সম্প্রতি নতুন এক আদেশ জারি করেছে তালিবান সরকার। তাতে বলা হয়েছে, যারা কোনো সত্যতা ছাড়াই আফগানিস্তানের স্কলার ও সরকারি কর্মচারীদের সমালোচনা করবে তাদের শাস্তি পেতে হবে।
ভয়েস অব আমেরিকার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, তালিবানের মুখপাত্র জাবিউল্লাহ মুজাহিদ তাদের শীর্ষ নেতা মোল্লা হেবাতুল্লাহ আখুন্দজাদার আরোপ করা নতুন নির্দেশনা প্রকাশ করেছে। তাদের এই নির্দেশনাকে জনগণ এবং মিডিয়ার জন্য “শরিয়া দায়িত্ব” বলা হয়েছে।
সর্বোচ্চ নেতা আখুন্দজাদার নতুন আদেশ নির্দেশনা অনুযায়ী, তালিবান সরকারের কর্মচারী ও কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে জনসাধারণকে অপ্রয়োজনীয় অভিযোগ বন্ধ করতে বলা হয়েছে।
তবে ঠিক কি ধরণের সমালোচনা করা যাবে না তা স্পষ্ট করে বলা হয়নি বলে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। তবে দেশটির সামাজিক মাধ্যমে, টেলিভিশন বিতর্কে কিছু লোক তালিবান সরকারের বিরুদ্ধে সমালোচনা করে।
আফগানিস্তান দখলের পর তালিবান সরকার দেশটিতে নারীদের ওপর নানা কঠোর বিধিনিষেধ জারি করেছে। মেয়েদের শিক্ষা থেকে বঞ্চিত, নারীদের মৌলিক অধিকার কেড়ে নেওয়ার জন্য তালিবান সরকারের সমালোচনা করা হয়।
বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থা ও মিডিয়া রিপোর্টের তথ্য অনুসারের, সামাজিক মাধ্যমে সরকারের বিরুদ্ধে সমালোচনা করার দায়ের তালিবান বেশ কিছু লোককে গ্রেপ্তার করেছে এবং তাদের ওপর নির্যাতন চালিয়েছে।
সামাজিক মাধ্যমে সরকারের বিরুদ্ধে সমালোচনা করার দায়ের তালিবান বেশ কিছু লোককে গ্রেপ্তার করেছে এবং তাদের ওপর নির্যাতন চালিয়েছে।
আফগানিস্তানে গত বছর ক্ষমতা দখলের পর থেকে এ পর্যন্ত তালিবান মানবাধিকার লংঘনের শত শত ঘটনা ঘটিয়েছে। এর মধ্যে বিচার বহির্ভূত হত্যা ও নিপীড়ন রয়েছে। জাতিসংঘ গত বুধবার (২০ জুলাই) এ কথা জানিয়েছে।
আফগানিস্তানে জাতিসংঘ মিশনের প্রধান মারকাস পটজেল এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, আমাদের প্রতিবেদনের ফলাফলগুলো যে গুরুতর এ কথা নিঃসন্দেহে বলা যায়। তবে তালিবান মানববাধিকার লঙ্ঘনের সকল অভিযোগ অব্যাহতভাবে অস্বীকার করে আসছে।
কিন্তু জাতিসংঘ বুধবার যে প্রতিবেদন প্রকাশ করে তাতে গত আগস্ট থেকে ১৬০টি বিচার বহির্ভূত হত্যা, ৫৬টি নির্যাতন ও অসদাচরনের ঘটনা এবং সাবেক সরকারি কর্মকর্তা ও জাতীয় নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের নির্বিচারে গ্রেপ্তার ও আটকের ১৭০টিরও বেশি ঘটনা উল্লেখ করেছে।
