দেশের জাতীয় মহাসড়কগুলোতে মোটরসাইকেল চলাচল বিষয়ে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার প্রস্তাবনা এসেছে। এ নিয়ে পক্ষে-বিপক্ষে আলোচনাও চলছে। কেউ বলছেন, মহাসড়কে বেশিরভাগ দুর্ঘটনার মূল কারণ দুই চাকার এই মোটরসাইকেল। এটিকে মহাসড়কে চলতে দেওয়া উচিত নয়। যদিও মোটরসাইকেল রাইডাররা বলছেন, সড়কে তাদের জন্য পৃথক লেনের দাবি বহুদিনের। সেটা না করে বন্ধ করে দিলে তা হবে ‘হাতের সমস্যায় হাত কেটে ফেলা’র মতো সিদ্ধান্ত।
মহাসড়কে দুর্ঘটনায় প্রাণহানি কমাতে আন্তজেলা ও মহাসড়কে মোটরসাইকেল চলাচল স্থানীয়ভাবে বন্ধ রাখার পক্ষে নিজেদের অবস্থানের কথা জানিয়েছে পরিবহন বিষয়ক টাস্কফোর্স।
সচিবালয়ে সড়ক পরিবহন খাতে ‘শৃঙ্খলা জোরদারকরণ এবং দুর্ঘটনা নিয়ন্ত্রণে সুপারিশ প্রণয়ন’ সংক্রান্ত কমিটির ১১১ দফা সুপারিশ বাস্তবায়নের জন্য গঠিত টাস্কফোর্সের সভা শেষে এ কথা জানান টাস্কফোর্সের সদস্য ও শ্রমিক নেতা শাজাহান খান।
শাহজাহান খান বলেন, ‘মোটরসাইকেল নিয়ে যে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে, দূরপাল্লায়, আন্তজেলায় রাইডশেয়ারিং হবে না। আজকেও এটা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। আমরা এটাকে কঠোরভাবে…, আপনারা জানেন ৪০ শতাংশ দুর্ঘটনা হয় মোটরসাইকেলে। সুতরাং আমরা সেটাকে নিয়ন্ত্রণ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’
ঈদের সময় কিছুদিন এক জেলা থেকে আরেক জেলায় মোটরসাইকেল চলাচল বন্ধ থাকার সিদ্ধান্ত কি আবার বাস্তবায়ন করা হবে- জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘সরকার এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে। আমরা এটাকে বাস্তবায়নের জন্য বলেছি। তবে এখনও স্থায়ী বা অস্থায়ীভাবে বন্ধের সিদ্ধান্ত হয়নি।’
বাস মালিকদের ষড়যন্ত্রে মোটরসাইকেল নিয়ন্ত্রণের চেষ্টার অভিযোগের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে তিনি বলেন, ‘এটা হাস্যকর ব্যাপার ছাড়া আর কিছু না।’
গত রোজার ঈদে রাজধানীসহ বড় শহর থেকে লাখ লাখ মানুষ বাড়ি ফিরেছেন মোটরসাইকেলে করে। এতে বাসে যাত্রীর চাপ ছিল না। ট্রেন-বাসে দেখা যায়নি উপচে পড়া ভিড়। আর যাত্রীদের একটি বড় অংশ দুই চাকার দ্রুতগামী যানে বাড়ি যাওয়ার কারণে সড়কে সেভাবে অন্য বছরের মতো যানজটও দেখা যায়নি।
তবে বিষয়টি আবার পরিবহন ব্যবসায়ীদের ক্ষতির কারণ হয়েছিল। তারা খুব করে চাইছিল, ঈদুল আজহায় ঈদযাত্রায় বাইকের ব্যবহার যেন বন্ধ করা হয়। তাদের সে চাওয়া পূরণ হয় কোরবানির ঈদে।
মূল গলদ সিস্টেমে। মোটরসাইকেল আমদানির পথ খোলা, বিক্রি ও রেজিস্ট্রেশন দেওয়া হচ্ছে হরদম। আবার এ-ও বলা হচ্ছে, মোটরসাইকেল অমুক জায়গায় চলবে, তমুক জায়গায় চলতে পারবে না। এগুলো তো পেশাদারত্ব নয়।
দুর্ঘটনা এড়াতে ঈদের সময় আন্তজেলা চলাচলের ক্ষেত্রে মোটরসাইকেলের ব্যবহার নিষিদ্ধ করে সরকার। ফলে মহাসড়কে মোটরসাইকেল চলাচলে কড়াকড়ি আরোপ করা হয়। অবশ্য পুলিশের অনুমতি নিয়ে উপযুক্ত কারণ দেখিয়ে অনেকেই মোটরসাইকেল চালিয়ে গ্রামে ফিরেছেন। তবে রোজার ঈদে যেভাবে ব্যাপক মোটরসাইকেলের ব্যবহার দেখা গিয়েছিল সে চিত্র ছিল অনুপস্থিত।
বাইক না চলার সুযোগও নেয় পরিবহন মালিকরা। তারা ভাড়া ব্যাপকহারে বাড়িয়ে দেয়। এ ভোগান্তি একপর্যায়ে সাধারণের মাঝে অসন্তোষেরও জন্ম দেয়।
পরিবহন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মূল গলদ সিস্টেমে। মোটরসাইকেল আমদানির পথ খোলা, বিক্রি ও রেজিস্ট্রেশন দেওয়া হচ্ছে হরদম। আবার এ-ও বলা হচ্ছে, মোটরসাইকেল অমুক জায়গায় চলবে, তমুক জায়গায় চলতে পারবে না। এগুলো তো পেশাদারত্ব নয়। সমস্যার মূলে হাত দিতে হবে। অভিভাবক বা কর্তৃপক্ষকে দায়িত্ববান হতে হবে। তাদের ভেবেচিন্তে কাজ করতে হবে। কর্তৃপক্ষকে সমস্যা তৈরি না করে বরং সমাধান খুঁজে বের করতে হবে।
তারা বলেন, একটা বাহন যদি চলে, সেটা যদি যান্ত্রিক হয়, তাহলে তার জন্য রাস্তায় চলাচলের একটা ব্যবস্থা রাখা উচিত। যিনি বাইক নিয়ে চলাচল করবেন, তিনি মহাসড়কে উঠতে পারবেন না কেন? সড়কে বড় গাড়িগুলো তাদের পাত্তা দেয় না। তাই তো? এটার জন্য একটা লেনের ব্যবস্থা করতে আমরা বহু আগ থেকেই দাবি করে আসছি। সেটা না করে বন্ধ করে দেওয়ার কথা কেন আসছে? আপনার হাতে ব্যথা হলে কি হাতটা কেটে ফেলবেন?
তারা আরও বলেন, রাষ্ট্রের ব্যর্থতার জন্য কেন রাইডারদের দায়ী করা হবে? এর ভুক্তভোগী সাধারণ মানুষ কেন হবে? স্বীকার করছি যে, মোটরসাইকেল মহাসড়কে ঝুঁকিপূর্ণ। ঝুঁকি এড়াতে সরকার কী কী পদক্ষেপ নিয়েছেন? কোনো পদক্ষেপ না নিয়েই ইচ্ছেমতো বন্ধ করে দেওয়া ঠিক নয়।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৭৩৩
আপনার মতামত জানানঃ