাদমাধ্যমের জন্য সবচেয়ে বছর হতে পারে ২০২২ সাল। এখনো বছরের চার মাসের বেশি বাকি থাকলেও এর মধ্যেই আগের বছরগুলোর পরিসংখ্যান অতিক্রম করে গেছে মেক্সিকো।
২০০০ সালের পর মেক্সিকোতে শতাধিক সাংবাদিককে হত্যা করা হয়। দেশটির মাদককারবারীরা প্রায়ই সাংবাদিকদের হত্যা করে। সাংবাদিকরা খবর প্রকাশ করতে যেন ভয় পায় সে জন্যই এ ধরনের হত্যাকাণ্ড ঘটায় অপরাধীরা। ২০২২ সাল দেশটিতে সাংবাদিকদের অবস্থা আরও ভয়াবহ হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডারের সেক্রেটারি জেনারেল ক্রিস্টোফি ডিলোরি জানান, ‘বিশ্বব্যাপী সাংবাদিকদের উপর সহিংসতা বেড়েছে। কেউ কেউ ভাবতে পারেন যে সাংবাদিকরা কেবল তাদের পেশাগত ঝুঁকির শিকার। কিন্তু দেখা গেছে, সংবেদনশীল বিষয়গুলো অনুসন্ধান বা রিপোর্ট করতে গিয়েই সাংবাদিকরা দিন দিন লক্ষ্যবস্তু হচ্ছেন। যে কারণে তাদেরকে আক্রমণ করা হচ্ছে অর্থাৎ রিপোর্ট করা, জনগণকে জানানো- এই অধিকার তাদের আছে, এটা সবারই অধিকার।’
অনেক দেশেই দুর্নীতি, পাচার, মানবাধিকার লঙ্ঘন কিংবা পরিবেশ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে অনুসন্ধানে গিয়ে সাংবাদিকদের জীবন ঝুঁকিতে পড়ছে। এছাড়া, অপহরণ, নির্যাতন, ডিজিটাল ও অন্যান্য মাধ্যমে গুজব রটানোসহ নানা হয়রানিতে পড়তে হচ্ছে সাংবাদিকদের। নারী সাংবাদিকদের ক্ষেত্রে অনলাইন সহিংসতার মাত্রা বেশি বলেও জানিয়েছে জাতিসংঘ।
জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস বলেন, সাংবাদিকরা আরও অগুনিত হুমকির মুখোমুখি হচ্ছেন। যেমন—অপহরণ, নির্যাতন ও গুম থেকে শুরু করে গুজব রটানো ও হয়রানি, বিশেষত ডিজিটাল মাধ্যমে, অনেক ধরনের ঝুঁকি মোকাবিলা করতে হচ্ছে। নারী সাংবাদিকরা বিশেষত অনলাইন সহিংসতার ঝুঁকিতে বেশি।
তিনি বলেন, সমাজের ওপর সামগ্রিকভাবে সাংবাদিকের বিরুদ্ধে অপরাধের ব্যাপক প্রভাব পড়ে। কারণ তারা তথ্যপ্রাপ্তির মাধ্যমে মানুষকে সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে সহযোগিতা করেন। কোভিড-১৯ মহামারি এবং ভুল তথ্যের ছায়া মহামারি দেখিয়ে দিয়েছে যে সঠিক ও বিজ্ঞানভিত্তিক তথ্য সত্যিকার অর্থেই জীবন-মৃত্যুর পার্থক্য গড়ে দিতে পারে। তথ্যপ্রাপ্তি যখন হুমকিতে পড়ে, তখন তা এমন বার্তা পাঠায়, যা গণতন্ত্র ও আইনের শাসনকে ক্ষতিগ্রস্ত করে।
বিশেষজ্ঞরা বলেন, কোনও রাষ্ট্র যদি নিজেকে গণতান্ত্রিক দাবি করে, তবে সেখানে গণমাধ্যমের একশভাগ স্বাধীনতা থাকতেই হবে। যে গণমাধ্যম সরকারের সমালোচনা করবে, সেই গণমাধ্যমের স্বাধীনতা আবার সেই সরকারকেই নিশ্চিত করতে হবে। জনসাধারণের কথাই উঠে আসে গণমাধ্যমে। তাই এই গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিশ্চিত না করতে পারলে, গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব নয়।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/২২২২
আপনার মতামত জানানঃ