বছরের পর বছর ধরে ক্যাথলিক গির্জার নিয়ন্ত্রণাধীন আবাসিক স্কুলগুলোতে অত্যাচার চলেছে। ধর্মের বেড়াজালে কানাডার আদিবাসী শিশুদের উপরে হওয়া সেই নির্যাতনের জন্য ক্ষমা চাইলেন পোপ ফ্রান্সিস।
কানাডার পশ্চিমাঞ্চলীয় প্রদেশ আলবার্টার মাস্কওয়াসিসে এক অনুষ্ঠানে উপস্থিত হয়ে ক্ষমা চান তিনি।
জানা গেছে, সোমবার পশ্চিমাঞ্চলীয় প্রদেশ আলবার্টার মাস্কওয়াসিসে যান পোপ ফ্রান্সিস। সেখানে এরমিনস্কিন ইন্ডিয়ান রেসিডেন্সিয়াল স্কুলের সাবেক স্থাপনা পরিদর্শন করেন তিনি।
পোপ ফ্রান্সিস জানান, ওই ঘটনায় সমবেদনা জানানো এবং ঈশ্বরের কাছে ক্ষমা প্রার্থনার জন্য তিনি সেখানে উপস্থিত হয়েছেন।
তিনি আরো বলেন, আমি এখানে এসেছি। কারণ আমার অনুশোচনামূলক তীর্থযাত্রার প্রথম ধাপটি হলো আবারও ক্ষমা চাওয়া, আবারও আপনাদের এটা জানানো যে, আমি গভীরভাবে দুঃখিত।
তিনি আরো বলেন, কানাডার আদিবাসী স্কুলে যা ঘটেছিল, তা খ্রিস্টানদের ধর্মবিশ্বাসের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। বরং এটি ছিল একটি বিপর্যয়কর ত্রুটি। আদিবাসীদের বিরুদ্ধে খ্রিস্টানদের সংঘটিত মন্দ কাজের জন্য আমি বিনীতভাবে ক্ষমা প্রার্থনা করছি।
প্রসঙ্গত, গত বছরের মে মাসে কানাডার ব্রিটিশ কলাম্বিয়ার কামলুপস এলাকার একটি পুরনো আবাসিক স্কুলের ভবন থেকে ২১৫ জন শিশুর দেহাবশেষ উদ্ধার হয়। এসব শিশু আদিবাসী রেড ইন্ডিয়ান। ওই বছরের জুনেই সাসকাচেওয়ান প্রদেশের পুরনো একটি আদিবাসী আবাসিক স্কুলে আরো ৭৫১টি কোনো চিহ্ন না থাকা কবরের সন্ধান পাওয়া যায়।
দুই গণকবরে প্রায় এক হাজার দেহাবশেষ উদ্ধারের ঘটনায় স্কুল পরিচালনায় গির্জার ভূমিকা নিয়ে পোপ ফ্রান্সিসকে ক্ষমা চাওয়ার আহ্বান জানান কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো। অবশেষে আনুষ্ঠানিকভাবে ক্ষমা চাইলেন পোপ ফ্রান্সিস।
১৮৩১ থেকে ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত লাখ লাখ আদিবাসী শিশুকে কথিত পশ্চিমা সভ্যতা শেখানোর নাম করে পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন করে আবাসিক স্কুলে পাঠানো হয়।
তৎকালীন ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক সরকারের অর্থায়নে এসব স্কুল ক্যাথলিক চার্চ দ্বারা পরিচালিত হতো। প্রায় দুইশ বছর আগের এসব স্কুলে আদিবাসী শিশুদের জোর করে তাদের পরিবার থেকে আলাদা করা হতো। এরপর তাদের ওপর চালানো হতো শারীরিক ও যৌন নিপীড়ন।
সেখানে অনেক শিশু অপুষ্টিতে ভুগে মৃত্যুবরণ করেছে। কানাডার ট্রুথ অ্যান্ড রিকনসিলিয়েশন কমিশনের ২০১৫ সালে প্রতিবেদনে এ ঘটনাকে সাংস্কৃতিক গণহত্যা হিসেবে অভিহিত করা হয়েছে।
কানাডায় একের পর এক আদিবাসী শিশুদের গণকবর খুঁজে পাওয়ার পর ব্রিটিশ ঔপনিবেশের বিরুদ্ধে কানাডাতেও ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে। এর আগে কানাডার বিক্ষুব্ধ জনতা উইনিপেগ শহরে স্থাপিত রানি ভিক্টোরিয়া ও রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের ভাস্কর্য উপড়ে ফেলে।
ব্রিটেনের রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে কানাডার রানি অর্থাৎ রাষ্ট্রপ্রধান। এর আগে রানি ভিক্টোরিয়াও কানাডা শাসন করেছেন।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৯৫৫
আপনার মতামত জানানঃ