এছাড়া, নারী ও শিশুদের বিরুদ্ধে ৮৭টি সহিংতার ঘটনা তুলে ধরা হয়। এর মধ্যে রয়েছে হত্যা, ধর্ষণ, জোরপূর্বক বিয়ে ও নানা ধরনের নির্যাতন।
মারকাস বলেন, জাতিসংঘ মিশন তালিবানের ধর্মীয় পুলিশ ও গোয়েন্দা সদস্যদের অত্যাচার নিয়ে বিশেষভাবে উদ্বিগ্ন।
জাতিসংঘ বলছে, অবিষ্ফোরিত মাইন এবং স্থানীয় ইসলামিক স্টেট শাখার হামলায় ৭শরও বেশি বেসামরিক নাগরিক নিহত এবং ১৪শরও বেশি লোক আহত হয়েছে।
এদিকে আফগানিস্তানে তালিবান ক্ষমতা নেওয়ার পর পাঞ্জসির থেকে বাস্তচুত হয়েছে সাত শতাধিক পরিবার। এসব পরিবার নিরাপত্তাজনিত কারণে পাঞ্জসির থেকে পারওয়ানে স্থানান্তরিত হয়েছে।
টোলো নিউজকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে পারওয়ানের শরণার্থী ও প্রত্যাবাসন বিভাগের কর্মকর্তা ফারাইদুন নুরি বলেন, পাঞ্জসির থেকে ৭৪৮টি পরিবার পারওয়ানে এসেছে। এসব পরিবার সংঘাতের কারণে তাদের বাড়ি ছাড়তে বাধ্য হয়েছে।
বাস্তুচ্যুতদের একজন ৯০ বছরের বৃদ্ধা বেবে বেগম। তিনি বলেন, আমাদের কোনো কাপড় নিতে দেওয়া হয়নি। এমনকি পানিও তারা পান করতে দেয়নি। আমরা এখন এখানে আছে। খাবার ছাড়া দিন যাপন করতে হচ্ছে।
দিলাওয়ার নামে আরেক বাস্তুচ্যুত বলেন, এক মাসের মতো হবে আমরা পাঞ্জসির ছেড়ে এখানে এসেছি। আমি এবং আমার পরিবার কিছুই নিয়ে আসতে পারিনি। তারা (তালিবান) আমাদের উপর নির্যাতন করেছে। তারা বলে, অস্ত্র বের করো। তোমরা গনি সরকারের সমর্থক।
তালিবান প্রথম দফায় ১৯৯৬ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত আফগানিস্তানের ক্ষমতায় ছিল। সে সময় কট্টর শাসনব্যবস্থার কারণে তালিবান কুখ্যাতি কুড়ায়।
২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর যুক্তরাষ্ট্রে ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলা হয়। এর জেরে যুক্তরাষ্ট্র আফগানিস্তানে হামলা চালায়। হামলার মাধ্যমে আফগানিস্তানের তখনকার তালিবান সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করা হয়। তৎকালীন তালিবান সরকারের আশ্রয়-প্রশ্রয়ে জঙ্গি সংগঠন আল-কায়েদা যুক্তরাষ্ট্রে হামলা চালিয়েছিল। পরে আল-কায়েদার প্রতিষ্ঠাতা ওসামা বিন লাদেনকে হত্যা করে যুক্তরাষ্ট্র।
প্রায় ২০ বছর ধরে যুদ্ধ চালানোর পর গত বছরের আগস্টে আফগানিস্তান ত্যাগ করে মার্কিন বাহিনী। বিদেশি বাহিনীর আফগানিস্তান ত্যাগের মধ্যেই দেশটির ক্ষমতা দখল করে তালিবান।
ক্ষমতা দখলের পর তালিবান বিশ্বকে আশ্বস্ত করেছিল যে এবার তারা নমনীয় শাসনব্যবস্থা প্রবর্তন করবে। কিন্তু নারী, মানবাধিকারসহ নানা ইস্যুতে তালিবানকে কঠোর পদক্ষেপ নিতে দেখা যাচ্ছে।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৪১৩
আপনার মতামত জানানঃ